“সেদিন আমার পোশাক পরিপাটি থাকলে, ওরা এসব করতে পারত না!” “আমাকে নিয়ে যে এইসব চলছে সেটা অনেক পরে জেনেছি!” ভাইরাল ভিডিওর পর মুখ খুলে অভিনেত্রী সুমি, পূর্ব বর্ধমানের আসল গল্প আনলেন সামনে! মানসিক ভারসাম্যহীনতার অভিযোগ ছিল নিছক ভুল বোঝাবুঝি?

পূর্ব বর্ধমানে রাস্তার ধারে ভিজতে থাকা এক মহিলাকে ঘিরে কিছুদিন আগে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, সেটা এখনও অনেকের মনে টাটকা। কিছু স্থানীয় মানুষ তাঁকে ক্লাবঘরে আশ্রয় দেন আর সেখান থেকেই শুরু হয় ভুলবোঝাবুঝির চক্র! কেউ তাঁর আচরণকে অস্বাভাবিক বলেছিলেন, কেউ আবার তাঁর পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেন। পরে সামাজিক মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি অভিনেত্রী ‘সুমি হর চৌধুরী’ (Sumi Har Chowdhury)। কিন্তু তখন যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন, সেটা কতটা ভিত্তিহীন ছিল তা বুঝতে আর দেরি নেই। কারণ, মাস তিনেক পর প্রকাশ্যে আসা তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে দেখা গেল একদম স্বাভাবিক, শান্ত ও সংযত সুমিকে।

এদিন সুমির কথায় স্পষ্ট বোঝা যায়, যে পরিস্থিতিকে অনেকেই মানসিক সমস্যা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, সেটা ছিল একেবারেই ভুল ধারণা। তিনি জানান, ওই সময় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বেঙ্গালুরু থেকে ফিরেছিলেন অত্যন্ত ক্লান্ত অবস্থায়। এই অবস্থায় নিজের লাগেজ থেকে কিছু জামাকাপড় আর বইপত্র নিয়ে বাকিটা এক বন্ধুর বাড়ি রেখে, বোলপুরে নিজের ভাড়া বাড়িতে ফেরেন। সেখানে দেখতে পান, দরজায় তালা দিয়ে বাড়ির মালিক কোথাও গিয়েছেন। অগত্যা ওই অবস্থাতেই গুরুদেবের বাড়ি বিশ্রাম নিতে যাবেন ঠিক করেন। গুরুদেবের বাড়ি আমরুল, সেইদিকে অভিনেত্রী খুব একটা যাননি আগে তাই ভুল রাস্তায় ঢুকে পড়েন।

কোনও একটি গ্রাম্য বাজারে উপস্থিত হয়ে জানতে পারেন তিনি ভুল জায়গায় আছেন। ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় কয়েকজন তাকে স্থানীয় একটি ক্লাবে আশ্রয় নিতে বলেন। সেখানেই নাকি একের পর এক মানুষ অভিনেত্রীকে ক্রমাগত ঘিরে ধরেন আর কথা বলার চেষ্টা করেন। টানা ভ্রমণের ধকল থেকে শরীরে ক্লান্তির ছাপ আর এলোমেলো পোশাক মিলিয়ে তাঁকে দেখে মানুষের মনে ভুল ধারণা জন্মায়। তাঁর নিজের ভাষায়, “সেদিন যদি আমার পোশাক পরিপাটি থাকতো, তাহলে ওরা এসব গুজব রটাতে পারত না।” সেই মুহূর্তের চেহারাই তাঁকে নিয়ে তৈরি করে ভয়ংকর এক গল্প, যা তিনি নাকি অনেক পরে জেনেছেন কাছের মানুষদের ফোনে।

অভিনেত্রীর ব্যাখ্যায় আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, স্থানীয়দের সন্দেহ ও প্রশ্নে তিনি অস্বস্তি অনুভব করেছিলেন। মানুষজন ক্রমশ ঘিরে ধরায় পরিস্থিতি তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলেই মনে হয়েছিল। সেই চাপের কারণে তিনি তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আরও বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ওরা গ্রাম্য মানুষজন, ওদের কাছে আমার আচরণ অস্বাভাবিক লাগতেই পারে। তবে, আমাকে নিয়ে যে এইসব চলছে আমি সেটা অনেক পরে জেনেছি।” তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হওয়া কঠিন, এমন একজনকে কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ ভেবেছিল!

এ ঘটনার আগে-পরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কিছু মতবিরোধ ছিল। মা এবং মেয়ের সঙ্গে সামান্য মনোমালিন্য, যা নিয়েও অনেকে অতিরঞ্জিত গল্প বানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু সুমি খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, “আমার মা আর মেয়ের সঙ্গে একটু ঝামেলা চলছিল ঠিকই, কিন্তু কখনোই মানসিক ভারসাম্য হারায়নি।” তিনি জানান, সেই সময় তিনি কেবল বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন গুরুদেবের বাড়িতে। অচেনা পথে ভুল করে অন্যদিকে চলে যাওয়াই তাঁর বিপাকে পড়ার মূল কারণ। দুর্ঘটনা বলতে যা বোঝায়, সেটাই ঘটেছিল এর বেশি কিছু নয়।

আরও পড়ুনঃ ‘আশ্রয়দাতাকে কি সুন্দর চরি’ত্রহীন বানিয়ে দিলেন, অমানবিকতা আর অকৃতজ্ঞতারও তো একটা সীমা আছে!’ ‘নতুনের কু-নজর থাকলে এতদিন টিকতে পারতেন?’ বর্ষার ফাঁদে পা দিয়ে নতুনকেই দোষী ঘোষণা লক্ষ্মীমণির! ক্ষোভে ফুঁসছেন ‘চিরসখা’র দর্শকরা!

এখন তিনি আগের মতোই কাজে ফিরতে চান। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে, ফিরতি পথও প্রায় তৈরি। সুমি বলেন, সেই এলাকা তাঁকে আবার ডাকলে তিনি কোনও দ্বিধা রাখবেন না। বরঞ্চ মানুষের মনে রাখা আর সহমর্মিতাকে তিনি নিজের প্রাপ্তি মনে করেন। সব মিলিয়ে তাঁর এই বক্তব্যই প্রমাণ করে দিল, সবটাই রটনা আর গুজব। বর্তমানে কলকাতায় বাড়িতেই থাকছেন অভিনেত্রী, শারীরিক আর মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। বরং এমন অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরও দৃঢ় হয়েছেন আর নতুন করে সামনে আসার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।