এককালের টলিপাড়ার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী ‘তিতাস ভৌমিক’কে (Titas Bhowmik) এখন আর পর্দায় দেখা যায় না, কিন্তু দর্শকের স্মৃতি থেকে তিনি হারিয়ে যাননি আজও। কলকাতার বাসস্থান, কাজকর্ম ছেড়ে এখন তিনি দিল্লিতেই স্থায়ী বাসিন্দা। বড় পর্দার তুলনায় টেলিভিশনে নতুন মুখের ভিড় বাড়তেই পুরোনো শিল্পীদের অনেককে মানুষ ভুলে যায় ঠিকই, তবে তিতাসের ক্ষেত্রে সেই ঘটনা ঘটেনি। বেশ কয়েক বছর আগে স্টার জলসার ‘তোমায় আমায় মিলে’র কাকলি চরিত্র তাঁকে জনপ্রিয়তার যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল, তা আজও একধরনের আলাদা পরিচয় হয়ে রয়ে গেছে।
সহ-অভিনেত্রী থেকে খলনায়িকা, বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় তখন দর্শকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এই যাত্রাপথ সবসময় সহজ ছিল না। এতদিন ক্যামেরার আড়ালে থাকার পর, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিতাস জানিয়েছেন, একসময় বিভিন্ন ধারাবাহিকে একইরকম নেতিবাচক চরিত্রই তাঁর কাছে বারবার ফিরে আসত। কোথাও কাউকে পিছলে ফেলা, কোথাও কারও খাবারে নানারকম ষড়যন্ত্র– এই ধাঁচের ভূমিকাগুলো তাঁকে একসময় ক্লান্ত করে তুলেছিল।
তাঁর কথায়, প্রতিটা নতুন প্রোজেক্টেই তাঁকে বলা হত চরিত্রটি আলাদা। কিন্তু শুটিং করতে গিয়ে দেখা যেত আগের কাজেরই পুনরাবৃত্তি! নিজের ভেতরের শিল্পীসত্তা অন্য কিছু খুঁজছিল, কিন্তু সুযোগ মিলছিল না। সেই কারণেই কয়েকটি বড় অফার থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অভিনয় থেকে তাঁর সরে আসার সিদ্ধান্তও হঠাৎ করে নেওয়া। একটি শুটিংয়ের মাঝেই হঠাৎ করেই তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি যা করছেন তাতে আর আগের মতো আনন্দ পাচ্ছেন না।
যে মানুষটা শুটিং ছাড়া নিজের দিন কল্পনাও করতে পারতেন না, সেই তিনিই একসময় ভাবতে শুরু করেন– ‘আজ যদি শুট না থাকত!’ সেই মানসিক পরিবর্তনই তাঁকে ধীরে ধীরে শিল্পজগতের বাইরে নিয়ে আসে। তবে কাজ কম পেলেও তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা মানুষ করেছে, এই উপলব্ধিটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। তিনি কখনও নিজেকে নিয়ে প্রচার করেনি। তিনি মনে করেন, নিজে থেকে কাউকে অনুরোধ না করেও যখন কাজের রিভিউতে তাঁর নাম উঠে আসে, তখন সেগুলোই হয়ে ওঠে বড় পাওয়া।
বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তাঁর মনে কোনও আক্ষেপ নেই। তিনি পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে কখনও কখনও এমনও হয়েছে, শুটিংয়ের আগের দিন কাউকে না পেলে তড়িঘড়ি তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতিটি প্রোজেক্টেই তিনি নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। তাই মানুষ এখনও রাস্তায় চিনে প্রশংসা করলে তিতাস সেটাকেই নিজের সবচেয়ে বড় সম্মান বলে মনে করেন। কেউ কেউ তাঁকে অহংকারী ভাবে ঠিকই, কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানেন তিনি আসলে কেমন মানুষ, এই কথাও তিনি উপলব্ধি করেছেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ একদা দারুণ বন্ধু থেকে তবে কি এবার মুখ দেখাদেখি বন্ধ অঙ্কুশ-মিমির? অঙ্কুশের সঙ্গে ছবি ‘রিজেক্ট’ করলেন মিমি? কী জানালেন অভিনেতা?
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে অভিনেতা সমদর্শী দত্তের সঙ্গে বিয়ে হলেও সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি, চার বছর পর বিচ্ছেদ হয়। এরপর কাছের মানুষের নিয়ে গোপনেই তিনি স্নেহাশিস দাসকে বিয়ে করেন। ব্যক্তিগত জীবনে এখন তিনি অনেক শান্তিতে আছেন। ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে সংসারেই তাঁর সবচেয়ে বড় সুখ। কাজ না করা নিয়ে কোনও অনুশোচনা তাঁর নেই, বরং নিজের বর্তমান জীবনই তিনি উপভোগ করছেন পূর্ণ মন দিয়ে। অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছা নেই বলেই তিনি স্পষ্ট জানান, তবে ভবিষ্যতে সত্যিকারের ভালো কোনও কাজ এলে ভেবে দেখবেন।






