এক বছর আগেও খুশির হাঁড়ি ফিরি করে নিয়ে যেত মিঠাই। কিন্তু বর্তমান দিনে যা গল্প দেখানো হচ্ছে তাতে মিঠাইয়ের চোখে জল দেখে আর স্থির থাকতে পারছেন না দর্শকরা।এবার অত্যন্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে তবে মনে করা হচ্ছে যে লেখিকা কোন একটা উদ্দেশ্য তো এই গল্পটা দেখাচ্ছেন।
আমরা সকলেই জানি মোদক পরিবার এখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে ছেলে বনাম মেয়ে। ছেলেদের দাবি মেয়েরা স্পেস দিতে জানে না মেয়েদের দাবি হচ্ছে ছেলেরা স্পেস পেলেও কিছুই করতে পারে না, সেই বউকে ডাকতে হয় বারবার। মেয়েদের অতিরিক্ত যত্ন করা স্পেস না দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করে। সেজন্য ছেলেদের উচিত শিক্ষা দিতে এবার মেয়েরা নিজেদের কাজ নিজেরাই করছে, নিজেদের খাবার নিজেরাই বানিয়ে খাচ্ছে, সব কিছু ছেলেদের ওপর ছেড়ে রেখেছে।ছেলেরা প্রথম প্রথম খুব লাফালে ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে তাদের জীবনে মেয়েদের গুরুত্ব টা কোথায় কিন্তু একজন এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।
আজকের এপিসোডে যেটা হবে সেটা কখনোই কাম্য নয়। সিদ্ধার্থ মিঠাই বলে ডেকে ফেলেছিল আর ফ্রিজের চাবি খুঁজছিল।সেই ডাক শুনে মিঠাই থাকতে না পেরে যখন নীচে আসে, উচ্ছে বাবুকে ডিম ফাটানোতে সাহায্য করতে যায় তখন তোর্সা শয়তানি ছবি তুলে সকল কে দেখিয়ে দেয়। এরপর যখন ঠাম্মি আর দাদাই জিজ্ঞাসা করে তখন সিডি বয় পুরো দোষটা চাপিয়ে দেয় মিঠাইয়ের ঘাড়ে আর মিঠাই সেটা শুনে হতবাক হয়ে পড়ে আর তার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তে থাকে। উচ্ছে বাবু বলে মিঠাই নিজে থেকে হেল্প করতে এসেছিল, সে কিছু করেনি।
এই কথাটা শুনে খুব আঘাত পায়নি মিঠাই এবং তার সঙ্গে মিঠাইয়ের একনিষ্ঠ ভক্তরা যথেষ্ট আহত হয়েছে। তারা বলছেন এ তো যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর হয়ে গেল। সিদ্ধার্থের এতটাই এগো যে সবার সামনে বলতে পারল না যে আমিই ডেকেছি? এখন মিঠাই নিজেকে যখন শাস্তি দেবে বলে ওপরে উঠে যায় তখন আবার সবার সামনে চিৎকার করে বলছে মিঠাই একটা পাগল?
