টলিউডের প্রবাদপ্রতিম নাট্যকার তথা অভিনেতা উৎপল দত্তের (Utpal Dutt) নাট্যদলে যুক্ত ছিলেন অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী (Shankar Chakraborty)। থিয়েটারের সেই দিনগুলোর কথা এখনও ভোলেননি তিনি। বহু অভিজ্ঞতা, বহু গল্প জমে আছে স্মৃতির ভাঁজে। সম্প্রতি স্মৃতির পাতা থেকে কিছু অভিজ্ঞতা তুলে এনে, শঙ্কর চক্রবর্তী জানালেন অনেককিছু। তিনি বলেন, জীবনেও ‘স্যার’ ডাকে কেউ তাঁকে সম্বোধন করুক, এটা পছন্দ করতেন না উৎপল দত্ত। অভিনেতা তাই ‘উৎপলদাদা’ নামেই ডাকতেন প্রথমদিকে। পরে দাদা থেকে ‘উৎপলদা’ হয়ে যাওয়ায় রেগে যেতেন তিনি।
একদিন অভিনেতাকে বলেছিলেন, “বাঙালিদের এই এক জ্বালা, সব ছোট করে দেবে, অমুকদা, তমুকদা! পুরোটা বলতে কী হয়?” প্রসঙ্গত, তরুণ বয়সে শঙ্করের থিয়েটারের যাত্রা শুরু আইপিটিএ-র খড়দা শাখায়। সেই সময়ে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী তাঁর অভিনয় দেখে প্রশংসা করেন এবং শোভা সেনের কাছে সুপারিশ করেন। সেখান থেকেই একদিন দেখা হয় উৎপল দত্তের সঙ্গে— যে দেখা চিরস্মরণীয় হয়ে যায় শঙ্করের জীবনে। তিনি বলেন, প্রথম দেখা দিনটায় তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল!
সেদিন নাকি একটাও কথা বেরোয়নি মুখ দিয়ে! মঞ্চের বাইরে, বাস্তবে সেই বিশাল ব্যক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যেন নিজের অভিনয় জীবনের এক অমূল্য মুহূর্ত। পরে ‘বণিকের মানদণ্ড’ নাটকের রিহার্সালের সময়ই উৎপল দত্ত তাঁকে নতুন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর পিএলটি-র সঙ্গে যাত্রা। এরপর একে একে ‘কল্লোল’, ‘নীল সাদা লাল’, ‘অগ্নিশয্যা’র মতো বহু নাটকে অভিনয় করেন তিনি। প্রতিদিন কাছ থেকে দেখতেন উৎপল দত্তের প্রতিভার বিস্তার।
উৎপল দত্ত একজন মানুষ যিনি লিখতেন, অভিনয় করতেন, মঞ্চ সাজাতেন, আবার সঙ্গীত পরিচালনা করতেন। শঙ্কর বললেন, “এমন স্টলওয়ার্টের সঙ্গে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হলে যে কী পরিমাণ ভয় করে, তা অন্তর্যামী জানেন। অভিনয় ভুল করলে, হাতের সামনে যা পেতেন ছুঁড়ে মারতেন।” তাঁর কথায়, উৎপল দত্তকে শুধু অভিনেতা হিসেবে দেখা একরকম, কিন্তু থিয়েটারের মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অন্য জগতের, তাঁর মাপ বোঝা সত্যিই কঠিন।
আরও পড়ুনঃ “ব্লাউজ পরা ছেলেরা হিরো হয় না!” “হিরো হতে চেয়েছিলাম, শেষে হিরোর কাছে মার খেয়েছি!” “হিরো কচি থাকে, পার্শ্ব চরিত্ররাই বুড়ো হয়!”— খলনায়ক হলেও মন জয় করেছেন সাগ্নিক, তবে হরনাথ চক্রবর্তীর সেই অপমান ভুলতে পারেননি অভিনেতা! টলিউডের দ্বিচারিতা নিয়ে সরব হলেন তিনিও!
আজ এত বছর পরও শঙ্কর চক্রবর্তী মনে করেন, উৎপল দত্তের সংস্পর্শই তাঁকে গড়ে তুলেছিল শিল্পী হিসেবে। সাহিত্য, সঙ্গীত, রাজনীতি— সব কিছুতেই তাঁর আগ্রহ ছিল সমান। একজন মানুষের মধ্যে যে এত রকম সত্তা একসঙ্গে থাকতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শঙ্করের কথায়, “ওই ঈশ্বর সমান মানুষটাকে ছুঁতে পরাই আমার পরম প্রাপ্তি।” তাঁর কণ্ঠে তাই আজও মিশে থাকে শ্রদ্ধা, বিস্ময় আর অগাধ ভালবাসা সেই মহাতারকার প্রতি।