চলতি বছরের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (KIFF 2025) এক বিশেষ দিনে দর্শকরা পেয়েছেন এক নস্টালজিক মুহূর্তের সাক্ষী। শুক্রবার নন্দনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বন্দেমাতরম’ রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টিকে শ্রদ্ধা জানাতে এই দিন দেখানো হয় ১৯৫২ সালের হিন্দি ছবি ‘আনন্দ মঠ’। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রবাদপ্রতীম অভিনেতা প্রদীপ কুমার। আর সেই ছবির প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন তাঁরই কন্যা, জনপ্রিয় অভিনেত্রী বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অভিনেত্রী জানান, “চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী বাবা নিজেকে বদলে নিতে পারতেন। উর্দু আর হিন্দিতে ওনার দক্ষতা ছিল অনবদ্য। কেউ কথা বললে বুঝতেই পারত না যে উনি কলকাতার মানুষ।” “বাবা লুচি আর রসগোল্লা ছাড়া খেতে বসতেন না, না পেলে রেগে যেতেন!” — হাসতে হাসতে জানালেন তিনি।
তবে এই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে এক গভীর স্মৃতি। অভিনেত্রী বলেন, “আমার বাবা কখনও চাননি আমি সিনেমায় আসি। একদিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর তরুণ মজুমদার আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, আমাকে একটি ছবিতে নেওয়ার প্রস্তাব দিতে। কিন্তু বাবা সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে এবার বাড়ি যাও।” এমনকি অভিনয়ে নামার পরও বাবা টানা ছয় বছর মেয়ের কোনও কাজই দেখেননি। তবু বীণা জানেন, বাবার নিষেধের পেছনেও ছিল ভালোবাসা ও চিন্তা—একজন অভিনেতা কীভাবে নিজেকে নিখুঁতভাবে গড়ে তোলে, সেই শিক্ষা তিনিও বাবার থেকেই পেয়েছিলেন।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বীণা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দি ছবিতেই বেশি কাজ করেছেন—‘কয়ামত সে কয়ামত তক’, ‘খুশি’, ‘আঞ্জাম’, ‘বরসাত’, ‘ইনসান’ সহ আরও বহু জনপ্রিয় ছবিতে তাঁর উপস্থিতি আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। বাংলায় তিনি কাজ করেছেন সন্দীপ রায়ের ‘উত্তরণ’ এবং ‘চোখের আলোয়’-এর মতো ছবিতে। তবে বীণার মনে সবসময়ই ছিল আরও বেশি বাংলা ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে। পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর, কিন্তু নিজের কথাতেই, “এখন আর পরিচালনায় ফিরতে চাই না, আবার অভিনয়ে ফিরে নিজের মতো করে কাজ করতে চাই।”
আরও পড়ুনঃ “সন্তানকে শাসন করতে প্রয়োজনে মা’রতেও হয়, মা কঠোর না হলে মানুষ হবে না!” “বাচ্চাটা ভালো হলেও আমারই হবে, বিপথে গেলেও আমারই যাবে…পাশের বাড়ির লোকের কথায় কান দেবো না!”— নিজ সিদ্ধান্তে গর্বিত, অন্যের মতামত গুরুত্বহীন বললেন অঞ্জনা বসু!
শেষে একটিই অনুতাপের কথা জানালেন অভিনেত্রী—সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কখনও কাজ করা হয়নি। কিন্তু বাংলা সিনেমায় ফেরার স্বপ্ন আজও তাঁর চোখে জীবন্ত। বললেন, “এখনও ইচ্ছে আছে, ভালো গল্প পেলে বাংলায় কাজ করব।” বাবার স্মৃতি আর নিজের অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা—দুয়ের মেলবন্ধনেই যেন বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের পথচলা।






