স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবহিক ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) ইতিমধ্যেই ধারাবাহিক প্রিয় বাঙালির ড্রয়িং রুমে পাকাপাকি স্থান দখল করে নিয়েছে। এমনকি শেষের কিছু সপ্তাহ টিআরপি তালিকাতেও দুর্দান্ত ফলাফল করছে এই ধারাবাহিক। সম্প্রতি গল্প এসেছে নতুন মোড়, আদালতে চন্দ্রের (Sandip Chakraborty) দ্বিতীয় স্ত্রী সোহিনী এসে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাদের বিয়ের। ফলে সত্যের পাল্লা কমলিনীর দিকেই ঝুঁকেছে, ফলে এতদিন ধরে বয়ে চলা এক বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেয়েছে সে।
প্রথম স্ত্রী এবং সন্তান বর্তমান থাকতে তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিন্ন না করেই, আরও এক সংসার গড়ে তোলে চন্দ্র। শুধু তাই নয়, প্রথম স্ত্রীকে মিথ্যে মৃ’ত্যুর খবর জানায়, দ্বিতীয় স্ত্রীর সমস্ত পৈত্রিক সম্পত্তি নয় ছয় করে যখন টাকার প্রয়োজন হয়, কুড়ি বছর বাদে আবার পুরনো সংসারে ফিরে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ার নাটক করে। দ্বিতীয় স্ত্রীর হঠাৎ সেখানে উপস্থিতি এবং অতীত ঘেটে কমলিনী চন্দ্রকে পুনরায় স্বামীর স্থান দিতে অস্বীকার করে।
চন্দ্র তার স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে, বিচ্ছেদ মামলা গড়ায় কোর্টে। মামলায় হেরে যাওয়ার পরেও চন্দ্র, বন্ধুর সাথে সম্পর্ক গড়ে তার সঙ্গে প্রতা’রণার মামলা করতে চায় কমলিনীর বিরুদ্ধে! ধারাবাহিকের চন্দ্র চরিত্রটা যেন একেবারে এক বিশেষ ‘প্রজাতি’। পৃথিবীতে যত দুর্লভ প্রাণী আছে, তার থেকেও বিরল হচ্ছে এইরকম মোটা চামড়ার মানুষ! যত বিপদ, যত কান্ড, যত কেচ্ছা—সব ঘটনার মাঝেও লোকটার মুখে না কোনও অপরাধবোধ, না কোনো চিন্তা।
মনে হয় যেন জীবনের সব কিছুই তার জন্য শুধুই হাওয়ায় ভেসে যাওয়া ধোঁয়া। ভাবতে বাধ্য করছে, বাস্তব জীবনে কি এমন নির্লিপ্ত মানুষ আসলেই পাওয়া যায়? তবে, এখানেই শেষ নয়। পাশে দাঁড়িয়েছে বড় ছেলে বুবলাই, যিনি ভুল চোখে দেখেও সেটাকে চুপচাপ মেনে নিচ্ছেন। আর চন্দ্রের মা তো আছেনই, মায়ের চোখে সন্তানের কোনো দোষই ধরা পড়ে না! ভুল হলেও তা ভুল নয়, বরং তাকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন সর্বদা। এই দুইজনের ‘অবিচল সমর্থন’ ছাড়া চন্দ্র বোধহয় এতদিনে উচিৎ শিক্ষা পেত!
এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও, তিনজনের এই অদ্ভুত আত্মতুষ্টি সত্যিই অবাক করে দেয়। বাস্তব জীবনে এরকম মানুষ কি আছে, যারা সত্য-মিথ্যার ফারাকই বুঝতে চান না? অনেকেই হয়তো মনে করবেন— হ্যাঁ, সমাজে এমন চোখ বুজে মেনে নেওয়া মানুষ রয়েই গেছে। কিন্তু তখনই প্রশ্ন জাগে, এরকম মানসিকতা কি একজনকে আরও বড় ভুলের দিকে ঠেলে দেয় না? চন্দ্রের মতো মানুষেরা শুধু গল্পের ভিলেন নয়, কিন্তু তাদের নির্লিপ্ততাও মাঝেমধ্যেই ভিলেনদের থেকেও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ “নাচ প্রফেশন হতে পারে না, এই ধারণা বদলাতে হবে!” “ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে, নৃত্যশিল্পী কেন নয়?”— নাচকে নিয়ে সমাজের ধ্যানধারণায় পরিবর্তনের ডাক তনুশ্রী শঙ্করের! নৃত্যশিল্পীদের নিচু চোখে দেখা প্রশ্ন তুললেন তিনি!
নিজের দোষ এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা, ভুলকে মেনে নেওয়ার অভ্যাস—এসবই এক সময় আশেপাশের মানুষকে হতাশ করে দেয়। আর তখন একটাই কথা মাথায় আসে, এরা কি সত্যিই নিজেদের মতোই বাকি পৃথিবীকেও নির্লিপ্ত ভাবে? দর্শকরা যতই বিরক্ত হোক, এই ধরনের চরিত্রই হয়তো গল্পকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে আসে। কারণ সমাজে সত্যিই কিছু মানুষ আছেন, যারা সব দেখে, সব জেনেও মুখে বন্ধ করে থাকেন। পার্থক্য শুধু একটাই— ধারাবাহিকে তাদের জন্য চিত্রনাট্যকার আছেন, বাস্তবে কিন্তু এমন মানুষদের বদলানোর মতো কোনও লেখক নেই।