এই নিয়ে এক মিঠাই ভক্তের বক্তব্য পড়া যাক। তিনি লিখেছেন, ‘আজকের এপিসোড টা নিয়ে আমি খানিকটা না বেশ Disappointed.. এই যে স্পেস নিয়ে একটা ট্র্যাক আসলো এই ট্র্যাকের মূল বক্তব্যটা স্পেসশিপে করে মাথার ওপর দিয়ে মঙলে চলে গেছে।
গতকাল অবধি বোঝা গেলো একটা সাধারন দাম্পত্য কলহ নিয়ে হয়তো সুন্দর কোনো মেসেজ নিয়ে আসবে যেটা সবসময় মিঠাই তে হয়ে এসেছে।কিন্তু আজকের এপিসোড এর এই সিড আসলে সিদ্ধার্থ মোদক নয়।এই মেরুদণ্ডহীন কখনো আমাদের সেই ব্যাক্তিত্ববান পুরুষ নয়।
আগের এপিসোডগুলোর ছোট ছোট ক্লিপস ও যে দেখেছে সে ও বুঝবে সেটা।কয়েকটা ডায়লগ যে দেখেছে সে ও বুঝবে।
যে সিদ্ধার্থ বিয়ে মানতো না,মিঠাই এর সবকিছুতে ইরিটেট হতো কিন্তু তবু মিঠাই এর পাশে ঠিকই থাকতো প্রয়োজনে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও।নিজের ইগোকে পায়ে পিষে হলেও সে মিঠাই এর যত্নশীল মনোভাব, সততা,সরলতাকে সম্মান করেছে।
আজকের এই সিড আমাদের সেই সিদ্ধার্থ মোদক হতেই পারে না।কোনোভাবেই না।
যখন টেস সিড এর উপর অভিযোগ তুলেছিলো সে তার বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েছে তখনও কি মিঠাই কিচ্ছু বলেছে?বরং সিড তো নিজে থেকেই সম্পর্কের স্বচ্ছতার কথা বলে সবটা কনফেস করেছে।
এঞ্জিকে নিয়ে একটু জেলাস হলেও যখন শুনলো সে উচ্ছেবাবুর প্রাণ বাচিয়েছে তখন সে নিজে থেকে সরে যেতে চেয়েছে! মিঠাই এর মায়ের মৃত্যুর আগে ব্যংগালোর এ যে কনফারেন্স এর জন্য সিড গেলো তোরশার সাথে, মিঠাই চাইলেই কি সিনক্রিয়েট করতে পারতো না?সেটাই কি যুক্তিযুক্ত ছিলো না?অন্তত আমার মতো সাধারন যে কোন স্ত্রী হলে তো তান্ডব হতো। সেখানে মিঠাই বরং তোরশার ফাইলপত্র সিডকে নিজের ব্যাগে নিতে বলেছে সিডের আপত্তি সত্ত্বেও!
এছাড়াও এমন অনেক উদাহরন দেয়া যায় যেখানে মিঠাই সিদ্ধার্থকে সসম্মানে প্রয়োজন এর অধিক স্পেস দিয়েছে।অধিকারবোধ সংযত রেখেছে।
তাহলে সে মেয়েটাকে কোন যুক্তিতে বলা হচ্ছে সে স্পেস এর মানে জানে না?এতো বড় Audacity হয় কিকরে?বরং সিদ্ধার্থ নিজেই তো স্পেসটা দেয়নি।
বিয়ের পর থেকে মেয়েটা তার বরকে দেখে আসছে কলিগ+বন্ধু তোরশার সাথে অবাধে মেলামেশা।সে কষ্ট পেলেও স্পেস না দেয়ার মতে কিছু করেনি অথচ স্পোকেন ইংলিশ ক্লাসের পার্টনারের কল আসা নিয়ে সিড বিরক্ত হয়েছে।সিনেমা দেখতে যাওয়া নিয়ে রাগ করেছে,পার্টনার এর গার্লফ্রেন্ডকে প্রপোজ করার রিহার্সাল দেখে মারতে উদ্যত হয়েছে পুরো বিষয়টা না জেনে।কাজের চাপে দেরী করে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত শ্রান্ত মেয়েটার ওপর চেঁচামেচি করেছে।
যে মেয়েটা হাজার অপমান সহ্য করে কোনোরকম প্রতিদান পাওয়ার আশা ছেড়ে সম্পর্কটাকে সম্মান করে একতরফাভাবে দায়িত্বকে পালন করে গেছে তাকে কেন এতোটা দূর্বল ভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে?মিঠাই এর ব্যাক্তিত্বকে কি আরো শক্ত,পরিণত দেখানো যেতো না?কেন গোপিবাহুর মতো সব করেও সব সহ্য করা লাগবে?কেন ওর প্রতিবাদটা কমেডিতে পরিণত হবে?
রাজীবদা কে সবসময় একটা পরিণত চরিত্র হিসেবে দেখে এসেছি। হাসিঠাট্টা করলেও ভুল-সঠিকের বিবেচনাবোধ সম্পন্ন এবং সম্পর্কের গভীরতা বুঝতে পারা এক বাঙালী পুরুষ!
