টলিউডে যাঁকে হাসিখুশি হিসেবে দেখে আসছি আমরা চিরকাল। যিনি দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তার সেই উজ্জ্বল হাসিটার জন্যই, সেই অভিনেত্রী ‘তুলিকা বসু’র (Tulika Basu) জীবনে এখন চলছে এক কঠিন অধ্যায়! দীর্ঘ ৮ মাস কাজ না পাওয়ার পর, অবশেষে তিনি ছোটপর্দায় ফিরেছিলেন সান বাংলার ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে শুরু করেছিলেন যাত্রার মঞ্চেও অভিনয়। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে যাত্রা এবং ধারাবাহিক-দুই জায়গায়ই তিনি নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছিলেন।
কিন্তু মাত্র দু’মাসের মধ্যেই ধারাবাহিকটি ছাড়তে বাধ্য হলেন তিনি! এই অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে যেমন মানসিক দুঃখের, তেমনই পেশাগত দিক থেকেও ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। এই ধারাবাহিকে অনেকদিন পর একজন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন তুলিকা, যা তাঁর কাছে ছিল অন্যরকম একটা ভালো লাগার জায়গা। চরিত্রটি ধীরে ধীরে তাঁর নিজের জীবনের এক আবেগঘন অংশ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শুটিংয়ের শুরুর আগে যাত্রার শিডিউল নিয়ে প্রযোজনা দলের সঙ্গে বিশদে আলোচনা হলেও, পরে সব কিছু হঠাৎ করেই জটিল হয়ে ওঠে।
প্রথমে বলা হয়েছিল মাসে ২৫ দিনের মতো সময় দিতে হবে, পরে তা কমে ১২ দিনে এসেও কোনও সমস্যা হয়নি তাঁর পক্ষ থেকে। কিন্তু আচমকাই যাত্রার ডেটকে ঘিরে সমস্যা তৈরি হয় এবং বলা হয় যে চরিত্রটি থেকে তাঁকে সরে আসতে হবে। এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত একপ্রকার হতাশার মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায় তুলিকার কাছে। তাঁর কথায়, শিল্পীরা রক্ত-মাংসের মানুষ, আর একটি চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য যে পরিমাণ শ্রম, আবেগ আর সময় দিতে হয়, তা কেবল একজন শিল্পীই বুঝতে পারেন।
তাই এমন আচরণ, এমন অসম্মান তিনি মেনে নিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, শিল্পীদের ক্ষেত্রেই বারবার চরিত্র বদল, পারিশ্রমিকে ছাড় কিংবা শিডিউলে জটিলতা তৈরি হয়, অথচ তাঁদের মানিয়ে নেওয়ারই কথা বলা হয় সবসময়। কিন্তু শিল্পীরাও তো মানুষ, তাঁদেরও সীমাবদ্ধতা, মানসিক চাপ থাকে। এইসব পরিস্থিতিতে বারবার যে মানিয়ে নিতে হয়, সেই বেদনাটা আর বইতে পারছেন না তুলিকা, শেষ পর্যন্ত কেঁদে দিলেন! এই পরিস্থিতির পর তাঁর মনে হয়েছে, হয়তো এই ইন্ডাস্ট্রি তাঁর জন্য নয়। কারণ তিনি হিসেব করে কথা বলতে পারেন না, কারো মন জয় করার জন্য আলাদা করে রাজনীতি করতে পারেন না।
আরও পড়ুনঃ “আমি দেবের বোন না, আমি একজন দর্শক!” “আমার কাছে দাদা মানে দীপক অধিকারী, দেব নয়।”— ভাইফোঁটার আগেই দেবকে নিয়ে অকপট বোন দীপালি! দাদার সেলিব্রিটি তকমাকে জীবনেও ব্যবহার করতে চান না বোন!
তবে এই অভিনয়ই তাঁর জীবিকা, তাই ছেড়ে দেওয়ার সাহসও হয় না। এটাও নিশ্চিত করেছেন তিনি যে, হয়তো আর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারবেন না, কারণ চারপাশটা তাঁকে আজকাল অচেনা লাগে। অথচ এই ইন্ডাস্ট্রিই তো একসময় তাঁর আপন ছিল, যেখানে তিনি ২৯ বছরের বেশি সময় কাটিয়েছেন। সেই জায়গাটিতেই যখন বারবার ধাক্কা খেতে হয়, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়া অস্বাভাবিক নয়। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। জানেন না কীভাবে সব চলবে, তবুও ভরসা রাখেন একদিন ঠিক সব বদলে যাবে। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা মানুষজন তাঁকে ভালোবাসেন, এবং তিনি তাঁদের।