“কালো শাড়ি পরা মেয়েটা একদম হি’জ’ড়া!” বন্ধুকে তীব্র অপমান নেটিজেনদের “অর্জুনকেও ‘বৃহন্নলা’ সাজতে হয়েছিল, মহাভারতের ইতিহাস ভুলে যাবেন না!” কটা’ক্ষকারীদের আয়না দেখালেন অভিনেত্রী এলফিনা মুখার্জি!

সমাজ মাধ্যমে একের পর এক তারকা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে অশা’লীন মন্তব্য বা কটাক্ষ আজ নতুন কিছু নয়। তবে অনেকেই এসব অপমানকে উপেক্ষা করলেও, অভিনেত্রী এলফিনা মুখার্জি (Elfina Mukherjee) এবার মুখ খুললেন সরাসরি। নিজের সহ-অভিনেত্রীকে নিয়ে করা এক ঘৃ’ণ্য মন্তব্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি দেখালেন, নীরব থাকা মানেই সব মেনে নেওয়া নয়। সাহসিকতার সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন, কটাক্ষ নয়, সম্মানটাই হওয়া উচিত মানুষের আসল পরিচয়। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছে এমন?

প্রসঙ্গত, বাংলা টেলিভিশনের অভিনেত্রী এলফিনা, নানান চরিত্রে অভিনয় করে ইতিমধ্যে দর্শকের মন জয় করেছেন। প্রথমে ‘জয়ী’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য পরিচিত পান তিনি। এরপর জি বাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ভুতু’তে ‘লেখা’-র চরিত্রে দেখা মিলেছিল এলফিনার। এছাড়াও অনেক উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক, যেমন— ‘গ্রামের রাণী বিনাপানি’তেও ‘শতরূপা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০২৩ সালে ‘সিঁড়ি’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দাতেও পা রেখেছেন বলেই খবর।

তবে, এই মুহূর্তে কাজের জন্য নয়, বরং অন্য একটি কারণে সমাজ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। এদিন একটি ভিডিও করে তিনি ক্ষোভ উগরে দিলেন এক সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীকে নিয়ে। ঘটনার সূত্রপাত, দীপাবলি উপলক্ষে একটি দোকানে গয়না কিনতে যাওয়া নিয়ে। সেখানে অভিনেত্রী একা জাননি, সঙ্গে ছিলেন ছোটপর্দার আরও এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মানসী সেনগুপ্ত। দু’জনে যদিও শাড়ি পরেই গিয়েছিলেন, তাও সমাজ মাধ্যমের কটাক্ষ পিছু ছাড়ল না তাদের।

সেই ভিডিওটা সমাজ মাধ্যমে প্রকাশের পর, একজন কমেন্ট করেন যে, “দুটোকেই তো অসহ্য লাগে। বিশেষ করে ওই কালো শাড়ি পরা মেয়েটা তো পুরোই ‘হিজড়া’ (তৃতীয় লিঙ্গ) দেখতে।” সহ-অভিনেত্রী তথা বান্ধবীর এমন অপমান চুপ করে বসে থাকতে পারেননি এলফিনা। তাই সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিও বানিয়ে, সেই সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীর প্রোফাইল সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, প্রথমত এমন অপমান কাউকে করা যায় না।

দ্বিতীয়ত, এই শব্দটা অপমানের জন্য ব্যবহার করার নয়। তাঁরা বরং সমাজের সেই বিশেষ শ্রেণী, যাঁদের অতীত লুকিয়ে আছে মহাভারতের ইতিহাসেও। তিনি আরও উল্লেখ করলেন, “এক সময় অজ্ঞাতবাসে অর্জুনকেও ‘বৃহন্নলা’ সাজতে হয়েছিল, পিতামহ ভীষ্ম পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছিল এক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যই! এইসব অবশ্য আপনাদের মাথায় ঢুকবে না। তবে ভবিষ্যতে কাউকে আঘাত করার আগে, কোন শব্দ প্রয়োগ করছেন একবার ভেবে নেবেন!”

আরও পড়ুনঃ “কাজের অজুহাতে বাড়িতে ডেকেছিল, একা যায়নি বলে চূড়ান্ত অপমান করে!” “ওঁকে চেনেন না, আমি চিনি…মানসিক সমস্যা নয়, এটা ওর চরিত্র!”— ঋজুর বিরুদ্ধে বিস্ফো’রক অভিযোগে মুখ খুললেন অলোকানন্দা গুহ! ফের বিতর্কে জড়ালেন অভিনেতা? ঠিক কী ঘটেছিল?

এলফিনা মুখার্জির এই প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অপমানের জবাব নয়, সমাজে চলতে থাকা মানসিকতারও প্রতিবাদ। তিনি দেখিয়ে দিলেন, ট্রোলিং বা কটাক্ষের মুখে নীরব থাকা নয়, প্রতিবাদই হতে পারে সবচেয়ে বড় সাহস। তাঁর বক্তব্য যেন একটাই বার্তা যে— মানুষকে তার রঙ, পোশাক বা পরিচয়ে নয়, তার কাজ ও আচরণে বিচার করা উচিত। সমাজ যদি এই শিক্ষাটা নিতে পারে, তবেই প্রকৃত অর্থে ‘মানবতা’র মর্যাদা রক্ষা পাবে।