দাদাই-ঠাম্মির ছেলেমানুষী টা তাদের চরিত্রের সাথে বেমানান মনে হচ্ছে যেখানে তারাই পুরো পরিবারটাকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছিলেন তারাই কিনা এমন আচরণ করছেন যার ফলস্বরূপ নাতি-নাতবৌ,নাতনী-নাজামাই এর মধ্য একটা ভুলবোঝাবুঝি তৈরী হচ্ছে!
রাতুল ছিলো সবচে আলাদা,অন্যরা যেসব বিষয় বুঝতো না সে বুঝতো। সেটা নিজের ব্যপার হোক বা অন্যদের ব্যপার হোক।সে সবসময় একটা ঘটনায় উভয়পক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করতো হটাত করে তার বিবেচনাবোধ পাড়ার দোকানে কচুরী-জিলিপি খেতে চলে গেলো!
এতো কিছুর ভীড়ে স্যান্ডিজি যাকে পরিণত পুরুষ চরিত্রগুলো আন্ডারএস্টিমেট করতো সে ই নিজের চিন্তা-চেতনা কে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।সত্যিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সকলকে!
মেয়েগুলো প্রতিবাদ করলেও ঠিকই ভেতর ভেতর কনসার্নটা পুষে রেখেছে। কে বাইরের খাবার খায় না,কার শরীরের ক্ষতি। এসব ভেবে নিজে খেতে পারছে না।অথচ পুরুষ চরিত্রগুলো ঠিকই খেয়ে নিচ্ছে।
মেয়েদের মনোলগ এ যা বোঝা গেছে ওরা ওদের করা প্রতিটি যত্নের পর্যাপ্ত মর্যাদা পাচ্ছেনা বলে একটু রেগেছে।চাইলেই এই রাগকে পানি করা ছেলেদের এক সেকেন্ডের ব্যপার।
স্যান্ডিজি এর মুখের ওপর বলা সত্যটা খুব ভালো লেগেছে।বউদের তালে তাল মিলিয়ে নাচতে হয় এই বাক্যটা অন্তত সিড এর মুখে মানায় না।কোনোভাবেই না!এই মিথ্যেটা কি না বললে হতো না সিদ্ধানন্দ?কে যেনো বলতো ” মিথ্যে বলাটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না!”তান্ডব নৃত্য কে করতো সেটার সাক্ষী প্রতি সপ্তাহে টিআরপিতে টপারশিপ এনে দেয়া এই দর্শকমহল!
মিঠাই এর নাচ দেখে তো একেবারে অন্যজগতে চলে যেতো,এমনকি মিঠাই এর নাচের প্রতিভাকে কাল্টিভেট করারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলো।আমরা তো ওই ইচ্ছে নিয়ে ট্র্যাক আসবে বলে ভেবেছি,ফ্যান ফিকশনে কিন্তু খুব সুন্দরভাবে সেই ট্র্যাককে বর্ননাও করেছেন অনেকে!
যাই হোক সিদ্ধার্থ মোদক চরিত্রের যে স্ট্যন্ডার্ড সেট করেছিলো সেটা থেকে অধঃপতন হওয়াটা মানতে কষ্ট হলেও প্রকাশে কষ্ট হচ্ছে না।
চুপিচুপি গ্যাসের ওষুধটা দেয়ার যে চেষ্টা নন্দা করেছে সেটাকে যত্ন বলে,ঠিক ঘরের খাবার অফিসের জন্য দেওয়ার মতোই!একে স্পেস দেওয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলা পাগলামি!
তেলমশলা খেতে না পারা প্রিয়জনের জন্য মুখ ফ্যকাশে করে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ কে যত্ন বলে,এটাকে যে আগলে রাখতে পারে না তার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার স্পেসশিপে করে মঙলে চলে যাবে!
চাপা স্বভাবের মেয়েটা কখনোই কিছু প্রকাশ করতে পারে না সেটা জেনেও যে রাগ পুষে রাখে তার কাছে কি আদৌও অনুভূতি প্রকাশ করার ইচ্ছে জাগবে কখনো?
