‘বীথি মাসি’ রূপা গাঙ্গুলির মুড্ সুইং, কাজ ছেড়ে বাড়ি চলে গেলেন! এতগুলো মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ…! বিস্ফোরক অভিযোগ ‘মেয়েবেলা’র সদস্যের
দীর্ঘ অনেকগুলো দিন পর আবারও বাংলা টেলিভিশনে কাম ব্যাক করেছিলেন অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী। রাজনৈতিক ময়দান ছেড়ে আবারও টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে দেখে বেশ খুশি হয়েছিল বাঙালি দর্শক। কিন্তু রূপা গাঙ্গুলীর ঘর ওয়াপসি একেবারেই সুখের হলো না।
স্টার জলসার পর্দায় এই মুহূর্তে সম্প্রচারিত হওয়া নতুন ধারাবাহিক হচ্ছে মেয়েবেলা। শাশুড়ি বৌমার সম্পর্কের গল্প বলেছিল এই ধারাবাহিকটি। দীর্ঘদিন পর পর্দায় ফিরে প্রশংসাও পাচ্ছিলেন, আবার নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কটাক্ষও জুটেছিল অভিনেত্রীর। রূপা গাঙ্গুলী অভিনীত বিথীকা মিত্র চরিত্রটি দিনে দিনে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠছিল।
মেয়েবেলা ধারাবাহিকের পোস্টার গার্ল হিসেবে কামব্যাক করেছিলেন রূপা গাঙ্গুলী। বলা যায় তিনিই ছিলেন এই ধারাবাহিকের মূল চরিত্র। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি আলাদা প্রভাব ফেলতো। আর হঠাৎ করেই এই ধারাবাহিক ছেড়ে দিলেন তিনি। কিন্তু কেন? রূপা গাঙ্গুলী অভিযোগের সুরে জানান ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েও যেভাবে বধূ নির্যাতনকে ধারাবাহিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছিল যেভাবে তাঁর চরিত্রটাকে দিনে দিনে ঘৃণ্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাঁকে বলা গল্পের সঙ্গে বর্তমান চরিত্রের কোনও মিল না পেয়েই ধারাবাহিক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আর এবার রূপা গাঙ্গুলীর এহেন তুঘলকি আচরণের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন মেয়েবেলা ধারাবাহিকের এক ইউনিট সদস্য। জানালেন রূপা গাঙ্গুলীর এখানে হঠাৎ সিদ্ধান্তের ফলে ঠিক কত বড় বিপদের মুখে পড়েছিল মেয়েবেলা ইউনিট। ঠিক কতটা অনিশ্চয়তা কতটা শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল এই ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি সদস্যের মধ্যে। শুভময় বিশ্বাস নামে ওই ইউনিট সদস্য সোশ্যাল মাধ্যমে লেখেন-‘দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ আম জনতার কাছে ভয়ানক শকিং একটি অধ্যায়। আজ থেকে নয়, যুগ যুগ ধরে। কিন্তু সেই দ্রৌপদী যদি নিজেই অনেক মানুষের, শুধু বস্ত্র নয়। মান, সম্মান, পরিচয়, ডিগনিটি, এসব নিয়ে টানাটানি শুরু করেন, তাহলে সেটা কী ভালো দেখায়?’
