“যা যা নে’শা মানুষ ভাবতে পারে, সব করেছি…ম’লমূ’ত্র বেরিয়ে যেত বুঝতাম না, জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় ছিল!” ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সপ্তর্ষি মৌলিক! নে’শার গভীর খাদ থেকে আলোয় ফেরার গল্প বলতে গিয়ে চোখ ভিজে এলো তাঁর!

থিয়েটারের মঞ্চে প্রথম আলোয় পা রেখেই অভিনয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন ‘সপ্তর্ষি মৌলিক’ (Saptarshi Moulik)। ধীরে ধীরে নানা চরিত্রে অভিনয় করে নিজের প্রতিভা দিয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। এখনও তাঁর নাম উঠলেই সবার আগে মনে পড়ে ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের প্রিয় চরিত্র ‘ডিঙ্কা’র কথা। এর পাশাপাশি ‘এক্কা দোক্কা’ ধারাবাহিকেও তাঁর অভিনীত চরিত্র যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল দর্শকমহলে। সব মিলিয়ে ছোটপর্দায় তিনি আজ জনপ্রিয় মুখ। বর্তমানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গৃহপ্রবেশ’ এর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘আকাশ সেন’-এর ভূমিকায়।

তবে, অভিনেতা হয়ে ওঠার পিছনের যে অন্ধকার ইতিহাস তাঁর রয়েছে, সেই কথা হয়তো খুব কম মানুষই জানেন। অভিনেতা নিজেও জানাতে চান না সবাইকে, মনে করেন এসব শুনলে মানুষ অকারণে সহানুভূতি দেবে আর সেটা তাঁর গ্লানি বোধকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সপ্তর্ষির বাড়ি উত্তরপাড়া। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা। ছোটবেলা থেকে বাড়ির পরিবেশ ছিল অত্যন্ত স্বাধীন, কোনও কিছুতেই বাধা পেতে হয়নি তাঁকে। সেই সময় হলিউডের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল সপ্তর্ষির, তরুণ বয়সে সেই পাশ্চাত্যের প্রভাব যেন অন্ধ করে দিয়েছিল তাঁকে।

তেমন সাজ-পোশাক বা শারীরিক ভাষা অনুকরণ করতেন তিনি। ২০০৪ সালে মাধ্যমিক দেওয়ার পর বেলুর হাই স্কুলে ভর্তি হন, বাবা মায়ের ইচ্ছেতে সাইন্স নিয়ে। তেমন ভালো রেজাল্ট না হলেও, সেন্ট পলস্ কলেজে ভর্তি হন ইকোনমিক্স অনার্স নিয়ে। সেখানে গিয়ে প্রথম বাঁধন ছাড়া অনুভূতি, বাবার দেওয়া হাত খরচের টাকা আর নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ, ফলে ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট যথেষ্ট খারাপ হলো তাঁর। যে ছেলেটা ছোটবেলা থেকে খুব ভালো পড়াশোনায় না হলেও, রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো করত, প্রথমবার সে ব্যর্থতার স্বাদ পেল!

ভেঙে পড়ল সে একেবারে। পড়াশোনার প্রতি, নিজের প্রতি তার এক অদৃশ্য ক্ষোভের সৃষ্টি হল। আসক্ত হয়ে পড়ল বিভিন্ন রকমের নেশায়। অভিনেতার কথায়, “যা যা নেশা মানুষ ভাবতে পারে সমস্ত করেছি। অ্যালকোহলের প্রতি ছোটবেলা থেকেই কোনও আসক্তি ছিল না, তাই শুকনো নেশা (ড্রাই ইন্টক্সিকেন্ট) করতে শুরু করি। যেহেতু তেমন কোনও গন্ধ পাওয়া যেত না, তাই বাড়ির কেউ বুঝতে পারেনি। যারা নেশা করে তারা ঠিক নেশার বন্ধু জুটিয়ে নেয়, আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। টাকা দিয়ে সবাই মিলে নেশা করতাম। ৪-৫ বছর এমন করে কাটানোর পর নিজেই বুঝতে পারলাম শরীর একেবারে ভেঙে গেছে এই অত্যাচারে।

কালো হয়ে গেছি, রোগা চেহারা, যখন তখন অজ্ঞান হয়ে যেতাম। তারপর আস্তে আস্তে বাবা জানতে পারে, দুজন বন্ধু সে সময় আমার অনেক সাহায্য করেছে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার। এরপর একদিন নিজেই ঠিক করলাম যে, অনেকদিন পরে আর না। বাবাকে গিয়ে বললাম একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। বাবা সেখানে নিয়ে যেতে তারা বললেন ভর্তি হতে হবে। আমি বললাম আমাকে ওষুধ দিয়ে এক মাস সময় দিন, তার মধ্যে যদি আমি আবার তেমন কিছু করি তাহলে ভর্তি করে নেবেন।” সপ্তর্ষির কথায়, “ছোটবেলা থেকে আমার মধ্যে ইচ্ছাশক্তিটা খুব প্রবল ছিল।

আরও পড়ুনঃ “ও যে আমার থেকে ১৪ বছরের বড় সেটা প্রথমে ঠাম্মিকেই জানিয়েছিল সোহিনী” সম্পর্কের শুরুটা কি সত্যিই মসৃণ ছিল সোহিনী-সপ্তর্ষির? ১২ বছরের সুখী দাম্পত্যের অনন্য উদাহরণ এই তারকা দম্পতি

বাবাকে বললাম একটা ঘরে আমাকে বন্ধ করে দিতে, শুধুমাত্র খাবার সময় খাবার দেবে। ওই একটা মাস সবচেয়ে অন্ধকার ছিল আমার জীবনে। যখন তখন কাঁপুনি হতো, বমি হতো, মলমূত্র বেরিয়ে যেত বুঝতে পারতাম না। সেই সময় আমি বাংলা সাহিত্য, কবিতা বিভিন্ন রকম বই পড়তে শুরু করি। আগে শুধু দর্শক বা শ্রোতা হিসেবে জিনিসগুলো অনুভব করতাম, কিন্তু সেই প্রথম মনে হল আমার মধ্যেও শিল্পীসত্তা আছে কিছু একটা করার। এক মাস পর বাবাকে বললাম, আমাকে নাটকের দলে ভর্তি করে দাও। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও, পরে সেই থেকে শুরু আমার।”