“ইন্ডাস্ট্রির জন্য এত করেও প্রাপ্য সম্মান পেল না বিপ্লব!” “আজকাল আর ডাকে না, কেউ দাম দিল না ওর!”— তমাল রায় চৌধুরীর মন্তব্যে ফের সামনে এলো সহ-অভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জীর করুণ পরিণতি! পর্দায় যিনি ছিলেন ভয়ঙ্কর ভিলেন, আজ তাঁকে দেখলে চোখ ভিজে আসে মানুষের!

বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ এক সময় যাদের হাতে আলোকিত ছিল, আজ তাঁদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না সেই আলোয়। সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন অনেক প্রিয় মুখ। তাঁদেরই একজন অভিনেতা ‘তমাল রায় চৌধুরী’ (Tamal Raichowdhury)। এক সময়ের জনপ্রিয় এই শিল্পী ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘বিন্দাস’, ‘জাতিস্মর’, ‘গোরস্থানের সাবধান’, ‘আমাজন অভিযান’ কিংবা ‘চাঁদের পাহাড়’-এর মতো বহু ছবিতে নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখে গেছেন। কখনও কঠিন খলনায়ক, কখনও স্নিগ্ধ পজেটিভ চরিত্র— দুই রকম ভূমিকাতেই দর্শককে মুগ্ধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু বহু বছর হলো, পর্দায় আর দেখা যায় না তাঁকে।

তবে এর পেছনে কোনও নাটকীয় কারণ নেই, বরং একেবারেই বাস্তব। এক সাক্ষাৎকারে তমালবাবু জানিয়েছেন, বয়সের ভার আর শারীরিক সমস্যাই তাঁকে ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাঁর বুকে পেসমেকার বসানো হয়েছে, শরীর আগের মতো আর সাড়া দেয় না। এমন অবস্থায় কাজের প্রতি আগ্রহও কমে আসে। তিনি সোজাসাপ্টা বলেছলেন, “শরীর আর দিচ্ছিল না, আর নিজেরও মনে হচ্ছিল এবার বিশ্রাম দরকার।” কথাগুলোয় কোনও আফসোস নেই।

বরং একধরনের মেনে নেওয়া আছে— জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের মতো। কিন্তু এই আলোচনায় উঠে আসে আরেকটি নাম, তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহঅভিনেতা বিপ্লব চ্যাটার্জী। ইন্ডাস্ট্রির জন্য যিনি একসময় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, বিশেষ করে আর্টিস্ট ফোরামের জন্য, কিন্তু শেষে যেন প্রাপ্য সম্মানটি পাননি। এই প্রসঙ্গে তমাল রায় চৌধুরী বলেছেন, “বিপ্লবের কথায় ওকে আজকাল খুব একটা ডাকে না, আমিও এতে সহমত। এত কিছু করেও কেউ দাম দিল না বিপ্লবকে।” এই কথাতেই স্পষ্ট, শিল্পী জীবনের এক নিঃশব্দ কষ্ট।

তবে, বর্তমানে বিপ্লব চ্যাটার্জীর করুন অবস্থার কথা কারোর অজানা নয়। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিপ্লব চ্যাটার্জী আজ লাঠির ভর দিয়ে হাঁটেন। দু’জন মানুষের সহায়তা ছাড়া তাঁর পক্ষে চলা-ফেরা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক সময় পর্দায় যিনি ছিলেন ভয়ঙ্কর ভিলেন, আজ তাঁকে দেখে মানুষের চোখ ভিজে আসে। কেউ সহানুভূতি জানাচ্ছেন, কেউ বা কটাক্ষ করছেন। জীবন আর শিল্পের ফারাকটা কত গভীর, তা যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিচ্ছে এই বাস্তবতা।

আরও পড়ুনঃ “যাত্রায় অভিনয় করলেই ধারাবাহিক থেকে বাদ, সংলাপ নিয়ে প্রতিবাদ করলে সব জায়গা থেকে বাদ! আমরা কি এগোচ্ছি নাকি পিছোচ্ছি?”— শিল্পীদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে সরব রূপাঞ্জনা মিত্র! তুলিকা বসু থেকে শঙ্কর চক্রবর্তী— একের পর এক শিল্পীর কান্না, প্রতিবাদে উত্তাল ইন্ডাস্ট্রি!

উল্লেখ্য, তমাল রায় চৌধুরী এবং বিপ্লব চ্যাটার্জীর মতো অভিনেতারা আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছেন তাঁদের কাজের মাধ্যমে। সময়ের নিয়মে হয়তো তাঁরা আর আলোচনায় নেই, কিন্তু তাঁদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়ের সাক্ষী এই দুই শিল্পীর গল্প আসলে এক মর্মস্পর্শী স্মরণ— খ্যাতি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত আজীবন। তাঁদের জীবনের এই পরিণতি আমাদের ভাবায়, শিল্প জগতের মানুষদের পাশে থাকা ঠিক কতটা জরুরি।