“তোর বু’কগুলো আমায় খুলে দে না, লাগিয়ে নিই!”— মীরের অপমানজনক মন্তব্যে সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়! নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় মুখ খুললেও জুটেছিল বিদ্রুপ! এতদিন বাদে সবটা খোলসা করলেন তিনি!

একজন মহিলা যিনি জীবনের একাধিক ভূমিকা দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন— একজন মা, একজন উদ্যোক্তা এবং একজন অভিনেত্রী। তিনি টলিপাড়ার পরিচিত মুখ ‘স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়’ (Swaralipi Chatterjee)। তিনি শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তাঁর নিজের একটি ছোট্ট ক্যাফে রয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ নিজের পছন্দে, তিল তিল করে গড়ে তুলতে সেটাকে । সাথে আছে একটি পডকাস্ট চ্যানেলও, যা ইতিমধ্যেই অনেকের বেশ পছন্দের। সেই চ্যানেলের নাম ‘আমার বৈঠক’, যেখানে উঠে আসে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত নারীদের জীবনের গল্প।

বর্তমানে তিনি একাই নিজের মেয়েকে বড় করছে। স্বামী সৌম বন্দোপাধ্যায়, তাঁকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই ছেড়ে অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বরলিপি। পরবর্তীতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরই দুজনে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। তবে, কখনওই ভেঙে পড়েননি স্বরলিপি। সব সময় দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছেন। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল অভিনয় করবেন। প্রথমে মডেলিং, তারপর সঞ্চালনা করতে করতেই ২০০৫ সালে তাঁর কাছে সুযোগ আসে জি বাংলার ‘হাউ মাউ খাউ’ রিয়্যালিটি শোয়ের।

সেখানে আরও অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে সঞ্চালনায় ছিলেন মীর আফসার আলী (Mir Afsar Ali)। বর্তমানে সকলের প্রিয় মীর। তবে, তাঁর এক এমন আচরণ এবং কথায় এতটাই অপমানিত বোধ করেছিলেন সেদিনের ২৯-২১ বছরের তরুণী স্বরলিপি, যে সেই শো ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রাতারাতি! এতদিন পর জানালেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। স্বরলিপির কথায়, “মীর দার মনে আছে কিনা জানি না, কিন্তু একবার এমন একটা কথা বলেছিলেন যে আমি একটা মেয়ে হিসেবে খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম।

স্টুডিওতে সেদিন মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বেশি ছিল। হঠাৎ মীর দা বলল, ‘স্বরলিপি তোর বু’কগুলো তো ফলস্। আমায় খুলে দিয়ে দে না, লাগিয়ে নিই!’ এতটা অপমানিত বোধ করেছিলাম যে চুপ থাকতে পারিনি। সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিৎ, একটা মেয়ের কিছু লজ্জার যায়গা থেকে। শরীরের কিছু অঙ্গ থাকে, যেটা নিয়ে সে এমন আলোচনায় যেতে চায় না! সেদিন প্রতিবাদ করছি শুনেও সবাই হাসাহাসি করল!” স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়ের এই অভিজ্ঞতা সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান লিঙ্গভিত্তিক অসমতার দিকটিকেই যেন আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরল।

আরও পড়ুনঃ প্রয়াত কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্র! ‘ইয়ে দোস্তি’ থেমে গেল চিরতরে…চলে গেলেন বীরু, একা রইল জয়! না ফেরার দেশে ড্রিম গার্লের জীবনসঙ্গী!

এক তরুণী হিসেবে, তিনি পেশাগত পরিবেশে এমন এক অপমানজনক মন্তব্যের শিকার হন, যা যে কোনও নারীর মানসিক নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। মীরের মন্তব্য যেন প্রমাণ করল যে, কখনও কখনও পরিচিত মুখের আচরণও নারীকে অপ্রস্তুত এবং লজ্জিত করে তুলতে পারে। তবে, এটি শুধুমাত্র স্বরলিপির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং অনেক নারীর জীবনে এমন পরিস্থিতি সাধারণ ঘটনা। তিনি সত্ত্বেও সাহস এবং দৃঢ়তা দেখিয়ে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর প্রতিবাদ এবং সিদ্ধান্ত দেখিয়েছে যে নারীর আত্মসম্মান কখনও নীরবভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথা নয়।