‘দেবদাস’-এর ছোট পারো’র চিরবিদায়, অমর চরিত্রের অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া!

হিন্দি সিনেমার সোনালি যুগের কথা উঠলেই নস্টালজিয়ায় ভেসে যান সিনেপ্রেমীরা। বড়পর্দায় কখনও দাদার স্নেহময়ী বোন, কখনও নায়িকার কাছের বন্ধু—এমন চরিত্রে যিনি বারবার ধরা দিয়েছেন, তাঁকে আজও মনে রেখেছেন বহু দর্শক। তাঁর হাসি, সংলাপ বলার ভঙ্গি, আর চেনা সেই সরল মুখের অভিব্যক্তি, সবই যেন আজও ভেসে ওঠে স্মৃতির পাতায়। কিন্তু এবার সেই চেনা মুখকে ঘিরে এসেছে এক দুঃসংবাদ, যা ভেঙে দিয়েছে পুরনো দিনের ভক্তদের মন।

মাত্র কয়েক বছরের শিশুকালেই শুরু হয়েছিল তাঁর অভিনয়ের পথচলা। তৎকালীন নাম ছিল ‘বেবি চাঁদ’। শিশুশিল্পী হিসেবেই তিনি দর্শকের নজরে আসেন এক কালজয়ী সিনেমার মাধ্যমে, যা আজও ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শুরুটা ছিল এমন এক কিংবদন্তি পরিচালকের হাতে, যাঁর সিনেমা মানেই ছিল শিল্পের অন্য মাত্রা। প্রথম ছবিতেই বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর একে একে হাতে আসে বলিউডের একাধিক বড় ছবির কাজ।

তাঁকে আবিষ্কার করেছিলেন স্বয়ং পরিচালক বিমল রায়। তাঁর পরিচালিত একাধিক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল এই অভিনেত্রীকে। বিশেষ করে এক ক্লাসিক চলচ্চিত্রে নায়িকার ছোটবেলার চরিত্রে তাঁর অভিনয় আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে। এছাড়াও রাজ কপূর প্রযোজিত ছবিতেও তিনি কাজ করেছিলেন, যেখানে ছোট্ট বয়সেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে গিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি বলিউডের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন, তবে নায়িকা হিসেবে নয়, বরং গল্পের আবেগময় চরিত্রগুলির প্রাণ হয়ে।

সত্তর ও আশির দশকে বলিউডের শীর্ষস্থানীয় নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে তিনি একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন। রাজেশ খন্নার সঙ্গে ‘অউরত’ ও ‘ডোলি’, সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে ‘নিশান’, আশা পরেখের বোনের চরিত্রে ‘অ্যায়ে দিন বাহার কে’ এবং হেমা মালিনীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ‘অভিনেত্রী’—প্রতিটি চরিত্রেই তিনি ছাপ ফেলেছেন। এ ছাড়াও ‘মনচলি’, ‘প্রেম নগর’, ‘অনুরাগ’, ‘বেইমান’ সহ বহু ছবিতে তাঁর উপস্থিতি দর্শকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালের ২৫ মার্চ নাসিকে জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী ছিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী হুসন বানো এবং পরিচালক আসপি ইরানির আত্মীয়। অবশেষে জানা যায়, সোমবার মুম্বইয়ের দাদার এলাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নাজ়িমা।

আরও পড়ুনঃ প্লুটো-মৌয়ের আশীর্বাদের আসরে মিঠিকে দেখে হতবাক প্লুটো! বাপের বাড়িতে কমলিনীর উপস্থিতি ঘিরে অস্বস্তি! কমলিনীর সিদ্ধান্তে মিঠির উপস্থিতিতেই অতীতের মুখোমুখি দু’জনে! মায়ের মতোই শক্ত অবস্থান মিঠির!

শেষ জীবনে তিনি দুই পুত্রের সঙ্গে দাদার এলাকায় বসবাস করতেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে থাকলেও, হঠাৎ তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই বলিউড মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া। এই খবরটি প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁর তুতো বোন, অভিনেত্রী জ়রিন বাবু। একসময়ের পরিচিত সেই ‘বোন’ ও ‘বন্ধু’ চরিত্রের মুখ, যিনি দর্শকের মন জয় করেছিলেন, আজ তিনি শুধু রয়ে গেলেন সেলুলয়েডের স্মৃতিতে।