বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে যে সময়ে মাধুরী এবং শ্রীদেবীর রূপ এবং গুণের প্রশংসা করতেন সকলে সেই সময়ে আরো একজন গ্ল্যামার দুনিয়ার লাইফ লাইট কেড়েছিলেন তার নাম অভিনেত্রী অর্চনা জোগলেকর। বিজ্ঞাপনের দুনিয়া থেকে টিভির পর্দায় কাজ শুরু করে হিন্দি টেলিভিশন এবং ছবি দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু আচমকাই এই সবকিছু থেকে দূরে চলে গেলেন।
বলিউডের এই অভিনেত্রী তথা সুন্দরীর জন্ম নাগপুরে। তবে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন মুম্বাইতে। পার্সোনাল বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। তাই ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গেই তিনি বেশিরভাগ সময়টা কাটাতেন। ছোট থেকেই তার নাচের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তাই অর্চনার মা মুম্বাইতে তার নামে একটি নাচের স্কুল খুলে ছিলেন। এই অভিনেত্রী কত্থক নাচে পারদর্শী ছিলেন। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে থিয়েটারে অভিনয় করে দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী।এরপর মুম্বাইয়ের একটি ট্যালেন্ট শোতে তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিচারকরা। তারপরে তাকে আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি।
এই অনুষ্ঠানের পর তার কাছে একাধিক সিনেমার প্রস্তাব আসতে থাকে। বলিউডে হয়েছিল ১৯৯০ সালে। অনুপম খের, রেখা এবং রাজ বাব্বরের সঙ্গে সংসার ছবির হাত ধরে তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন। তারপর থেকে একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই বলিউডের একজন নামকরা অভিনেত্রী হয়ে যান তিনি। হিন্দি ছাড়া ওড়িয়া ও মারাঠি সিনেমাতে ও কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অর্চনা।
এই অভিনেত্রীর ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল ওড়িয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে দিয়ে। ওড়িয়া ইন্ডাস্ট্রির ‘সুনা চড়েহি’ছবি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম রুপালী পর্দার ছবি। এছাড়া তিনি দূরদর্শনে ‘ফুলবন্তী’ নামে একটি জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ধারাবাহিকের প্রযোজনা করেছিলেন ঊষা মঙ্গেশকর। লতা মঙ্গেশকরের গানের সঙ্গে একজন নিত্য শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অর্চনা।
অর্চনা জনপ্রিয় তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সংস্থা তার সঙ্গে কাজ করতে চাই তো।এর মধ্যে ‘পান পসন্দ’ ক্যান্ডির বিজ্ঞাপন ছিল খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এত জনপ্রিয়তার পরেও নিজের এত সুন্দর ক্যারিয়ার ছেড়ে একেবারে দেশের বাইরে চলে যান এই অভিনেত্রী। তার কারণ হিসেবে জানা যায় সেই সময় ‘স্ত্রী’ নামের একটি ওড়িয়া ছবির শুটিং করছিলেন অভিনেত্রী। তখন তার এক ভক্ত তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।তখনই সেই ভক্তের হাতে যৌ’ন হেনস্থার শিকার হতে হয় তাকে। আদালতে এই মামলাটি প্রায় দশ বছর চলেছিল। তারপরে ওই অভিযুক্তের ১৮ মাসের কারাদণ্ড হয়। আর এই ঘটনা অর্চনার মনে এমন প্রভাব ফেলেছিল যার কারণে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তার বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিল।
তারপরে তিনি আর ইন্ডাস্ট্রিতে সুরক্ষিত বোধ করতে পারেননি তাই দেশ ছেড়ে আমেরিকাতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি একটি নাচের স্কুল খোলেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার নাচের স্কুল থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তারপরে দীর্ঘদিন তিনি অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। তবে তার পরে আবার ২০১২ সালে ‘ম্যারেড টু আমেরিকা’ ছবিতে জ্যাকিশ্রফ ,শ্বেতা তিওয়ারি এবং রঘুবীর যাদবের সঙ্গে অভিনয় করেন। তবে সেই ছবি ফ্লপ হয়। তারপরে তাকে আর কখনো অভিনয় ফিরে আসতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে শোনা গিয়েছিল এই ছবির পরিচালকের সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তবে তার অনেক আগেই তার স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিল। নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে ক্যামেরার আড়ালে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন অভিনেত্রী। তাই পাপারাজ্জিরা হাজার চেষ্টা করেও সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না।