“আগে বিচিত্রানুষ্ঠান ছিল বাঙালির সংস্কৃতির অংশ, আজ বাঙালি নিজের সেই সংস্কৃতিকেই ভুলতে বসেছে!” “সারা বছর জুড়ে লেগে থাকত অনুষ্ঠান, এখন আর প্রায় দেখাই যায় না!”— বর্তমান প্রজন্মের সাংস্কৃতিক দূরত্ব নিয়ে খেদ প্রকাশ সঙ্গীতশিল্পী জোজোর!

ছোটবেলা থেকেই সুর আর তাল যেন ছিল ‘জোজো মুখোপাধ্যায়’-এর (Jojo Mukherjee) জীবনের অঙ্গ। বাবা-মা দু’জনেই ছিলেন সঙ্গীত জগতের মানুষ, তাই তাঁর গানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠা যেন সময়েরই দাবি ছিল। তবে, প্রতিভাবান শিল্পী বাবা-মায়ের সন্তান হওয়া মানেই সাফল্যের শর্টকাট নয়, বরং সবসময় এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। নিজেকে প্রমাণ করার লড়াই, তুলনা আর প্রত্যাশার ভার— সবকিছুর মধ্যেই জোজো ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন, একান্ত নিজের পরিচয়ে।

গানের মঞ্চই ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। স্টেজ পারফরম্যান্স দিয়েই শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রা। পরে এল প্লে-ব্যাকের সুযোগ। জোজো জানেন, দর্শকের সামনে গান মানে শুধু সুর নয়, সেখানে প্রকাশ পায় গায়িকার ভঙ্গি, অনুভূতি, আত্মবিশ্বাস। কলকাতায় মহিলা মঞ্চ শিল্পী হিসেবে তিনিই প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন, যাঁর বিশেষত্ব ছিল গানের সঙ্গে শারীরিক ভাষার ব্যবহার। তবে সাফল্যের গল্পের আড়ালে জোজোর কেরিয়ারে ছিল বহু কাঁটাও। পছন্দ-অপছন্দের নানা অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও পরিণত করেছে।

শুরুর দিনে নিজের কণ্ঠ ও উপস্থাপন ভঙ্গি নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে, কিন্তু একবারও পিছু হটেননি। বরং প্রতিটি প্রতিবন্ধকতাকে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি। আজ তাঁর নামই মঞ্চের উচ্ছ্বাস, তাল আর পারফরম্যান্সের প্রতীক। এদিন এক সাক্ষাৎকারে মঞ্চ গায়িকার অভিজ্ঞতা থেকেই জোজো আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরলেন। তাঁর মতে, “আগে বিচিত্রানুষ্ঠান ছিল বাঙালির সংস্কৃতির অংশ, এখন আর প্রায় দেখাই যায় না। ছোট কোনও উপলক্ষ হলেই পাড়ায় পাড়ায় নানান রকমের অনুষ্ঠান হত সেই সময়।

শনি-রবিবার মানেই তখন কোথাও বায়োস্কোপ দেখানো হচ্ছে তো, কোথাও আবার শিল্পীদের এনে গান শোনা হচ্ছে। সারা বছর অলিতে গলিতে এরকম ছোটখাটো অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো। দুর্গাপূজার সময় ব্যাপারটা তো আলাদাই ছিল, উদ্বোধনী থেকে বিজয়া — সবেতেই তখন অনুষ্ঠান হতো। এখন সংখ্যাটা হাতে গোনার থেকেও কম। আমরা যে সময়টা বড় হয়েছি, তখন তো এত বিনোদনের মাধ্যম ছিল না। টেলিভিশন বলতে শুধু দূরদর্শন আর রেডিও বলতে আকাশবাণী, এর বাইরে লাইভ পারফরমেন্স এবং বিচিত্রানুষ্ঠানই ছিল মাত্র ভরসা।

আরও পড়ুনঃ ‘আমার নামে মিথ্যে কথা বোল না!’, রহস্যময় পোস্টে জল্পনা ছড়াল সারা সেনগুপ্ত, যিশু-নীলাঞ্জনা ডিভোর্স চর্চার মাঝেই কাকে হুঁশিয়ারি দিলেন সারা?

আজ বাঙালি নিজের সেই সংস্কৃতিকেই ভুলতে বসেছে, নতুন প্রজন্ম হয়তো জানি না এই শব্দটার মানে!” এই কথাতেই যেন লুকিয়ে আছে এক যুগের আক্ষেপ। পরিবর্তনের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের সেই সংস্কৃতি, যেখানে গান, অভিনয়, কবিতা, বায়োস্কোপ মিলেমিশে তৈরি করত এক উৎসবের আবহ। জোজো আজও বিশ্বাস করেন, যতই প্রযুক্তি এগিয়ে যাক না কেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগের বন্ধনই আসল সুর। আর সেই সুরটিই ধরে রাখতে চান তিনি— গানের মাধ্যমে, মঞ্চের মাধ্যমে, মানুষের হৃদয়ে।