বলিউডে (Bollywood) বাণিজ্যিক ছবির মূল ফর্মুলা বরাবরই বড় পর্দায় গড়ে ওঠা ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হিরো কেন্দ্রিক গল্প। সত্তরের দশকে অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাঙ্গরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজ থেকে শুরু করে আজকের দিনের ‘অ্যানিম্যাল’, ‘কবীর সিং’, ‘পাঠান’ কিংবা ‘জওয়ান’, সব ছবিতেই পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার মহিমা ফুটে ওঠে। রজনীকান্ত থেকে সানি দেওল কিংবা সালমান খান, হিরোর কাঁধে ভর করেই যেন গল্প এগোয়। পর্দায় পুরুষ চরিত্রের রুক্ষ মেজাজ, মারপিট, ক্ষমতা প্রদর্শন আর প্রেমের আগ্রাসী ধরনকেই বারবার অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
যেখানে নায়করা আর আগের মত সাহিত্য থেকে উঠে আসা কোনও চরিত্র নয়, বরং প্রতিহিংসা পরায়ণ রূপ। যারা দরকারে নারীর গায়ে হাতও তুলতে পারে। এই ট্রেন্ডের ধারাবাহিকতায় বাংলা ছবিও পিছিয়ে নেই। দেবের ‘প্রধান’ কিংবা অঙ্কুশের ‘মির্জা’, উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায় নায়কের রাগী এবং শক্তপোক্ত উপস্থিতিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। কোভিডের পর হলে দর্শক ফেরাতে যে এমন হিরোদেরই বেশি ভরসা করা হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। এমনকি মহিলা চরিত্রের ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে এমন চরিত্র।
আলিয়া ভাটের ‘গাঙ্গুবাঈ’ আর ‘জিগরা’ তার বড় প্রমাণ। যদিও এদের ব্যবসায়িক সাফল্য, ১০০০ কোটির ক্লাবে ঢোকার মতো নয়, তবু তারা নারীচরিত্রের ক্ষমতায়নকে এক নতুন ছাঁচে তুলে ধরছে। কিন্তু টেলিভিশনের কি অবস্থা? সেখানেও কি ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে এমন চরিত্র? এই বিষয় বাংলা ধারাবাহিকের দুই বিশেষ মানুষ সুশান্ত দাস ও লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যথাক্রমে নিজেদের মতামত জানালেন। “টেলিভিশনের জগতে যদিও ছবির মতো অতটা পুরুষ চরিত্রের আধিপত্য নেই। সেখানে মূল দর্শক নারী হওয়ায় গল্পগুলো সাধারণত নারীকেন্দ্রিক হয়।
তবে এই ট্রেন্ডও আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে। ‘তোমাদের রানী’-এর দুর্জয়ের মতো চরিত্র একেবারেই রাগী, পুরুষতান্ত্রিক অথচ জনপ্রিয়। সিরিয়ালে এখন আর শুধুই শাশুড়ি-বউমার খেলা চলছে না। পুরুষ চরিত্রদের নিয়েও নানা স্তরের গল্প লেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, নন-ফিকশন শোতেও এখন পুরুষের কনটেন্ট হিট করছে। বলা দরকার, সিরিয়ালের দর্শক যতই নারী হোক, তাঁরা শুধুই সহানুভূতির গল্পে সীমাবদ্ধ থাকেন না। তারা শক্তিশালী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ চরিত্রও দেখতে চান।
ঋষি কৌশিক, যশ দাশগুপ্ত, বিক্রম, এদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে টেলিভিশনের পর্দাতেও হিরোর নিজস্ব অবস্থান তৈরি হয়েছে। নারীপ্রধান গল্প হলেও পুরুষ চরিত্রের ভারিক্কি উপস্থিতি এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, অনেক সিরিয়ালে নারী চরিত্ররাও আগ্রাসী আর প্রতিবাদী। যেমন ‘গীতা এলএলবি’র সংলাপে উঠে এসেছে নায়িকার মুখে আইন ও হাতের মার।” লীনার কথায়, “ছবির বাজারে দর্শক এখনো অলীক, সুপারহিউম্যান পুরুষ চরিত্রেই বেশি আকৃষ্ট। কারণ সিনেমা বাস্তবতা নয়, কল্পনার খোরাক।
আরও পড়ুনঃ “জীবন থেকেই তো সিনেমা, আর আমার জীবনটাও একেবারে সিনেমার মতো।”— শাশুড়ির চোখে ছিলেন ‘খারাপ লাইনের মেয়ে’! সন্তান জন্ম দিলে হয়তো মা বাঁচতেন না! মৌসুমী সাহার নীরব লড়াইয়ের গল্প চোখে জল আনবে আপনার!
‘পুষ্পা’, ‘বাহুবলী’, ‘আরআরআর’ এর চরিত্রগুলো বাস্তবের নয়, তবে এদের প্রতি মানুষের যে আকর্ষণ, তা এক ধরনের ফ্যান্টাসি থেকে জন্ম নেয়। আর সিরিয়াল তার ঠিক উল্টো, বাস্তবকে ঘিরে। দর্শক সিরিয়ালে নিজেদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান, এবং নায়িকাদের দেখে নিজেদের সমস্যাকে নতুন চোখে দেখতে শেখেন। তাই ছবি আর সিরিয়াল, দুটো জগৎ দুই মেরুতে দাঁড়ালেও, দুটোতেই বদলের হাওয়া বইছে। নারী ও পুরুষ উভয়ের চরিত্রই নতুন মাত্রা পাচ্ছে পর্দায়।”