তিনি লেখেন, ‘মেয়েবেলা সিরিয়ালটি শুরুর বহু আগে এর মূল গল্পটি গল্পকারের মুখ থেকে শুনে, নিজের নিজের চরিত্রের ব্রিফ জেনে নিয়ে তবেই প্রত্যেক অভিনেতা, অভিনেত্রী এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বীথিকা মিত্র চরিত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। উনি এই ধারাবাহিকে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিলেন অন্যদের থেকে, কারণ বীথিকা মিত্র বা বীথি মাসির চরিত্রে অভিনয় করতে এসেছিলেন “THE রূপা গাঙ্গুলী”’
বাংলা ধারাবাহিক সম্পর্কে বলা হয়, এখানে কোনো গল্প থাকে না। গরু নাকি গাছে ওঠে। তবে মেয়েবেলা শুরুর দিন থেকেই গরু, গাছ, এসবের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। আগামী দিনেও রাখবে। কিন্তু একটি নিটোল গল্প পড়ে, নিজের চরিত্রের ব্রিফ জেনেই উনি রাজি হন বীথিকা মিত্রর ভূমিকায় অভিনয় করতে। আজ তাহলে হঠাত করে কী হলো? আজ উনি কেন বলছেন বীথি মৌ এঁর প্রতি বড্ড নেগেটিভ… মেয়েবেলা রিগ্রেসিভ কন্টেন্ট সাপ্লাই করে না।
মেয়েবেলা টেলিকাস্ট হতে শুরু করার একেবারে গোড়ার দিকে বীথি মৌ এর জন্মদিন সেলিব্রেশানের সিকোয়েন্সে মউ কে প্রায় চড় মেরে বসে। হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিচে নিয়ে আসে। এক্কেবারে শুরুর এপিসোডেই বীথি মৌকে অসভ্য মেয়ে হিসেবে আখ্যা দেয়। মৌ যেন কোনো ভাবেই ডোডোর ছায়া না মাড়ায় সেই বক্তব্য পেশ করে। এই এত-শত সো কলড নেগেটিভ কান্ড কিন্তু বীথি শুরু থেকেই করে আসছে। তাহলে আজ হঠাত বীথি মউ এর প্রতি নেগেটিভ আচরণ করছে, এই কথা উঠছে কেন? কেন মনে হচ্ছে মেয়েবেলা যারা বা যিনি সৃষ্টি করেন, তারা বা তিনি অসভ্যতার পর্যায় নিয়ে গেছেন গল্পকে? কেন মনে হচ্ছে, বীথিমাসি নেগেটিভ হয়ে উঠছে দিন দিন। বীথিমাসি তো শুরু থেকেই মৌকে অপছন্দ করতো। শুরুর দিন থেকেই মৌ ওর চক্ষুশূল ছিল। মৌকে দিয়ে কৌশলে বাথরুম পরিষ্কার করার ঘটনা গল্পে ঢোকানোর বুদ্ধি কিন্তু দ্রৌপদী দিয়েছিলেন। এ কথা কী উনি ভুলে গেলেন? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে গল্পকারকে বলেছিলেন এরকম একটি সিকোয়েন্স করতে। মৌ এর ক্ষেত্রে বীথি প্রথম থেকেই নেগেটিভ ছিলেন, মৌ এর প্রতি বীথির আচরণ ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব থেকে শততম পর্ব অবধি একই আছে, তাহলে?
তিনি লিখেছেন, ‘মেয়েবেলা মূল গল্প থেকে একেবারেই সরে আসেনি। মেয়েবেলার মূল মন্ত্র ছিল মেয়েরা মেয়েদের শত্রু নয়। এইটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। একটা মেয়েই পারে আর একটি মেয়েকে উত্তরণের রাস্তায় নিয়ে যেতে, এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। মউ এঁর হাত ধরে বীথি মাসির সেই উত্তরণই তো ঘটবে। কীভাবে ঘটবে, কোন কোন ঘটনার মধ্যে দিয়ে ঘটবে, সেটাই তো মূল গল্প। উত্তরণ ঘটিয়ে দিলে তো ধারাবাহিক বন্ধ করে দিতে হয়। মউ এঁর সাথে দুর্বব্যহার করলে, তবেই তো একদিন মৌকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে বীথি মাসি কাঁদতে পারবে। বুঝতে পারবে, যে মেয়েটাকে তিনি দু চোখের বিষ ভাবতেন, সেই মেয়েটাই তাকে বীথিকা হিসেবে নতুন জন্ম দিলো। দস্যু রত্নাকর যদি দস্যুই না হলেন, তাহলে তার বাল্মীকি হওয়ার অধ্যায়, কেন মানুষ মনে রাখবে?’
