বাংলা বিনোদন জগতে আবারও মাথা তুলেছে পুরনো এক বিতর্ক— ধারাবাহিকের পাশাপাশি অন্য মাধ্যমে কাজ করলে শিল্পীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। সম্প্রতি এই নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক তারকা। কিছুদিন আগেই এই সমস্যা সামনে এনেছিলেন অভিনেত্রী তুলিকা বসু (Tulika Basu)। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি ফিরেছিলেন সান বাংলার ধারাবাহিক ‘বৃন্দাবন বিলাসিনী’-তে। মাতৃত্বের আবেগে ভরপুর একটি চরিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন তিনি। তবে মাত্র দুই মাসের মধ্যেই বাধ্য হয়ে ছাড়তে হল সেই ধারাবাহিক। কারণ, একই সময়ে যাত্রার মঞ্চেও কাজ করছিলেন অভিনেত্রী।
অথচ ধারাবাহিক শুরু হওয়ার আগে প্রযোজকদের সঙ্গে সমস্ত তারিখ ও সময় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছিল তাঁর। প্রথমে ২৫ দিনের কাজের প্রতিশ্রুতি থাকলেও পরে তা কমিয়ে ১২ দিনে নামানো হয়। তবুও সহযোগিতা করেছিলেন তুলিকা। কিন্তু হঠাৎ যাত্রার তারিখ ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতার জেরে তাঁকে চরিত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিনেত্রীর কথায়, “যদি এমন হতো যে যাত্রার জন্য ধারাবাহিকের ক্ষতি হচ্ছে বা আমি ডেট দিয়েও ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না, তাহলে বুঝতাম। কিন্তু আমরা শিল্পীরা রক্ত-মাংসের চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে পরিশ্রম করি।
তা যদি প্রতিবার অমূল্য থেকে যায়, সেটা মানা যায় না।” নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা— একজন শিল্পী কি একাধিক মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন না? শুধু তুলিকা নন, একই অবস্থার শিকার হয়েছেন অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীও (Shankar Chakraborty)। জনপ্রিয় এক প্রযোজনা সংস্থার ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয়ের কথা পাকাপাকি হলেও, মঞ্চনাটকের তারিখের সঙ্গে ধারাবাহিকের সময় না মেলায় বাদ পড়েছেন তিনিও।
এমনকি নাট্যকর্মী সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। ক্রমশ দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকের সময়সূচি এবং শর্তাবলীর জেরে অনেক শিল্পীই হারাচ্ছেন কাজের সুযোগ, যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে অভিনয় জগতে। এই প্রেক্ষিতেই রূপাঞ্জনা মিত্রের (Rupanjana Mitra) সমাজ মাধ্যমে পোস্ট যেন শিল্পীদের মুখে তুলে দিয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়ে লিখেছেন, “যাত্রায় অভিনয় করবেন বলে ধারাবাহিক থেকে বাদ, মঞ্চে অভিনয় করবেন বলে ধারাবাহিক থেকে বাদ।
আরও পড়ুনঃ পর্দায় ‘আদৃত-শুভ’-এর প্রেম পেরিয়ে বাস্তবেও কি গাঢ় হচ্ছে রসায়ন? ‘গৃহপ্রবেশ’-এর নায়ক-নায়িকার সমাজমাধ্যমের একান্ত মুহূর্তের ছবি ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে! তবে কি সুস্মিত-ঊষসী সত্যিই একে অপরের প্রেমে পড়েছেন?
সংলাপ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে আপনি সব জায়গা থেকে বাদ। আমরা কি এগোচ্ছি নাকি পিছোচ্ছি?” এই কয়েকটি লাইন যেন গোটা ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের মনের কথাই বলে দিয়েছে। তাঁর বক্তব্যে অনেকেই সায় দিয়েছেন। নেটিজেন থেকে শুরু করে সহ-অভিনেতা— সকলে বলছেন, “একজন শিল্পী যদি সত্যিই অভিনয় ভালোবাসেন, তবে তাঁকে একাধিক মাধ্যমে কাজ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।” আজকের দিনে যখন শিল্প ও সৃষ্টিশীলতা দুই-ই নির্ভর করছে বহুমাত্রিক কাজের উপরে, তখন এই সীমাবদ্ধতা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নই উঠছে এখন সর্বত্র।






