বাংলা ছবির পরিবর্তন এবং ‘বাঙালিয়ানা’ হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে কিছুদিন আগেই অভিনেতা ‘রঞ্জিত মল্লিক’ (Ranjit Mallick) নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আক্ষেপ করেছিলেন। বহু দশকের পথচলায় তিনি যেমন বাংলা ছবির উত্থান দেখেছেন, তেমনই দেখেছেন গল্প বলার ভাষা এবং পরিবেশের বদল। সেই জায়গা থেকেই তাঁর আক্ষেপ যে, এখনকার ছবিতে নাকি আগের মতো সেই পরিচিত বাংলার স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না! পোশাক থেকে সংলাপ, শহর-গ্রামের আমেজ থেকে আচরণ– কোথাও যেন বাংলা ছবির নিজস্ব রংটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে তার মনে হয়।
তাঁর মতে, দর্শকের সঙ্গে যে মাটির টান ছিল এক সময়, সেই জায়গাটাই যেন আজ সবচেয়ে বেশি নড়বড়ে! কিন্তু এই একই প্রশ্ন যখন তাঁর মেয়ে ‘কোয়েল মল্লিক’কে (Koel Mallick) করা হলো, তিনি বাবার বক্তব্যকে অস্বীকার না করেও নিজের যুক্তি খুব পরিষ্কার করে সামনে আনলেন। টলিকুইন কোয়েল বললেন, “বিভিন্ন মানুষের রুচি এবং স্বাদ আলাদা হয়, সেটা খাওয়ার হোক বা সিনেমা। আমি একটু শুক্তো-ভাতের মানুষ, এটাই আমার স্বাদ। আমার এটাই খেতে ভালো লাগে আর আজকাল মানুষেরও দেখছি এই স্বাদটা খুব পছন্দ হচ্ছে।”
তাঁর বক্তব্যে একদমই তর্ক নেই বরং আছে একধরনের সহজ ব্যাখ্যা, বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও মূল স্বাদটুকু থাকলে দর্শক তা গ্রহণ করেই। এই প্রসঙ্গেই কোয়েল আরও যোগ করেন, “তার জন্যই আমার মনে হয় একটু মাছের ঝোল, একটু শুক্তো থাকলে সব মিলিয়ে মিশিয়ে একটা ভালো খাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বাঙালিয়ানার জায়গাটা থাকা উচিত।” তাঁর এই মন্তব্যে যেন সব সময়ের মতো একটা ভারসাম্য রয়েছে। তিনি সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন, নতুন কিছু গ্রহণ করা ভুল নয় কিন্তু নিজের শিকড়কে ভুলে গেলে পরিচয়টাই দুর্বল হয়ে যাবে।
বাবার উদ্বেগের সঙ্গে তাঁর এই চিন্তাভাবনাও কোথাও যেন মিলে গিয়েছে, তবে তিনি সেটা অনেকটাই নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ভাইফোঁটার সময় চলতি বছর মুক্তি পেয়েছে কোয়েল মল্লিকের নতুন ছবি ‘স্বার্থপর’। ছবিটির প্রেক্ষাপট যদিও একটি সম্পত্তি ঘিরে ভাই বোনের মান অভিমান এবং দ্বন্দ্বকে নিয়ে। তবুও, ছবিতে বাঙালিয়ানা ভরপুর রয়েছে। ভাইফোঁটার আবহ, পুরোনো দিনের ঘরবাড়ি থেকে ঐতিহ্যবাহী পোশাক– সবই দর্শকদের যেন আরও গল্পের কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ “এখন আর চেনা ছকের বাইরে কেউ গান শোনে না, আর তাই ভালো শিল্পী এবং তাদের সংগীত অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে!” সংগীত জগতের বর্তমান চিত্রকে তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা শান্তনু মৈত্রর!
কোয়েলের মতে, এটাই প্রমাণ করে যে পরিবর্তন এলেও বাঙালির গল্পে নিজের ঘরের গন্ধ থাকলে মানুষ সেই গল্পে স্বাদটা ঠিকই খুঁজে পায়। সব মিলিয়ে রঞ্জিত মল্লিকের অভিজ্ঞতা এবং কোয়েল মল্লিকের সহজ-সরল বিশ্লেষণ যেন দুটি প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি এক জায়গায় গিয়ে মিলে যাওয়ার মতো। একজন পরিবর্তন দেখে আক্ষেপ করেছেন, অন্যজন সেই পরিবর্তনের ভেতরেও বাঙালিয়ানার জায়গাটুকু খুঁজে নিচ্ছেন। আপনারাও কি টলিকুইনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত?






