“সতেরো বছর দামী জামা দেয়নি, ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসে বাবা গেলে আমি ইকোনমিতে…যোগ্য হলে তবেই আসন পাবে” খ্যাতির ছায়ায় দাঁড়াতে দিতেন না বাবা, প্রয়াত শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খানের কঠোর দর্শনেই বড় হয়েছেন পুত্র আরমান খান! কেমন ছিল তাঁর বাবার শিক্ষা?

ছোটবেলা থেকেই প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খানের (Ustad Rashid Khan) কঠোর অনুশাসনে বড় হয়েছেন, পুত্র ‘আরমান খান’ (Armaan Khan)। ঘরের মধ্যেই চলত সুর,তাল-লয়ের চর্চা আর সেখান থেকেই শুরু তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভিত্তি। এখনও খুব একটা জনপ্রিয়তা লাভ করতে না পারলেও, ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করছেন তিনি। তবে, সবটাই নিজের চেষ্টা আর প্রতিভার জোরে। চলতি বছরে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ছবি ‘গৃহপ্রবেশ’ ছবিতে গানও গেয়েছেন তিনি।

বাবার ‘আও গে যব তুম সজনা’ কিংবা ‘ঝিনি রে ঝিনি’র মতো গানে, সুরের পুনর্জীবন আজও মানুষকে মুগ্ধ করে। সেই ঐতিহ্যকে আধুনিক রূপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথেই হাঁটছেন আরমান, নিজস্ব কণ্ঠস্বর ও ব্যাখ্যা দিয়ে। এই প্রসঙ্গেই সম্প্রতি তিনি জানান, বাবা একজন এতবড় ব্যক্তিত্ব বলেই যে অনেক সুযোগ সুবিধা মিলবে, সেটা নয়। এমনকি বাবা বেঁচে থাকতেও কোনদিনও এটা চাননি যে তাঁর পরিচিতির উপর নির্ভর করে ছেলের নাম হোক।

ঠিক সেই জন্যই কোনদিনও কাউকে ছেলের জন্য সুযোগ চাননি। কাউকে ছেলের নামে সুপারিশ করেননি। এতে অবশ্য আরমানের আক্ষেপ নেই, তিনি বলেন যে বাবা বুঝতেন উনি বেঁচে থাকাকালীন যদি আমি পাল্লা দিয়ে গান গাইতে শুরু করি, তাহলে একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে আমায়। সবাই বলবে, বাবার মতো হচ্ছে না। তাই বাবা সব সময় পাশে থাকলেও, নিজের থেকে কোনও সুবিধা পাইয়ে দিতেন না।

আর আরমানেরও মতে, প্লেব্যাক করার থেকে বাবার মতো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকে থাকাটাই শ্রেয়। সেই জন্যই তিনি প্লেব্যাক কম এবং লাইভ শো বেশি করেন। বাবা ছোটবেলা থেকেই কোনোদিনই নিজের খ্যাতির ছায়তেও দাঁড়াতে দেননি ছেলেকে! উদাহরণস্বরূপ আরমান বলেন, “বাবা আমায় সতেরো বছর পর্যন্ত কোনও দামী জমা কিনে দিতো না। ফ্লাইটে নিজে বিজনেস ক্লাসে গেলেও, আমার জন্য ইকোনমির টিকিট করতেন। বলতেন যেদিন আমি যোগ্য হবো সেই জায়গায় যাওয়ার বা বাবার পাশে বসার, সেদিনই হবে।”

আরও পড়ুনঃ ‘তারাপীঠ দর্শন হলো জয় মা!’ সোনামণির খোলা পিঠের ট্যাটুতে আধ্যাত্মিক ইঙ্গিত প্রেমিক প্রতীকের! নায়কের মন্তব্যে বাড়ল কৌতূহল

আরমান বর্তমানে গান বাজনার সঙ্গে সঙ্গে, আধ্যাত্মিকতার দিকেও ঝুঁকেছেন। এই বছর প্রথম বাড়িতে দুর্গাপূজা করেছেন! তাঁর কথায়, “বাবা ধর্ম বিভাজনে বিশ্বাস করতে না। হিন্দু-মুসলিম নিয়ে কোনও ছুৎমার্গ ছিল না তাঁর। ওনার ইচ্ছে ছিল এই পুজোটা করার, তাই আমিই করলাম।” সব মিলিয়ে আরমানের জীবনযাত্রা, সঙ্গীতচর্চা ও মূল্যবোধের মধ্যেই যেন স্পষ্ট তাঁর বাবার গভীর ছাপ। উস্তাদ রাশিদ খান তাঁকে জনপ্রিয়তার শর্টকাট না দিয়ে শিখিয়েছিলেন পরিশ্রম, শৃঙ্খলা আর আত্মমর্যাদার মূল্য। বাবার নাম আলাদা আর নিজের পরিচয় আলাদা, এই বিশ্বাসই হয়তো একদিন তাঁকে সত্যিকারের শিল্পীর জায়গায় পৌঁছে দেবে।