কবে রূপা গাঙ্গুলী ধারাবাহিক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? এই বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এক মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা শুটিং এঁর মাঝপথে বললেন ওনার ভালো লাগছে না শুটিং করতে। এটুকু বলে উনি বাড়ি চলে গেলেন। গোটা মেয়েবেলা ইউনিট। তার প্রতিটা সদস্য , কী ভয়ানক বিপদের মুখে পড়লো উনি একবারও ভাবলেন না। সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে আমরা কী জবাব দেবো সে কথা মনেও আনলেন না। যদিও চ্যানেল সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের তো রোজ এপিসোড টেলিকাস্ট করতে হবে। তারাও তো মারাত্বক এক বিপদের মুখে গিয়ে দাঁড়ালো। উনি কারুর কোনো কথা কানেই তুলললেন না। পরের দিন চ্যানেল কতৃপক্ষ, মেয়েবেলার মূল রচয়িতা, প্রযোজক, পরিচালক সবাই ম্যারাথন মিটিং করলেন ওনার সাথে, ওনার বাড়ি গিয়ে। উনি সিধ্বান্ত নিলেন না। তখন আমরা জানি না বীথি হিসেবে উনি আছেন? নাকি নেই? আমরা দোলাচলে। উনি জানাবেন বললেন। ওনাকে পরের বেশ কিছু এপিসোড লিখে লিখে পাঠানো হলো, পরের গল্প পাঠানো হলো… এবং এক রাতের মধ্যে পাঠানো হলো, প্রায় যুধ্বকালীন তৎপরতায়। আমিও সেই যুধ্বের একজন সৈনিক। তাই আমি জানি কী ভয়ানক দিন দেখতে হয়েছে আমাদের গোটা ইউনিটকে। এটা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে যুধ্বই, বেঁচে থাকার যুদ্ধ।’
শুভময় বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘বীথিকা মিত্রকে ছাড়া কীভাবে মেয়েবেলার এপিসোড তৈরি করা যায়, সেই লড়াই করছি। টেলিকাস্ট বন্ধ হয়ে যাবে নাহলে। এত গুলো মানুষের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। এই যারা বলেন, টিভির গল্প অমুক, হয় বা তমুক হয়, তারা প্লিজ একবার আমাদের ফ্লোর গুলোতে এসে দেখুন। আমরা কীভাবে একটা শো এগিয়ে নিয়ে যাই। মেয়েবেলা প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিলো। ইউনিটের প্রতিটা মেম্বার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলো বলে তা হয়নি। কিন্তু গল্প তো এই কারণে, বদল হবেই। সমাজ মাধ্যমে যে কথা রটছে, তার পিছনের সত্যিটা অন্তত জানা উচিত সামাজিক মানুষদের। অর্ধ সত্য, মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর। বীথিকা মিত্রের চরিত্রে অভিনয়কারী মানুষটির শুরুর থেকেই তুঘলকি আচরণ ছিল। আজ না, ভালো লাগছে না, আজ না অনেক সিন, দিদি গো, ৭০/৮০ জন মানুষ, এবং তাদের পরিবার দু বেলা খেতে পায়, এই তোমার মেয়েবেলার জন্য। মুড সুইং এঁর জন্য ইউনিট এর কোন সদস্যের ৩ বছরের বাচ্চার দুধ বন্ধ হয়ে যায় দিদি। আপনি একটা গোটা ইউনিটকে বিপদে ফেলতে পারেন না। আপনি একদিন হঠাত বলতে পারেন না, আমি আর শুট করবো না মেয়েবেলা। এটা একটা কাজ দিদি। এত গুলো মানুষের পেট চলে এটা দিয়ে। আপনি আপনার মর্জি মত চলে গেলেন… ইউনিট এর কী হাল হলো খোঁজ নিয়েছিলেন?’
এই ইউনিট সদস্যের লেখার প্রতিটা ছত্রে উঠে এসেছে কি বিপুল কষ্ট করেছে মেয়েবেলার ইউনিট। তিনি লিখেছেন, ‘গোটা মেয়েবেলা ইউনিট নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলো… আমরা কেউ সরকারী চাকরী করি না।এভাবে দুম করে শুট অফ করে চলে যাওয়া যায়? আপনি যেদিন গেলেন, তারপর থেকে মেয়েবেলাকে জীবিত রাখার জন্য ইউনিটের প্রতিটি মানুষ কী অসম্ভব এফর্ট দিয়েছে আপনি জানেন? পেটের দায় দিদি। আপনি একসাথে এত এত লোককে পথে বসিয়ে বললেন অসভ্যতা হচ্ছে গল্প নিয়ে। নাহ……………… মূল গল্প এটাই ছিল। আপনার আসলে চরিত্র হিসেবেও কারুর সামনে নিচু করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আপনি বীথিকা মিত্রের চরিত্র হয়ে নিচু হচ্ছেন। রিয়েল লাইফে নয়। শুরু থেকেই এই সমস্যা হয়েছে আমাদের। বীথি একজন ডিপ্রাইভড মহিলা। কিন্তু ওনাকে কেউ কথা শোনাবে না? এ দুটো কী করে একসাথে সত্যি হতে পারে? আপনার বদলে অনুশ্রী দাস এলেন। শুধু এলেন না… এলেন…………দেখলেন এবং মেয়েবেলাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন। এটাই কী আপনার সত্তাকে আঘাত করলো? মেয়েবেলা থামবে না। কে আছে, কে নেই… এভাবে তারা ভাববে না।’