Birendra Krishna Bhadra: বাঙালির দুর্গা পুজো শুরুই হয় তার উদাত্ত কন্ঠের চন্ডীপাঠ দিয়ে অথচ জানেন কি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র শেষ বয়সে কতটা কষ্ট পেয়ে চলে গেছিলেন স্বর্গলোকে? পড়লে চোখে জল চলে আসবে
মহালয়ার দিন সকালে এঁনার কণ্ঠ না শুনে বাঙালি দেবীপক্ষের সূচনা হয় না তিনি হলেন কবি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ১৯৩১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এখনো সেই ভারী কন্ঠে আশ্বিনের শারদ প্রাতে শুনলেই তার কথা মনে পড়ে যায় বাঙালির। তবে এই কবি র ইতিহাস কি ছিল। কেমন করে এই ঐতিহাসিক লোক পাঠিয়ে সূচনা এসব কিছু নিয়ে আলোচনা করব।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। ১৯৩০-এর দশক থেকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিওয় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন। এই সময় তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনাও করেন।
১৯০৫ সালে চৌঠা আগস্ট উত্তর কলকাতার আহিরী তলায় জন্ম হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের। তার বাবা ছিলেন প্রায় রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। নিম্ন আদালতে দোভাষীর কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ছোট থেকেই স্মৃতিচারণা ছিল খুব ভালো। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি লোক পাঠ করে সবাইকে অবাক করে দেয়।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।
১৯৩০-এর দশকে তার কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওয়। এই সময় থেকেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন। আর সেই অনুষ্ঠান আজও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় শুনতে পাচ্ছে বাঙালি। এছাড়াও তিনি অনেকগুলি রচনা বলি এবং নাটকে লিখেছিলেন। তার লেখা রচনাবলী গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘হিতোপদেশ’,’বিশ্বরূপ-দর্শন’,’রানা-বেরানা’, ‘ব্রতকথা’ ‘সমগ্র’। তার লেখা দুটি নাটক হল ‘ব্ল্যাকআউট’,’সাত তুলসী’।
বেতারের জন্য প্রাণপাত করা এই এই সম্প্রচারককে শেষের দিকে কেউ মনে রাখেনি। সেই সময় স্টাফ আর্টিস্টদের পেনশন গ্রচিউটির ব্যবস্থা ছিল না। তাই প্রফিডেন্ট ফান্ডের সামান্য কিছু অর্থ নিয়ে অবসর নিলেন তিনি। তারপরে বেটার বিষয় নিয়ে রবীন্দ্র ভারতীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন কিছুদিন। কিন্তু আস্তে আস্তে যত বয়স বেড়ে গেছিল তার স্মৃতিশক্তি লোভ পেতে শুরু করেছিল। শেষ বয়সে সেভাবে আর কোন সম্মানই পাননি বেতার থেকে। ১৯৯১ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি বারবারই আক্ষেপ করতেন যে ‘ভাবতেই পারিনি সবাই আমাকে ভুলে যাবে?’ তবে তিনি নিজেই বলগেছেন , ‘আমায় ভুলে গেলেও বছরের একটি দিন আমাকে বাঙালি স্মরণ করবেই করবে।’