শিক্ষা বলতে শুধু বইয়ের কটা অক্ষর জানা নয়। চরিত্র, আচরণ আর মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠার পাঠও তারই অংশ। বিশিষ্ট অভিনেত্রী তথা পদ্মশ্রী প্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের (Mamata Shankar) মতে, সেই পাঠ ঠিকমতো দিতে পারতেন পুরোনো দিনের শিক্ষকরা। তাঁর অভিজ্ঞতায়, যেসব শিক্ষক শাসন করতেন, প্রয়োজনে বকা দিতেন আবার মাঝে মাঝে কঠোরও হতেন। বড় হয়ে সেই মুখগুলোই সবচেয়ে বেশি মনে থাকে! কারণ তাদের ধমকের আড়ালে লুকিয়ে থাকত সংশোধনের ডাক, দায়িত্ববান মানুষ বানানোর চেষ্টাই ছিল আসল উদ্দেশ্য।
তাঁর ভাষায়, আজকের সময়ে অনেক কিছু বদলে গেছে। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব যেন ভারতীয়দের নিজস্বতাকে দমিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষকরা আজ বুক চিতিয়ে কথা বলতেও ভয় পান! কারণ সামান্য চোখ রাঙালেই অভিযোগের বোঝা এসে পড়ে মাথায়। এই অতিরিক্ত সতর্কতার মাঝেই তিনি দেখেন শূন্যতা, যেখানে শিশুর শিখে ওঠার সুযোগ কমে যাচ্ছে রোজ। মমতা শঙ্কর মনে করেন, ভুল করলে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা থাকা উচিত আর সেই জায়গায় অন্যের অতি হস্তক্ষেপ না থাকাই ভালো।
জীবন শেখায় জীবন থেকেই, সবসময় অন্য কেউ সেই পাঠ দিতে গেলে শেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তবে তাঁর কথায় কড়াকড়ি থাকলেও মনোভাবটা কঠোর নয়। বরং ভালবাসা আর উপকারের জায়গা থেকেই উঠে এসেছে এই যুক্তি। তাঁর মতে, শাসন মানেই অপমান নয়, নিজের সীমা জানাতে সাহায্য করে। তিনি জানিয়েছেন, নিজের ছাত্রীদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই মনে করেন। তাই। নাচ শেখানোর সময় তাঁর ছাত্রীরা যেমন শাসন পায়, তেমনই পান স্নেহও। তিনি বিশ্বাস করেন, কঠোরতা নিঃসন্দেহে জরুরী।
তবে, তার সঙ্গে সহানুভূতির সঠিক ভারসাম্যই একজন শিক্ষককে প্রকৃত শিক্ষক বানায়। প্রসঙ্গত, মমতা শঙ্করের এই মতামত স্বাভাবিকভাবেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া টেনে এনেছে আবারও। কেউ তাঁকে সমর্থন করছেন, তো কেউ বিরোধিতা। কিন্তু তাতে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। তিনি মনে করেন, নিজের ভাবনা প্রকাশের মতামত সবার আছে, তাই অন্যের থেকে প্রশংসা পেয়ে ভালো লাগলে সমালোচনাকেও ভালোলাগার মতো করেই গ্রহণ করতে হবে। তিনি সতর্কতা জানিয়েছেন, শিক্ষার ভিত্তি যদি নরম হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুনঃ“বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে এবার কি বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে ‘গৃহপ্রবেশ’ জুটি?”—দীর্ঘদিনের গুঞ্জনের মাঝেই ক্রিসমাস পার্টিতে একসঙ্গে জুটিতে ধরা পরে ফের আলোচনার কেন্দ্রে সুস্মিত-উষসী!
তাই তিনি আজও অতীতের সেই কঠোর শিক্ষকদের সম্মান করেন। তবে বকাবকি নয়, মূল্যবোধটাই ছিল আসল পাঠ হিসেবে দেখেন তিনি। সেই শিক্ষাই আজও পথ দেখাবে আর আগামীতেও। তাই নিজে যেমন কৃতজ্ঞ সেইসব শিক্ষকদের কাছে, আশা রাখছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এমন কিছু শিক্ষকদের সান্নিধ্য পাবে, যাঁরা একদিন শিক্ষার্থীকে বিশ্বের দরবারে আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা হতে সাহায্য করবে। আপনাদের কী মতামত, তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে?






