“যেই গাছে ফল হচ্ছে, তাকেই কেটে দিচ্ছো! এটা কি ইন্ডাস্ট্রির ভালোর জন্য, না দেবকে আটকানোর জন্য?” ২০২৬ সালের পুজোয় ছবি মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা! টলিউড স্ক্রিনিং কমিটির মিটিং ঘিরে দেবের বিস্ফো’রক দাবি! মুখ খুলতেই কি মিলল না হল?

বিনোদন জগতের অন্দরমহলের রাজনীতি (Industry Politics) আজ আর নতুন কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই টানাপোড়েন মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসে, বিশেষ করে উৎসবের মরশুমে ছবি মুক্তি ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, সেটা যেন কারোর নজর এড়ায় না। দুর্গাপুজো, পয়লা বৈশাখ, দিওয়ালি, ঈদ বা বড়দিন, সব উপলক্ষেই বক্স অফিসে আসে বড় বাজেটের ছবি। আর সেই সময় ছবি মুক্তি মানেই শুধু ব্যবসা নয়, হয়ে ওঠে ক্ষমতা আর প্রভাবের লড়াইয়ের মঞ্চ। কে কতটা দর্শক টানতে পারল, কার কত আয় হলো, সেটাই যেন বড় বিষয় হয়ে ওঠে।

যাঁরা একই ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করছেন, তাঁরাই একই দিনে ছবি মুক্তি হলে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন, তবে এই দৃশ্য আজকের নয় বহু পুরোনো আর ছোট-বড় সবাই এই সমীকরণের বারবার জড়িয়ে পড়েছে। টলিউডে এই আবহেই দেবের (Dev) মন্তব্য নতুন করে আলোড়ন ফেলেছে। সম্প্রতি তিনি সরাসরি ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায় উঠে এসেছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে কারও ব্যর্থতা অন্যের আনন্দের কারণ হয়ে দাঁড়ায়! বন্ধুত্বের মুখোশের আড়ালে যে হিংসা আর প্রতিযোগিতা কাজ করে, তা লুকোনোর চেষ্টাও নাকি আর করা হচ্ছে না!

দেবের বক্তব্যে স্পষ্ট, এখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টি উঠে এসেছে ২০২৬ সালের পুজোর ছবি মুক্তি ঘিরে। দেবের দাবি, ইন্ডাস্ট্রির একটি কমিটির বৈঠকে তাঁকে নাকি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ওই সময় ছবি না আনতে! কোনও লিখিত কারণ বা কোনও পরিষ্কার ব্যাখ্যা, কিছুই নাকি দেওয়া হয়নি! অথচ সেই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল নাকি সিনেমা মুক্তির পরিকল্পনাকে আরও সহজ করা এবং বাইরের বিনিয়োগ টানা। দেবের প্রশ্ন, যদি আগেভাগেই সব তারিখ দখল হয়ে যায়, তাহলে নতুন পরিচালক বা প্রযোজকরা আদৌ সাহস পাবে কীভাবে?

এই জায়গায় দেব নিজের লড়াইয়ের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। লকডাউনের মতো কঠিন সময়েও যখন অনেকেই পিছিয়ে ছিলেন, তখন তিনি ছবি মুক্তির ঝুঁকি নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “যখন কেউ সাহস করছিল না ‘ওয়ার টু’র সামনে ছবি রিলিজ করতে। ‘দেবী চৌধুরানী’র ডেট পিছিয়ে দেওয়া হলো, তখন আমি বাংলা ছবিকে সামনে দাঁড় করালাম, ‘ধুমকেতু’ রিলিজ করলাম। যে ছেলেটা গ্রাম থেকে শহর বাংলা ছবির প্রচারে তিনি নিজে পথে নেমেছে, তাঁর সঙ্গেই এটা করতে ইচ্ছা হলো? আমাকে দুটো লাইন লিখে দিক, পুজোর ছবি নিয়ে প্রেস জানতে চাইলে যেটা বলবো!”

আরও পড়ুনঃ “আমার যখন কাজ থাকে না, আমি পার্লারে যাই না… দশ টাকা পকেটে নিয়ে দশ হাজার টাকার মতো ব্যবহার করতে পারো না”- গ্ল্যামার আর লোকদেখানো লাইফস্টাইলের বিরুদ্ধে সোজাসাপ্টা কথায় নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন কনীনিকা ব্যানার্জি!

এমনটাই তাঁর দাবি যে রাজনীতি হোক, ধর্ম বা দলের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথাও বলেন তিনি। সেই জায়গা থেকে তাঁর প্রশ্ন, এমন একজনকে কীভাবে যুক্তি ছাড়া সরিয়ে দেওয়া যায় একটি মরশুম থেকে? দেবের বক্তব্যে যে হতাশা ধরা পড়েছে, তা শুধু ব্যক্তিগত নয় বরং গোটা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে। তাঁর ধারণা, বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার বদলে অনেকেই ব্যক্তিগত সমীকরণ মেলাতেই বেশি ব্যস্ত। কে কাকে ঠেকাতে পারল, সেই হিসেবটাই যেন বড় হয়ে উঠছে। তাঁর প্রশ্ন, টলিউড কি সত্যিই ভালোর জন্য লড়ছে, নাকি লড়াইটা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে কয়েকজনকে নিয়ে?

You cannot copy content of this page