“পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি, আমার জায়গায় থাকলে অন্যরা করে ফেলত, কিন্তু আমি পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা।” ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সাফল্যের মাঝেও অপূর্ণতার কথা বললেন দিব্যজ্যোতি! কী ছিল তাঁর না-পারার কারণ?

বাংলা টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে ‘দিব্যজ্যোতি দত্ত’ (Dibyojyoti Dutta) অত্যন্ত পছন্দের একজন অভিনেতা। জি বাংলার ‘জয়ী’ ধারাবাহিকের হাত ধরে, দিব্যজ্যোতি অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ। এরপর একাধিক ধারাবাহিকে নিজের অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। শেষবার পর্দায় তাঁকে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকেই দেখা গেছে। তবে তিনি জানিয়েছেন যে বড়পর্দায় পা রেখেছেন বলে, ছোটপর্দাকে অবজ্ঞা করবেন না। কারণ ছোটপর্দাই তাঁকে আজ অভিনেতা বানিয়েছে। তাই ভবিষ্যতে কোনও ভালো চরিত্র পেলে অবশ্যই ছোট পর্দায় ফিরবেন তিনি।

এই মুহূর্তে অবশ্য তাঁকে নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে, তাঁর বড়পর্দার প্রথম কাজ ঘিরে। সৃজিত মুখার্জির ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’-তে শ্রীচৈতন্যের চরিত্রে অভিনয় করে সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এই চরিত্রের জন্য যে প্রস্তুতি তিনি নিয়েছিলেন, তা অনেকের কাছেই ছিল অবিশ্বাস্য। দিনের পর দিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাবারদাবারে সংযম আর মানসিকভাবে চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা মিলিয়ে প্রায় ২৭ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন তিনি। দর্শকের প্রশংসা পেয়ে আজ তাঁর মনে হচ্ছে, এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলো অযথা ছিল না।

প্রসঙ্গত, দিব্যজ্যোতির কাজের ধরন বরাবরই এমন! যা করবেন, মন দিয়ে করবেন। শুধু অভিনয় নয়, জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও তিনি এই মনোভাবেই এগোতে ভালোবাসেন। আর সেই কারণেই কলেজের পড়াশোনা শেষ করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। এই বিষয়টা নিয়ে তিনি কোনও অজুহাত খোঁজেন না, বরং নিজের সীমাবদ্ধতাকে সোজাসাপ্টা ভাবে মেনে নেন। কাজের চাপ, সময়ের অভাব মিলিয়ে একটা পর্যায়ে এসে পড়াশোনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল তাঁকে। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি দিব্যজ্যোতি স্পষ্ট ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেছিলেন, “কলেজ শেষ করতে পারিনি আমি। আমার জায়গায় থাকলে অন্য কেউ হয়তো করে ফেলত, কিন্তু আমি পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা। সেই সময় এত কাজের চাপ, তবে কাজকে দোষ দিচ্ছি না… আমাকে বলা হয়েছিল ডিস্টেন্সে গ্রাজুয়েশন করতে। ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস নিয়ে পড়ার পরামর্শও পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি চাইনি, ওইভাবে পড়তে। নিয়মিত আমায় কলেজ করতে হচ্ছে না, শুধু পরীক্ষা দিলেই হবে ঠিকই। তবে, সব কিছুর একটা পদ্ধতি বা ভালোলাগার ব্যাপার রয়েছে।

আমার কাছে ওপেন ইউনিভার্সিটির বিষয়টা ভালো লাগে না। সারাদিন কাজ করছি, ফাঁকা পেলে একটু ক্রিকেট খেলছি বা জিম করছি। দিনের শেষে যেটুকু সময় পড়ার জন্য পাচ্ছি, সেটা পর্যাপ্ত নয় বলেই মনে করেছিলাম। আমার মাও মনোবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেকেন্ড ইয়ারে উঠতেই আমি চলে আসায় তাকেও পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে। মা-ও চাইলে ওপেন ইউনিভার্সিটিতেই পড়তে পারত। কিন্তু আমার মতো ভাবনায় সে পড়াশোনা ছেড়েছে।”

আরও পড়ুনঃ বউকে রেখে অন্য নারীকে বিয়ে! হঠাৎই বিয়ের মণ্ডপে হাজির প্রথম স্ত্রী! দেখে হতবাক টলিউডের নায়ক, কী হল তারপর?

তাঁর এই স্বীকারোক্তির মধ্যেই ধরা পড়েছে একজন বাস্তব মানুষ, যিনি সাফল্যের আড়ালে নিজের অপূর্ণতাকেও লুকোতে চান না। দিব্যজ্যোতি জানেন, জীবন সবসময় নিখুঁত পথে চলে না। তবু অভিনয়কে কেন্দ্র করেই তিনি নিজের জায়গা তৈরি করেছেন আর সেই পথচলায় ছোটপর্দা হোক বা বড়পর্দা, ভালো চরিত্র পেলে যেকোনও মাধ্যমে ফিরতে তাঁর আপত্তি নেই। এই মানসিকতাই হয়তো তাঁকে দর্শকের কাছে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

You cannot copy content of this page