অভিনয়ের জগতে দুই দশক পেরিয়ে এসেও অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু’র (Biswanath Basu) ‘মধ্যে যেন এক অদ্ভুত সরলতা রয়ে গেছে। খ্যাতির আড়ালে নয়, তিনি আজও সেই ব্যারাকপুরের ছেলেটি— যে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে নাটক করত, অভিনয়ের স্বপ্ন দেখত। সেই সময় থেকেই তাঁর মধ্যে এক অনিবার্য টান কাজ করছিল এই জগতের প্রতি। ছোট শহরের ছেলে হয়ে টলিউডে জায়গা পাওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু ধৈর্য, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমই তাঁকে আজকের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।
তিনি নিজেই বলেন, অভিনয় তাঁর কাছে শুধু পেশা নয়, দায়বদ্ধতা—যেখানে কাজের সততা সব কিছুর উপরে। আজ ২০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেও তাঁর চোখেমুখে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই। বরং প্রতিটি নতুন চরিত্রে যেন আবার নতুন করে নিজেকে খুঁজে পান। হয়তো এই কারণেই সাধারণ মানুষের গল্প, তাদের হাসি-কান্না বা সহজ জীবনযাত্রা তিনি এত সহজে ধরতে পারেন পর্দায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই চরিত্রের প্রাণ আসলে বাস্তবের মানুষদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে, আর তাঁদের অনুভব বুঝে তবেই সত্যিকারের অভিনয় করা যায়।
বিশ্বনাথের মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে প্রতিভার পাশাপাশি দরকার ধৈর্য আর নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধা। তবে এত সাফল্যের পরও তাঁর মনে একটিই আক্ষেপ রয়ে গেছে—তরুণ মজুমদারের ছবিতে অভিনয় না করতে পারা। সেই পরিচালকের ছবির চরিত্রগুলোর মধ্যে তিনি নিজেকে দেখতে পেতেন, আর তাই সুযোগ না পাওয়া আজও তাঁর মনে একটা না-পাওয়ার দাগ রেখে গেছে। কিন্তু এই না-পাওয়াও তাঁকে নিরাশ করেনি, বরং আরও মনোযোগী করেছে তাঁর কাজে। সম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে অভিনেতাকে বলতে শোনা যায়, “আমি কোনও তারকা ঠারকা নই!
প্রথম কথা হচ্ছে, আমি যদি তারকা হই, তাহলে উত্তম কুমার কে? কোনও ছবি আমার নাম দিয়ে রিলিজ হলে, আমার নামে সেখানে ২০০ লোক আসবে সেই আত্মবিশ্বাসও আমার নেই! আমি একজন অভিনেতা, তাই শুধুমাত্র অভিনয় করার ইচ্ছা রাখি। সেই ইচ্ছে নিয়েই একসময় টলিউডে এসেছিলাম, ইচ্ছে পূরণের সাথে যদি একটু রোজগার হয়। এক সময় মিঠুন চক্রবর্তীর বই পড়ে, অনুপ্রেরণা পেয়ে অভিনেতা হতে এসেছিলাম। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার সমস্ত গোপন বিদ্যা আমায় শিখিয়েছেন চিরঞ্জিত দা।
একজন অভিনেতার যে সব সময় কাজ থাকবে, তা তো নয়। ওই অবসর সময়ে সে কি করে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারে, চিরঞ্জিত দা আমায় শিখিয়েছে। তারকা বলতে হলে, এবার বুঝতে হবে তারকার সংজ্ঞাটা ঠিক কী? তারকা তাকেই বলে, যে শুধু নিজের উপস্থিতি দিয়েই সিনেমা হল ভরিয়ে দিতে পারে। টলিউডের প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, দেব, জিৎ-এরা পারে। একসময় রঞ্জিত মল্লিক, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, তাপস পাল, পারতেন। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় ছিলেন– এরা সব একেকটা বড় বড় ব্যক্তিত্ব।”
আরও পড়ুনঃ “মা কালী নিজেই কিছু পরেন না, উনি আমাকে বলেননি পুজোর সময় সরু ফিতের ব্লাউজ পড়া যাবে না! মায়ের কাছে যে যা খুশি পরেই পুজো দিতে পারে” ব্লাউজ বিতর্কে মুখ খুললেন অভিনেত্রী সোমাশ্রী ভট্টাচার্য!
অভিনেতা বিশ্বনাথ আজও এটা মানেন এবং প্রত্যেকবার বলেন, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আমার ঘর, টলিউডকে আগলে রাখাটাই আমার দায়িত্ব। জীবনের শেষদিন অব্দি পাশে দাঁড়াবো আমি! আর কেউ না থাকলেও আমাকে ঠিক দেখা যাবে, মহানায়ক উত্তম কুমারের মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি।” তাঁর এই বিশ্বাস, ভালো কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, আর মানুষের প্রতি সহজ সংযোগই তাঁকে আজকের বিশ্বনাথ বসু করে তুলেছে। আপনার কেমন লাগে অভিনেতাকে? জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!






