শখে নয়, নিয়তি গীতা দে-কে নিয়ে এসেছিল অভিনয় জগতে! পর্দার এই দজ্জাল ভিলেনের জীবন সংগ্রাম কাঁদাবে আপনাকেও
একটি গল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলে গল্পের নেগেটিভ চরিত্রগুলি। আর তাই একটি গল্পে নেগেটিভ চরিত্রগুলির স্থান অতি আবশ্যক ও গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই এক চরিত্র বছরের পর বছর টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ্ করে চলেছিল। সিনেমার পর্দায় বরাবরই একজন দজ্জাল, ঝগরুটে, কুচুটে চরিত্রেই তাঁকে আমরা পেয়ে এসেছি। তিনি হলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী গীতা দে (Gita Dey)। কোনও সিনেমায় গীতার উপস্থিতি থাকা মানে নায়ক ও নায়িকার কপালে দুঃখ রয়েছে, এমনটাই মনে করতেন দর্শক। পর্দার এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী গীতা মায়ের বাস্তব জীবনের সংগ্রামের কথাই এবার দর্শকদের সামনে রাখা হল। ১৯৩১ সালের ৫ ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন গীতা দে।
জীবন সংগ্রামী গীতা দে
বাবা অনাদি বন্ধু মিত্র নাচ, গান অভিনয়ে মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে ছোট থেকেই প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর থেকে তালিম নিতে পাঠাতেন। তার কাছেই গীতা মা’র প্রথম নাচ, গান ও অভিনয়ের হাতেখড়ি। ১৯৩৭ সালে ‘আহুতি’ (Ahuti) নামের একটি বাংলা ছবিতে ভালো অভিনয় করায় পরে ‘দম্পতি’ (Dampati) ও ‘নন্দিতা’ (Nandita) ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। গীতার সঙ্গে একবার এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। তিনি একবার সিনেমা হলে ছবি দেখতে গিয়েছিলেন। শো-য়ের মাঝে যখন সিনেমা হলের আলো জ্বলে ওঠে। হঠাৎ দর্শকের নজরে পড়ে যান গীতা। বাস্তবেও তাঁকে দজ্জাল মনে করে মারমুখী দর্শক তখন তেড়ে আসে। কোনোক্রমে তাদের হাত থেকে কোনও মতে প্রাণে বেঁচে ছিলেন গীতা দে।
গীতার বাস্তব জীবন আসলে কেমন ছিল?
দর্শকের তিরস্কারই গীতার জন্য ছিল পুরস্কারের সমান। পর্দায় তিনি যেভাবে নিজের নেগেটিভ চরিত্র ফুটিয়ে তুলতেন, যা বাস্তব জীবনেও ছাপ ফেলে। পর্দার এই দজ্জাল গীতা বাস্তবে আসলে কেমন ছিলেন? গীতা দে জীবন সংগ্রামের কিছু কথা জানলে চমকে যাবেন! টানা ১৪ বছর পর্যন্ত তিনি সিনেমা ও থিয়েটার করেছেন। ১৫ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয় একজন ব্যবসায়ী অসীম কুমার দের সঙ্গে। বিবাহের পর ৫ বছর তিনি অভিনয় জগৎ থেকে দূরে ছিলেন। তারপর তিনি আবার অভিনয় জগতে ফিরে আসেন, আর তখনই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় শিশির কুমার ভাদুড়ির সঙ্গে।
কত বছর বয়সে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন গীতা?
অভিনেত্রী শিশির কুমারকে নিজের গুরু বলে ভাবতেন গীতা। তিনি মনে করতেন, তাঁর জীবনের পূর্ণতা তিনি এনে দিয়েছিলেন। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৮ বছর অভিনয় করেছিলেন স্টার থিয়েটারে। তারপর সেখান থেকে চলে আসেন কাশি বিশ্বনাথ মঞ্চে। তাঁর অভিনীত শেষ নাটক ছিল ‘বাদশাহী চাল’। পর্দায় যতই অন্যায় করা হোক না কেন, বাস্তবে তিনি ছিলেন খুবই সাধাসিধে স্নেহশীলা একজন নারী। গীতার বয়স যখন মাত্র পাঁচ, তখনই তাঁর বাবা মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তারপর মায়ের কাছেই মানুষ তিনি। গীতার মা ফের দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। গীতার দুই ভাই বোনও হয় কিন্তু পরিবারের প্রতি কোনও কর্তব্য না করেই গীতার নতুন বাবাও সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।
ছোট বয়সেই সংসারের দায়িত্ব গীতার কাঁধে
সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে গীতার মা থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন। মাকে সাহায্য করার জন্য মাত্র ছয় বছর বয়সে গীতাও চলে আসে অভিনয় জগতে। গীতার বিবাহ জীবনও সুখের ছিল না। অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সৎ শাশুড়ি পছন্দ করতেননা গীতাকে। তাই নিজের ছেলেকে শিমূলতলায় হাওয়া বদলে পাঠিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তিনি। তখন নিরুপায় হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন অভিনেত্রী। কিন্তু আইনত বিচ্ছেদ না ঘটার কারণে স্বামীর পদবী তিনি আজীবন বহন করে গিয়েছেন। গীতা দের সুপারহিট ছবি গুলির মধ্যে অন্যতম হল, ইন্দ্রাণী, মেঘে ঢাকা তারা, ডাইনী, দুই ভাই, তিন কন্যা, শুভ দৃষ্টি, বন্ধন, সাত পাকে বাঁধা, মৌচাক, দত্তা, পরিণীতা, চিরদিনি তুমি যে আমার, নৌকা ডুবি প্রমুখ।