“ও আমাকে মা নয়, দিদি বলে চিনত” সঞ্চালিকা লাজবন্তী রায় এবং অভিনেত্রী অঙ্গনার সাফল্যের আড়ালে এক অন্যরকম মা-মেয়ের গল্প! দুজনেই নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত, তবে ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্কটা কেমন?

বাংলা টেলিভিশনের ইতিহাসে কিছু নাম আছে যা আজও মানুষের মনে জীবন্ত, বিশেষ করে যখন কথা আসে গেম শো কিংবা রিয়ালিটি শোর। তেমনই একটি নাম হল ‘রোজগেরে গিন্নি’। এক সময়ে জনপ্রিয় এই শোটি দর্শকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। সঞ্চালিকার মধ্যে অন্যতম মুখ ছিল ‘লাজবন্তী রায়’ (Lajbanti Roy)। সেই সময় টেলিভিশন শো ছিল আরও বেশি প্রাণবন্ত আর দর্শকরা তাঁদের জীবনযাত্রার থেকে একটুখানি সময় বের করে শোগুলো দেখতে পছন্দও করতেন। তখনকার দিনে ‘রোজগেরে গিন্নি’ ছিল টেলিভিশন দর্শকদের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম।

এই রিয়েলিটি শোয়ের আগে বাঙালি ‘অ্যাঙ্কর’ শব্দের সঙ্গে তেমনভাবে পরিচিত ছিল না। এই শোতে লাজবন্তী রায়, মধুমন্তি মৈত্র এবং পরমা বন্দোপাধ্যায়ের সঞ্চালনা অনেককেই পরবর্তীতে এই পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত করেছিল। যদিও লাজবন্তী রায় টেলিভিশন শোয়ের জন্য বেশি পরিচিত, তাঁর জীবনটা কিন্তু সঞ্চালনার বাইরে আরও অনেক বড়। ছোটবেলায় অক্ষর জ্ঞান হওয়ার আগেই তিনি গান গাইতে শুরু করেন। ইচ্ছে ছিল গায়িকা হওয়ার। কিন্তু ঘটনাচক্রের সঞ্চালনায় আসা, তবে গানকে তিনি ছাড়তে পারেননি। পড়াশোনা আর কাজের মধ্যে বেশ একটা ব্যস্ততা থাকাকালীনই, খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর।

বিয়ে করার পর, যখন তাঁর মেয়ে অঙ্গনা রায় জন্ম নেয় তখন তিনি কাজের চেপে মেয়েকে নিজের মায়ের কাছেই আসানসোলের বাড়িতে রেখে আসেন। অঙ্গনা সেখানে প্রায় চার বছর ছিল। দিদার সঙ্গেই বেড়ে ওঠার স্মৃতি আজও মায়ের মনে গেঁথে আছে। লাজবন্তী রায় নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, “আমার অনেক ছোট বয়সে পড়াশোনা করতে করতেই বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমি কাজ নিয়েও খুব ব্যস্ত। মেয়ে হওয়ার পর, আমার মায়ের কাছেই চার বছর ছিল।

চার বছর পর যখন আমার কাছে নিয়ে আসি, দিদি মনে করত আমাকে! বরাবরই আমার মায়ের সঙ্গে অঙ্গনার একটা আলাদাই সম্পর্ক। আমার মাকে ‘বউ মা’ ডাকত আর তাকেই মা মনে করত।” লাজবন্তীর সঙ্গে আজ মেয়ে অঙ্গনার সম্পর্ক যে খুবই মধুর, তা অনেকেই জানেন। তবে, দিদার কাছে বড় হয়ে ওঠার এই গল্পটা অনেকটা বিশেষ। লাজবন্তী রায় আরও বলেন, “সত্যি কথা বলতে, আমার আর আমার মেয়ের একসঙ্গেই বড় হয়ে ওঠা। তবে, কখনওই ওকে শিখাইনি যে এই পেশাতেই আসতে হবে।

বরং অঙ্গনা নিজেই খুব অল্প বয়স থেকে ‘মডেল’ হওয়ার স্বপ্ন দেখত। স্কুলের অ্যাডমিশন টেস্ট চলছে, ওকে কী হবে সেটা জানতে চাওয়া হলে স্পষ্ট করে বলেছিল মডেল। বড় হয়ে আমাদের কথা শুনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে ঠিকই, তবে দিনের শেষে নিজের স্বপ্নটাকেই বেছে নিয়েছে আর আমরাও কোনও বাধা দেয়নি।” অঙ্গনা নিজের পথ বেছে নেওয়ার এই গল্পটা সত্যিই অন্যরকম। আজকের দিনে অঙ্গনা ‘ওয়েব সিরিজ’ এবং সিনেমার জগতে সফলভাবে কাজ করছে। অনেকেই জানে না, তাঁর প্রথম পর্দায় কাজ ছিল ‘আলো’ ছবিতে। সেখানে মুখ্য চরিত্রের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মেয়ের ছোটবেলায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ ছকভাঙা প্রেমেই প্রায় পঁচিশ বছর একসঙ্গে পথচলা লোপামুদ্রা-জয় সরকারের! যেখানে ভালোবাসা মানেই বোঝাপড়া আর সংগীতের সহযাত্রা! জানেন কি, দম্পতির রয়েছে সন্তান?

তারপর একটা লম্বা বিরতি, পড়াশোনা শেষ করেই পরপরই বেশ কিছু জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজে কাজ। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’, ‘পাপ’, ‘নষ্টনীড়’, ‘তানসেনের তানপুরা’, সবই তার কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। তবে, মা এবং মেয়ে দুজনেই নিজেদের জীবনকে এক অন্য রকমভাবে গড়েছেন। একদিকে যেমন লাজবন্তী রায়ের সঞ্চালনা ও কণ্ঠ ছিল অমুল্য, অন্যদিকে অঙ্গনা তাঁর অভিনয় দিয়ে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া সেই শিক্ষা, স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাসই অঙ্গনার পথচলার মূল শক্তি।

You cannot copy content of this page