টলিউডে ফেডারেশন সংক্রান্ত বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’-এর (The Academy of Fine Arts) মুক্তির ঠিক আগে যে সমস্যাটা তৈরি হল, তা আবারও ইন্ডাস্ট্রির পুরনো ক্ষতটাকেই যেন সামনে এনে দিল। ছবির প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল জোর কদমে, দর্শকদের মধ্যেও কৌতূহল ছিল। মুক্তির ঠিক আগের দিন জানা গেল, নাকি ছবির শুটিং নাকি ফেডারেশনের নিয়ম মেনে হয়নি আর সেই কারণেই মুক্তির অনিশ্চয়তা! ছবির অভিনেতা-নির্মাতারাদের খোলাখুলি অভিযোগ, ফেডারেশনের এই নিয়ন্ত্রণই নাকি বাংলা সিনেমার বড় বাধা।
এদিকে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক সুজিত হাজরার বক্তব্য একেবারেই অন্যদিকে ইঙ্গিত করছে। তাঁর দাবি, ছবিটি তৈরি হয়েছে কোনও টেকনিশিয়ান ছাড়াই আর তাঁদের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি! তিনি এমনও বলেন যে, শুটিং শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত কিছুই তাঁর জানা ছিল না! এতদিন ধরে যে অভিযোগগুলো টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে তোলা হত, সেই প্রসঙ্গ এবার উল্টোদিক থেকে সামনে এলো! ফলে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারা আসলে নিয়ম ভাঙল?
এই পরিপ্রেক্ষিতেই সমাজ মাধ্যমে সরব হলেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (Joydeep Mukherjee)। এক সময় যিনি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, সেই তিনিই এবার খোলাখুলি তাঁদের পক্ষেই কথা বললেন! তাঁর পোস্টে তিনি মনে করিয়ে দিলেন যে একটা ছবি মানে শুধু পরিচালক বা অভিনেতা নন, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বহু পরিবারের রুটি-রুজি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু লোক শিল্পের নামে নাকি এমনভাবে ব্যবসা করেন যে তাতে টেকনিশিয়ানদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে! তাঁর মতে, আলোচনাতেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তবে তাঁর এই অবস্থানই বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যারা আগে তাঁকে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেখেছে, তারা এখন ভাবছে, কীভাবে তিনি এত দ্রুত দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেন? কাজ না পাওয়ার ভয়? নাকি সত্যিই তিনি মনে করছেন যে টেকনিশিয়ানদের স্বার্থই সবচেয়ে জরুরি? সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ইঙ্গিত করেছেন যে তাঁর বক্তব্য কিছুটা আত্মসংযত, যেন কেউ নিজের অবস্থান বাঁচিয়ে চলতে চাইছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটাই হয়ত তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া মত।
আরও পড়ুনঃ টলিপাড়ায় ফের জুটির ভাঙ’ন? পায়েল দে ও দ্বৈপায়ন দাস কি সত্যিই আলাদা হচ্ছেন? ১২ বছরের দাম্পত্যের মধ্যেই কেন জন্ম নিল নতুন জল্পনা, সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে আর দেখা যাচ্ছে না তাদের—দর্শকরা কি হারাতে চলেছেন প্রিয় টলিউড জুটিকে?
পুরো ঘটনাটা মিলিয়ে বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ কতটা সংকটে আছে, সেটাই বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে! একদিকে নির্মাতাদের অভিযোগ যে, ফেডারেশনের কঠোরতা সৃজনশীলতাকে থামিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ফেডারেশনের দাবি, নিয়ম না মানলে তাদের দায় কী? আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পরিচালক জয়ব্রত দাসের ‘দি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’, যার ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত! একটা কথা না বললেই নয় যে, বাংলা ছবির সমস্যাটা কেবল একটি ছবির নয় বরং পুরো টলিউড ইন্ডাস্ট্রির! বিশ্বাস, নিয়ম, স্বার্থ আর নিরাপত্তাহীনতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই যেটার সার্বিক উন্নতি সম্ভব।






