রাসবিহারী থেকে গড়িয়াহাটের দিকে হেঁটে যাওয়ার পথেই পড়ে একটা বেসরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালের উল্টো দিকে তাকালেই দেখা মিলবে বছর ১৯-এর সদা হাস্যময় মুখের। ছেলেটার নাম সাগর। ভাতের হোটেল চালায় সে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে ছোট বোন ও কাকা-কাকীকে নিয়ে তার সংসার। তাই বড্ড কম বয়সেই জীবনের হাল ধরতে হাতে তুলে নিতে হয় হাতা খুন্তি।
সম্প্রতি তাঁর দোকানে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। রসিয়ে দুপুরের খাবার খেতে সেখানে হাজির হন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। কথা বললেন তাদের সঙ্গেও, যারা সাগরের কাছে রোজ খেতে আসেন। কী বলছেন তারা? আর উনিশ বছরের সাগর কী ভাতের হোটেলের পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে?
মাধ্যমিক পাশ উনিশ বছর বয়সী সাগর কোর্স করেছিলেন আইটিআইয়ের। কিন্তু চাকরি করতে চায়না সে। কারণ তাঁর দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিজের একটি রেস্টুরেন্ট খোলার। সাগরের বাবার স্বপ্ন ছিল তাই। এখন সেই স্বপ্নের হাল ধরেছে বছর উনিশের সাগর। মনে মনে সেই স্বপ্নের রেস্তোরার নামও ঠিক করে রেখেছে সে। নাম দেবে সন্তোষ রেস্টুরেন্ট। সাগরের বোন এখন ক্লাস নাইনে পড়ে।কিশোর স্বপ্ন দ্যাখে নিজের বোনকে বিদেশে পড়তে পাঠাবে।
সাগরের বয়স যখন তেরো বছর তখন অসুখে ভুগে মারা যান তাঁর মা-বাবা। এহেন কঠিন পরিস্থিতিতে সাগরের কাকু-কাকিমা তাঁকে ও তাঁর বোনকে মানুষ করার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সাগরও বোঝে গরিব কাকু-কাকিমার পাশে দাঁড়ানো তাঁর কর্তব্য। আর তাই কলকাতায় বাবার ভাতের হোটেল চালানোর ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন কিশোর। বছর দেড়েক আগে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই হাড়ভাঙা পরিশ্রম শুরু করে সাগর।
আরো পড়ুন: আমিই বিষ খাইয়েছি পরাগ দা’কে! সাঁড়াশি চাপে অপরাধের কথা স্বীকার করে নিল প্রতীক্ষা
সাগরের কাছে গ্ল্যামার নেই, নেই ইউটিউবারদের ভিড়। আর তাই সে এখন সবার থেকে আড়ালে। নিজেই লড়াই সে লড়ে চলেছে ক্রমাগত। একদিন সে ঠিক স্বপ্ন পূরণ করবে। আর সেই অপেক্ষায় দিন গুনছে কলকাতার পাইস হোটেলের কিশোর সাগর।