“ছোটপর্দা ছাড়লাম ওই একজন প্রোডিউসারের জন্যই…” একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয়, হঠাৎ করেই টেলিভিশন ছেড়ে যাওয়ার আসল কারণ জানালেন সৌরভ দাস! এই সিদ্ধান্তের পেছনে কে, ঠিক কী ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে?

টলিউডে আজ যে অভিনেতা ‘সৌরভ দাস’ (Saurav Das) অন্যতম জনপ্রিয় নাম, তার পিছনে আছে অনেকটা উত্থান-পতনের গল্প। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল না আগ্রহ ছিল না, তাই ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন মা-বাবা। একাধিক কিছুতে ছেলের মনোযোগ পরীক্ষা করলেও, মায়ের নজর এড়ায়নি ছেলের অভিনয়ের প্রতি টান। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি সৌরভকে ঠেলে দিয়েছিলেন থিয়েটারে। খুব অল্প সময়েই সৌরভ বুঝে ফেলেন অভিনয়ই তাঁর পথ। সেখান থেকেই শুরু, হাস্যরসাত্মক চরিত্রে ছোটপর্দায় নিয়মিত কাজ করতে থাকেন তিনি।

তবে, এখনকার জনপ্রিয়তা বা আলোচনার কেন্দ্রে থাকা নিয়ে তাঁর ভাবভঙ্গি অনেকটাই শান্ত। অভিনেত্রী দর্শনা বণিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার পর আরও স্থির হয়েছেন বলেই মনে করেন ভক্তরা। সমাজ মাধ্যমে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানান কথা হতেই থাকে, কিন্তু সৌরভ নিজে এসবকে স্বাভাবিকভাবেই নেন। তাঁর কেরিয়ারে যেমন বিভিন্ন প্রতিকূল অধ্যায় এসেছে, প্রেম এবং ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে নানান রঙ। শেষমেশ তিনি যে স্থিতি খুঁজে পেয়েছেন, এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় স্বস্তি।

কিন্তু ছোটপর্দা ছেড়ে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে হঠাৎ উঠে আসা সৌরভের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত। ‘চরিত্রহীন’ ‘আসতে লেডিস’ বা ‘মন্টু পাইলট’-এর মতো সিরিজ তাঁকে নতুন করে জনপ্রিয়তা দিয়েছে আর বাংলার ওটিটির অন্যতম মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। অথচ কেউ জানত না, তাঁর জীবনে একসময় এমন একটা দিনও এসেছিল যখন ছোটপর্দা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই তাঁকে ভীষণ দুঃখ দিয়েছিল। তাঁর পেছনে রয়েছে একটা অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা, যা তাঁর অভিনয়জীবনের গতিপথই বদলে দিয়েছে।

দীর্ঘ কয়েক বছর টেলিভিশনে কাজ করার পরও একসময় তিনি অনুভব করেন, নিজের চরিত্রকে আরও ভালো করাতে হবে আর সেটাই কাল হয়েছিল তার জন্য! এতদিন বাদে সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই সৌরভ মুখ খুলেছেন। তিনি বললেন, “৪-৫ বছরে ১৫ টারও বেশি ধারাবাহিকে অভিনয় করে ফেলেছিল। ২০১৫ সালে শেষ যে ধারাবাহিকটায় অভিনয় করছিলাম, সেখানে আমার চরিত্রটা ছোট হলেও বেশ প্রভাব ফেলেছিল। তবে আমার মধ্যে একটা প্রবণতা ছিল চরিত্রটাকে আরও উন্নত করে তোলার।

সেই জন্য আমি সংলাপ নিজের মতো করে বলতাম। এটা সেই ধারাবাহিকের প্রোডিউসারের পছন্দ হয়নি। তিনি একদিন জানিয়েছিলেন যে, তাঁর সংলাপ বড় বড় নায়করা বললে আমি কেন বলি না। তখন আমি কারণটা জানাতে তিনি আরও রেগে যান আর আমার সংলাপ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপরে কিছুদিন বাদে আমার চরিত্রটাও শেষ করে দেন। তখন ঠিক করি যে আর ধারাবাহিকে অভিনয় করব না। সেই সময় ওয়েব সিরিজ সবে সবে এসেছে, কিছু জানতাম এটাতে অভিনয় করলে টাকা পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুনঃ শেষের পথে নাকি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’? আর্য-অপর্ণার বিয়েই হতে পারে ধারাবাহিকের চূড়ান্ত অধ্যায়, শিরিন কাজ করছেন স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে! ছোটপর্দার যাত্রা শুরুতেই ধাক্কা খেলেন তরুণ অভিনেত্রী? নতুন জুটিকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়াই কি তবে কারণ? নাকি নেপথ্যে অন্যকিছু?

সেই থেকে শুরু আজও চলছে। ছোটপর্দা ছাড়লাম ওই একজন প্রোডিউসারের জন্যই, যার নাম নিচ্ছি না।” এই ঘটনাই যেন তাঁকে নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করতে উস্কে দিয়েছিল। অপমানের সেই দিন তাঁর ভেতরে অন্যরকম আগুন জ্বেলে দেয়। কিন্তু প্রতিশোধ নয়, নিজের কাজের মাধ্যমে নিজেকে আরও উঁচুতে তুলে ধরাই হয়ে ওঠে তাঁর লক্ষ্য। এরপরই তাঁর ভাগ্যে আসে ওটিটির সুবর্ণ সুযোগ, আসে বড়পর্দার ডাক। বিভিন্ন মাধ্যমে একের পর এক কাজ করে, তিনি আজ সকলের প্রিয় অভিনেতা।