“এই সময় মাকে দরকার সব থেকে বেশি!” মানসিক-শারীরিক বিপর্যয়ে মিঠি, কিন্তু পাশে নেই পরিবার! কেন সব দায়িত্ব কৃশানুর কাঁধে? সংবেদনশীলতার নামে বাড়াবাড়ি, ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে ‘চিরসখা’! পরিবারের গা-ছাড়া ভাব আর কৃশানুর বাড়াবাড়ি নিয়ে ক্ষুব্ধ দর্শক!

স্টার জলসার ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) শুরুতে যে স্বাভাবিক ছন্দ আর সামাজিক গল্প বলার চেষ্টা করেছিল, সাম্প্রতিক পর্বগুলোতে সেই ভারসাম্যটাই যেন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মিঠিকে ঘিরে যে ট্র্যাক চলছে, সেখানে তার শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত আর মানসিক ভাঙন একসঙ্গে দেখানো হচ্ছে। সরাসরি কিছু না বললেও, পরিস্থিতি যে গভীর এবং অস্বস্তিকর, সেটা স্পষ্ট। এই ধরনের ইঙ্গিত পারিবারিক ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে দর্শকদের অনেকটাই ভাবিয়ে তুলছে, কারণ দিনের শেষে হালকা গল্প দেখার প্রত্যাশা নিয়েই বেশিরভাগ মানুষ টিভির সামনে বসেন।

আরও যে বিষয়টা চোখে লাগছে, তা হল পরিবারের ভূমিকা। এমন অবস্থায় মায়ের পাশে থাকার কথা, পরিবারের সদস্যদের আগলে ধরার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই দায়িত্ব প্রায় পুরোপুরি কৃশানুর কাঁধে। দর্শকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, মিঠির বাড়ির লোকজন যেন অদ্ভুত রকম গা-ছাড়া মনোভাব নিচ্ছেন! মিঠিও পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেছে, কথা বলছে প্রায় অপরিচিতের মতো! অথচ কৃশানুর সঙ্গেই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। এই আচরণ অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না।

কৃশানুর চরিত্র নিয়েও বিরক্তি বাড়ছে ধীরে ধীরে। শুরুতে তার পাশে দাঁড়ানো, সান্ত্বনা দেওয়া ভালো লাগলেও এখন একই সংলাপ আর একই ভঙ্গি বারবার দেখানোয় চরিত্রটা একঘেয়ে হয়ে উঠছে। নতুন কোনও মাত্রা বা পরিবর্তন না এনে শুধু তাকে সর্বক্ষণের ভরসা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা গল্পকে এগোনোর বদলে আটকে দিচ্ছে বলেই মত দর্শকদের। উপরন্তু, কয়েকদিনের পরিচয়ে এমন সব দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে, যা পরিবারের করার কথা, এই প্রশ্নটাও উঠছে বারবার!

মিঠির চরিত্রের বদলটাও দর্শকদের ভাবাচ্ছে। যে মিঠিকে আগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের সিদ্ধান্তে অটল দেখা যেত, এখন সে যেন আপোস করছে নিজের বেলায়। মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ হিসেবে তাকে দেখানো হচ্ছে, যার চোখেমুখে সারাক্ষণ প্রশ্ন, ‘কেন আমার সঙ্গেই এমন হল এটা?’ এই বদল বাস্তবসম্মত হলেও, বারবার নারী চরিত্রকে অসহায় অবস্থায় দেখিয়ে গল্প টানার প্রবণতা নিয়ে আপত্তি তুলছেন অনেকে। চরিত্রের শক্তি আর সম্মান বজায় রেখে এই ধরনের বিষয় দেখানো যায় কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

আরও পড়ুনঃ “বিনোদিনী দাসীকেও ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অপ’মানিত অসম্মা’নিত হতে হয়েছিল…আজ তাঁকে নিয়ে সাহিত্য, সিনেমা!” নটী বিনোদিনীর সঙ্গে শুভশ্রীর তুলনা টেনে সমালোচকদের ‘আজকের পণ্ডিত গণ’ বলে খোঁচা!

সব মিলিয়ে ‘চিরসখা’র সাম্প্রতিক ট্র্যাক নিয়ে দর্শকদের মনোভাব মিশ্র। সামাজিক বার্তা থাকতেই পারে, সংবেদনশীল বিষয়ও আসবে। কিন্তু সংবেদনশীলতার না পেরিয়ে গেলে তা আর স্বস্তির বিনোদন থাকে না। অনেকেই এখন আশা করছেন, নির্মাতারা আবার গল্পকে একটু মানবিক দিকের দিকে ফিরিয়ে আনবেন, যেখানে সম্পর্কের উষ্ণতা আর পারিবারিক বন্ধন বেশি করে ধরা পড়বে। অন্ধকারের ইঙ্গিত থাকবে, কিন্তু আলোটা যেন হারিয়ে না যায়। এই প্রত্যাশাতেই এখনও ধারাবাহিকটার সঙ্গে রয়ে গেছেন দর্শকরা।

You cannot copy content of this page