আর মিঠাই এর হাতের রান্ন খেয়ে ব্যাড হ্যবিট হওয়ার কথা বলছিলো সিদ্ধার্থ!হ্যাবিট বললে বিষয়টা নিয়ে ঘাটাতাম না,ব্যাড হ্যাবিট কেন রে?
বউ ব্যবসার কাজ সামলেও যে যত্ন করে রান্না করে খাওয়ায়, সেটা খেয়ে যে উদ্ধার করো সমগ্র নারীজাতিকে সেটা কেন খারাপ অভ্যাস হবে?চুপিচুপি রান্না করতে বলবে ভাবছে অথচ ওই এফোর্টটাকে সম্মান করতে ইগোতে বাধছে।এতোই ইগো!
যে কনসার্ন দেখানোকে দূর্বলতা ভাবো সে কনসার্ন এর অভাববোধও ভোগাচ্ছে এবং তাও ওই স্ত্রীরই দোষ।যত্ন করলেও দোষ না করলেও দোষ!
ফ্রিজে লক করেও চাবিটা রেখে গেছে, নিচে আসলে ভালো হতো বলে গোপালকে বলা হচ্ছে মিঠাইকে পাঠাতে অথচ ডেকেছে সেটা স্বীকার করার গাটস নেই।(এই অংশে ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডটা সিডলর ওপর সব রাগ উড়িয়ে দিয়েছিলো,আবার কষ্ট করে রাগটা ধরে এনেছি।মিঠাই এর মতো আমিও সিড এর উপর রাগ ধরে রাখতে পারিনা)যেভাবে তাকান হচ্ছিলো আর গলার স্বরের যে অবস্থা ছিলো আশা করেছিলাম বউকে সরি না বলুক অন্তত এটুকু স্বীকার করবে তোমায় ছাড়া আমি আসলেই অপূর্ণ। সব এলেবেলে লাগে। বললো না,ব্র্যান্ডের ইগো তো!
ডিম ভাঙার কায়দা দেখে ডিমটা নিজেই আত্মহুতি দেবে ভেবেছিলো!হেল্প করতে দেখলে তুমিও কেস খাবে, আমিও কেস খাবো!কেস খাওয়ার খুব ভয়!
জনাব সিদ্ধানন্দ কে বলছি : আপনি কি জানেন দিনদিন যাচ্ছে তাই রকমের মন খারাপ করে দিচ্ছেন? এই সিদ্ধার্থকে তো আমরা দেখতে চাই নি,এর চেয়ে তো তো বরং সেই বিয়ে না মানা গম্ভীরানন্দ চুপচাপ ছেলেটাই বেশ ছিলো!অন্তত এভাবে মিথ্যেটা বলতো না!আমরা যে সিদ্ধার্থকে সর্বান্তকরণে ভালোবেসেছিলাম সে আপনি নন।আপনার সাথে আড়ি!
আমার কথা হচ্ছে একজন মানুষ শুধু খিদে পেলে বউকে মিস করছে,বাকি সময়টা যা খুশি বলবে।তাও ভিত্তিহীন কিছু কথা।কারন তার ইগোটা বউ এর চেয়ে দামী।এই গল্পের গরু গাছে ওঠা হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ওই যে প্রত্যেকটা চরিত্রকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করেছিলো যে ওদের ব্যক্তিত্ব একটা আলাদা বেঞ্চমার্ক তৈরী করেছিলো যেটা এখন ঝাপসা হয়ে গেছে বিশেষ করে রিসেন্ট ট্র্যাকে!শুক্র-শনি-রবি সান্তনামূলক এপিসোড দিয়ে সোম-মঙল-বুধ অসাধারন কিছু এপিসোড দেখিয়ে আমাদের ডিরিম ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যাওয়াটা কি আসলে কোনো ট্রিকস?
এদিকে কোনো প্রোমো নাই, প্রচার নাই তবু টপার হচ্ছে! আসলে যে কি হচ্ছে!
বলবো না বলবো না করেও রচনা লিখে ফেলি!
মিঠাই এর মতো হয়ে গেছি,ইগনোর করবো ভেবেও পারিনা।ভালোবাসি কি না শো টা কে তাই আরকি’