বছর শেষের প্রাক্কালে দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে ২০২৫, জানান দিচ্ছে শেষ হতে চলেছে ২৪। একটু ভাবলে দেখা যাবে, প্রতিটা বছরের মত এই বছরও অনেক কিছু দেওয়া-নেওয়ার খেলা চলেছে। রাজনৈতিক জগত থেকে বিনোদন জগত সব জায়গাতেই এই ২০২৪ সাল এমন কিছু ছাপ ফেলেছে যা অবিস্মরণীয়। বিশেষত বাংলার বিনোদন জগতে ঘটেছে নক্ষত্রপতন। শ্রীলা মজুমদার থেকে শুরু করে মনোজ মিত্র অনেককেই হারিয়েছে টলিউড (Tollywood) ইন্ডাস্ট্রি।
মনোজ মিত্র:-
বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অভিনেতা ছিলেন এই ব্যক্তি। অভিনেতার যেকোনো চরিত্রের জন্যই ছিলেন পারদর্শী। উত্তম কুমারের সময় থেকে প্রসেনজিৎ বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। নাটকের মঞ্চ থেকে সিনেমার ফ্লোর, সব জায়গাতেই ছিল তার অভিনয়ের বিশেষত্বের ছাপ।
মনোজ মিত্র ১৯৭২ সালে ‘চাঁকভাঙা মধু’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। অভিনেতার বাবা ছোটবেলা থেকে কোনদিনই চাননি যে তিনি অভিনয় করুক।পরবর্তীকালে এই কিংবদন্তির অভিনেতার প্রবল ইচ্ছা ও চেষ্টায় তৈরী করেন নিজের নাটকের দল, নাম রাখেন ‘সুন্দরম’। এক সময় এই নাটকের দল সারাবিশ্বব্যাপী ৭০০-র বেশী নাটক করেন। পরবর্তীকালে এই অভিনেতার প্রসার ঘটেছে টলিউড জগতেও। সত্যজিৎ রায়, তপন সিনহা থেকে শুরু করে গৌতম ঘোষের মতো তাবড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। অভিনেতার অভিনয় জগতের উল্লেখযোগ্য কাজগুলি হল- ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘গণদেবতা’, ‘খারিজ’, ‘যুক্তি-তক্কো-গপ্পো’র মতন সিনেমা উপহার দিয়েছেন বাংলার দর্শকদের।
শ্রীলা মজুমদার:- চলতি বছরের গোড়ার দিকে অর্থাৎ ২৭শে জানুয়ারি এই টলি অভিনেত্রী পরলোক গমন করেন। শেষ তিন বছর ধরে মারণ রোগ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মেনেছেন তিনি। অভিনেত্রী ১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের পরিচালনায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে ‘পরশুরাম’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটান কিন্তু তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ছিল ‘একদিন প্রতিদিন’।
অভিনয় জীবনে তিনি নাসিরুদ্দিন শাহ, প্রয়াত স্মিতা পাতিল এবং শাবানা আজমির মতো বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান। অভিনেত্রীর চল্লিশ বছরেরও বেশি অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ৪৩টিরও বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। সত্যজিৎ রায়, শ্যাম বেনেগাল, মৃণাল সেনের মত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। অভিনেত্রীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল- ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘আকালের সন্ধ্যা’, ‘খারজি’, ‘মান্ডি’ এবং আরো অনেক। অভিনেত্রী অভিনীত শেষ সিনেমা ‘পালন’ টলিউডের দর্শকের উপহার দিয়ে গেছেন।
উৎপলেন্দু চক্রবর্তী:-
বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম উল্লেখযোগ্য পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী চলতি বছরের আগস্ট মাসে ৭৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক বরাবরই বামপন্থীতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। পরিচালকের মেয়ে আজকের দিনে অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী, নাম ঋতাভরী চক্রবর্তী।
১৯৮২ সালে চোখ সিনেমার মাধ্যমে টলিউড জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটান।পরিচালক সিনেমা পরিচালনা ছাড়াও সংগীত পরিচালনা এমনকি সিনেমার জন্য স্ক্রিপ্টও লিখেছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উৎপলেন্দুর বেশ কয়েকটি সিনেমা ফিচার ফিল্মের জন্য পরিচিত ছিল। সিনেমাগুলি হল- ‘ময়নাতদন্ত’, ‘দেবশিশু’, ‘চন্দনীর’ আরও অনেক।