“বাইরে ভালো মানুষের মুখোশ…কিন্তু ভিতরে ও মানুষ নয়, দা’নব একটা!” “মানসিক নির্যা’তন থেকে বাঁচতে, হাত জোড় করে ছেড়ে দিতে ভি’ক্ষা চাই!”— বিস্ফো’রক অভিযোগে সরব অভিনেতা সুরজিৎ সেনের স্ত্রী রীত মণ্ডল! উঠল নোং’রা মানসিকতার অভিযোগ, প্রকাশ্যে আনলেন চাঞ্চল্যকর তথ্য!

টলিউডের জনপ্রিয় মুখ ‘সুরজিৎ সেন’কে (Surjit Sen) দর্শক চেনেন মূলত খলনায়কের চরিত্রে। বহু ধারাবাহিকে দাপুটে অভিনয়ে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন তিনি। কিন্তু এখন পর্দা থেকে বেশ দূরে সরেছেন অভিনেতা। তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ২৪ বছরের অভিনয়জীবন পেরিয়েও কাজের জন্য এখন নাকি তদবির করতে হয়। তাঁর কথায়, টলিউডে এখন রাজনীতির প্রভাব বেড়ে গিয়েছে, যেখানে যোগ্যতার চেয়ে তেলবাজির মূল্য বেশি। সেই কারণে বর্তমানে তিনি অভিনয় ছেড়ে নিজের হাতে একটি দোকান চালান— সেখানে আইসক্রিম এবং নানা খাদ্যপণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু এবার তাঁর পেশার চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনের জটিল অধ্যায়ই বেশি চর্চায় এসেছে।

২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সুরজিৎ বিয়ে করেন ‘রীত মন্ডল’কে (Reet Mondal), যিনি পেশায় একজন মডেল ও ভ্লগার। রীতের বাড়ি মুম্বইয়ে, আর তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই সময় সামাজিক মাধ্যমেই আলাপের সূত্রপাত। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গড়ায় প্রেমে, এমনকি বিয়ের কথাও ওঠে ২০১৭ সালেই। কিন্তু সে বিয়ে ভেঙে যায় নানা মতবিরোধের কারণে। রীতের দাবি, সুরজিৎ তাঁর মাকে শুরু থেকেই সন্দেহ করতেন। এমনকি ভবিষ্যতে মেয়ের সংসারে মা হস্তক্ষেপ করবেন বলেই নাকি তিনি বিয়ে ভেঙে দেন। রীত জানিয়েছেন, তাঁর মা শুধু স্বাভাবিক উদ্বেগে বলেছিলেন যেন মেয়ের কোনও ভুল হলে রাগ না করেন— সেই কথাই নাকি বড় বিবাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাঁদের সম্পর্কের ওঠাপড়া এখানেই শেষ হয়নি। রীত জানান, সুরজিৎ তখন তাঁকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে বিয়ের পর তাঁদের পরিবার নিয়ে একসঙ্গে বড় ফ্ল্যাটে থাকবেন। কিন্তু পরে মত পাল্টে ফেলেন। মুম্বইয়ের যে জায়গায় থাকার কথা বলেছিলেন, সেটি তাঁর কাজের জায়গা থেকে অনেক দূরে, তাই রীত আপত্তি জানান। তাঁর মতে, সুরজিৎ তাঁকে পরিবার থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন, যাতে আর্থিকভাবে বাবা-মাকে সাহায্য করতে না পারেন। এমনকি তিনি জানিয়েছেন, সুরজিৎ নাকি মনে করতেন মেয়েরা বিয়ের পর আর নিজের বাবা-মাকে অর্থ সাহায্য করা উচিত নয়। এইসব মানসিকতার কারণে তাঁদের প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়।

পরবর্তীতে কিছুটা দূরত্ব কাটিয়ে আবার তাঁদের যোগাযোগ হয় ২০২১ সালে। তবে ততদিনে সুরজিৎ অন্য এক মহিলার সঙ্গে বিয়ের রেজিস্ট্রি করেছিলেন, যা পরে নানা সমস্যার কারণে বাতিল হয়ে যায়। রীতের কথায়, সামান্য খাট দেওয়া হয়নি বিয়েতে, তাই সেই বিয়ে টেকেনি! তবুও রীতের বিশ্বাস ছিল পুরনো সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যাবে। ২০২৩ সালে অবশেষে তাঁরা বিয়ে করেন। কিন্তু সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। রীতের অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই সুরজিতের আচরণ একেবারে পাল্টে যায়। তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাও নাকি অস্বাভাবিক ব্যবহার করতেন। একবার নাকি শাশুড়ির কথায় তাঁকে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং কয়েকদিন পর্যন্ত কোনও যোগাযোগ রাখেননি অভিনেতা।

রীতের কথায়, ধীরে ধীরে মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন তিনি। সুরজিৎ নাকি তাঁকে স্ত্রী হিসেবেও স্বীকার করতেন না। সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস আর অপমানের ঘটনাই ছিল নিয়মিত, স্ত্রীকে রেখে সুরজিৎ মা বাবার সঙ্গে এক ঘরে ঘুমাতেন। একসময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে রীত বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুরজিৎ তাঁকে ‘ভিখারী’ বলে অপমান করেন। রীতের বক্তব্য, “যে স্ত্রীকে ভিখারী বলে, তার কাজের জন্য ভিক্ষা চাইতেই হবে!” তিনি জানান, বাইরের সুরজিৎ যেভাবে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেন, বাস্তবে তিনি সম্পূর্ণ অন্যরকম।

আরও পড়ুনঃ “বর্ষার জন্যই দেখি, খল চরিত্র হয়েও সত্যিটাই বলে!” “এই বয়সে এমন অভিনয় অনেক নায়িকাও পারে না…খলনায়িকা নয়, বর্ষা সমাজের আয়না!”— বর্ষা চরিত্রে নজর কেড়েছেন শিঞ্জিনী! দর্শকদের মতে, ‘চিরসখা’র সাফল্যের অন্যতম মুখ তিনি!

রীত পরবর্তীতে পুলিশের সাহায্য নেন এবং এফআইআরও দায়ের করেন। পুলিশের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হলেও অভিনেতা নাকি আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চাননি। তিনি ও তাঁর পরিবার রীতের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করে দেন বলে জানিয়েছেন রীত। তবুও রীতের কথায়, যদি কখনও সুরজিৎ বিপদে পড়েন, তিনি তখনও একজন প্রকৃত স্ত্রীর মতো পাশে দাঁড়াবেন। তাঁর এই কথাতেই বোঝা যায়, সম্পর্কের তিক্ততা যত গভীরই হোক না কেন, ভালোবাসার ছায়া এখনো কিছুটা রয়ে গিয়েছে সেই ভাঙা সংসারের স্মৃতিতে।