বাংলা বিনোদন জগতের এক স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর তিনি। মঞ্চ, সিনেমা কিংবা টেলিভিশন— যেখানেই উপস্থিত হন, চরিত্রের ভেতরের মানুষটিকে এমন নিখুঁতভাবে তুলে ধরেন যে দর্শক ভাবেন, এটা অভিনয় নয়, বাস্তব। অভিনেতা ‘কৌশিক সেন’ (Kaushik Sen) সম্প্রতি তাঁর নতুন ছবি ‘স্বার্থপর’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবারও খোলামেলা মত প্রকাশ করলেন সমাজ, রাজনীতি এবং শিল্প নিয়ে। ব্যতিক্রম চরিত্রে অভিনয় করা এই ছবির মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন— সম্পর্ক যত আধুনিক হয়েছে, ততই তাতে ঢুকে পড়েছে স্বার্থ, সন্দেহ আর দ্বন্দ্ব। তাঁর কথায়, “আজ প্রায় সব সম্পর্কই কলুষিত, ভাইবোনের সম্পর্কও বাদ যায়নি।”
আলোচনার শুরু থেকেই কৌশিক ছিলেন অকপট। তিনি বলেন, “আমি ভাল আছি। তবে আমি জানি, আমাদের সমাজের অনেক মানুষ খুব খারাপ আছেন। তাঁদের তুলনায় আমি অনেক ভাল আছি।” সমাজের অন্যায়, অবিচার বা অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট, কিন্তু তাতেই নাকি ক্রমশ ছোট হচ্ছে তাঁর পরিসর! কৌশিকের সোজা উত্তর, “ভাবনাচিন্তা পরিণত হলে পরিসর ছোট হবে। কিন্তু এতে ক্ষতি কিছু হয় না। স্বাধীনভাবে ভাবার জন্য নিজেকে কাচের ঘরে বন্দি করে রাখতে হয় না।” রাজনীতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল আরও তীক্ষ্ণ।
অভিনেতার মতে, আজকের ভারতবর্ষে মতামত দিলেই মানুষকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক শিবিরের সমর্থক হিসেবে দেগে দেওয়া হয়। কৌশিকের কথায়, “দেশে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। তাই ওরা ভাববে, সবাই ওদের দাস। বিরোধীরাও এখন ঠিক করে দেয়, আমাদের প্রতিবাদের ভাষা কেমন হবে! এদের এই মানসিকতার কারণেই তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মানুষকে নিজের ভাষায় কথা বলতে দিতে হবে।” আরজি কর কাণ্ডে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের নীরবতা নিয়ে ওঠা বিতর্ক নিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন কৌশিক।
তাঁর মতে, “আমি এখন বলব, অনির্বাণ ঠিক করেছে। আন্দোলনটা আস্তে আস্তে আত্মপ্রচারের মঞ্চে পরিণত হয়েছিল। কেউ কেউ সেলফি তুলে জানাচ্ছিলেন— আমি শ্যামবাজারেও আছি, যাদবপুরেও আছি! এইভাবে আমরা বড় খেলার অংশ হয়ে গিয়েছিলাম। আমিও মিছিলে হেঁটেছিলাম, পরে বুঝলাম একটা গন্ডগোল হচ্ছে।” তাঁর মতে, সামাজিক প্রতিবাদ মানে শুধুই উপস্থিতি নয়, তার মর্ম বোঝাটাই আসল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠতেই কৌশিকের মন্তব্য আরও সরাসরি, “বিজেপি সবচেয়ে বিপজ্জনক দল!
আরও পড়ুনঃ “বামপন্থী বলে মা কালীকে মানবো না?”—রাজনৈতিক মতাদর্শের গণ্ডী ভেঙেই ঠাকুরে বিশ্বাসী মানসী সিনহা! একদিকে বামপন্থী চিন্তাধারা, অন্যদিকে গভীর ভক্তি—এই দ্বন্দ্বের মাঝেই অভিনেত্রীর মুখে শোনা গেল বিশ্বাসের অন্যরকম রূপ!
সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল। সিপিআইএম ও কংগ্রেস বিভ্রান্তির মধ্যে আছে, দিশেহারা। একে অন্যের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, ভোটের সময় জোট বাঁধে। এর মধ্যেই মানুষকে বেছে নিতে হয়। ফলে বোঝাই যায়, সাধারণ মানুষ কতটা বিপন্ন অবস্থায় আছে।” শিল্প, রাজনীতি আর সমাজ— এই তিনের সংযোগ নিয়ে এমন নির্ভীক বিশ্লেষণ আজকের দিনে বিরল। কৌশিক সেনের কথায় তাই আবারও ফিরে আসে এক প্রশ্ন, শিল্পী কি কেবল চরিত্রের মধ্যেই থাকবেন, না কি সমাজের প্রশ্নেও মুখ খুলবেন?






