বাংলা অভিনয় জগতে পাপিয়া অধিকারী (Papiya Adhikari) একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। সাধারণ মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি ‘বিবি পায়রা’র সেই গানের কথা। আশা ভোঁসলের কণ্ঠে গাওয়া সেই গান-কে ছবিতে জীবন্ত করে তুলেছিলেন অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী। ‘দেবীবরণের’ এই গান শুনলেই অবশ্য নাগিনীর সাজে নাচতে থাকা পাপিয়া অধিকারী চোখের সামনে ভেঁসে ওঠেন । পাপিয়া অবশ্য তার আগেই থিয়েটার যাত্রার মাধ্যমে বেশ খানিকটা পরিচিত নাম।
অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারীর জীবন কাহিনী
১৯৮৫ সালে রতিশ দে সরকার পরিচালিত “সোনার সংসার”-এর মাধ্যমে পাপিয়া অধিকারী চলচ্চিত্র জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। তার আগেই অবশ্য তিনি থিয়েটার/নাটকে বহু কাজ করে ফেলেছিলেন। পাপিয়া অধিকারী ১লা জানুয়ারি ১৯৭০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।পাপ্পা বা পাপিয়ার রক্তে অভিনয় বলা যায়। কারণ পাপিয়ার মা-বাবা কল্যাণী অধিকারী এবং শুধাংশু অধিকারী দুজনেই অভিনয় জগতে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন বলে সূত্রের খবর।
তিনি খুব ছোট বেলা থেকে মায়ের হাত ধরে থিয়েটারে পদার্পন করেছিলেন। কিছু না বুঝলেও মায়ের নাম করা সব চরিত্রে দাপিয়ে অভিনয় করাটা আমার কাছে যেন তখন স্বপ্ন। সেই সময় নামজাদা সব অভিনেতাদের শুধু কাছ থেকে দেখাই নয় তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা। তাঁর প্রথম সিনেমা সোনার সংসার(১৯৮৫)। এই সিনেমার শুটিং হয় টানা ৪০ দিন এবং সব শেষ তার হাতে আসে জীবনে প্রথম সিনেমা দিয়ে উপার্জন ৫০০০ টাকা। সেই সময়ে ছবিটা সুপার-ডুপার হিট হয়েছিল।
এরপর মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে দেবীবরণ, এটিও ছিল একটি সুপারহিট মুভি। এই সিনেমারই দুর্দান্ত আইটেম সং বিবি পায়রা সমস্ত জনগণকে মাতিয়ে তুলেছিল। এই সময় থেকেই বাংলা অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। পরবর্তী সময়ে একাধিক সিনেমা করেন তিনি। ‘শ্মশানে কাঁদে লক্ষী’ তে তিনি প্রধান অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চরিত্রের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। তিনি ২০১৯ সালে অমিতাভ ভট্টাচার্য পরিচালিত “১৭ সেপ্টেম্বর”, আমার মায়ের শপথ (২০০৩), প্রতিজ্ঞা (১৯৮৫), এবং ক্রেজি রোজ (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্যও পরিচিত।
‘রোজ’ চলচ্চিত্রে তিনি একজন কড়া পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তাঁর অভিনীত ছবিগুলি হল ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘স্বর্ণময়ীর ঠিকানা’, ‘মৌন মুখর’, ‘প্রতীক’, ‘পথে যেতে যেতে’, ‘নিশি বধূ’, ‘পতি পরম গুরু’, ‘মায়ের আদর’, ‘প্রবাহিনী’ এবং ‘মনের মাঝে তুমি’ তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এমন অনেক “যাত্রা পালা” আছে যা তার অভিনয়ের দমে হিট করেছে ।বাংলা ছবির পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও জনপ্রিয় পাপিয়া অধিকারী। ‘গাছকৌটো’, ‘চোখের তারা তুই’ এবং ‘গ্যাংস্টার গঙ্গা’-র মতো ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
শুধুমাত্র অভিনয় জগতি নয় নিজের জীবনে সংসারটাকেও তিনি কিন্তু সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছেন। ১৯৭০ সালে তিনি তমালকান্তি দে কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তার দুটি কন্যা সন্তান হয়। বড় কন্যা সন্তানের নাম সুচেতনা দে, তিনি একজন ভালো লিখিকা। এবং তার ছোট মেয়ের নাম সুনন্না দে, তিনি অভিনয় জগতের সাথেই যুক্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিয়ের আগেই বউ অদল ব’দল! আঁখিকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝিলিক! বদলাচ্ছে ঝিলিকের ভাগ্য
শুধুমাত্র অভিনয় জগত বা নিজের সংসার নিয়ে তিনি সারা জীবন ব্যস্ত ছিলেন তা নয় তার পাশাপাশি চিত্রনাট্য, লেখালেখি করা, চিত্র পরিচালনা করা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ কয়েক দশক বিনোদন জগতে কাটিয়ে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রেখেছেন পাপিয়া।