“প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীদের রক্তজল করা অর্থের টিকিটে প্রতিপত্তিশালীরা আসল গুড় খেলেন…মেসির কাছে নয়, আগে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চান!” বাংলা আজ সারা বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র, যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের!

কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে আজকের দিনের ছবিটা এখন আর শুধুই একটি স্মৃতি নয়, বরং এক গভীর অস্বস্তির দলিল! বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ‘মেসি’কে (Messi Kolkata Visit) এক ঝলক দেখার আশায় বহু মানুষ মোটা টাকা খরচ করে মাঠে পা রেখেছিলেন। কিন্তু মাঠে ঢোকার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে পরিস্থিতির লাগাম কারও হাতে নেই! নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা দর্শকদের অভিজ্ঞতা, সব কিছুই যেন পিছনের সারিতে ঠাঁই পেয়েছিল। সামনে ছিল শুধু ক্ষমতা আর প্রভাবের প্রদর্শন, যেখানে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিলেন।

মাঠে মেসির প্রবেশ ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তা কেবল উত্তেজিত ভিড়ের ফল নয়, বরং দীর্ঘদিনের অভ্যাস হয়ে ওঠা এক ধরনের অব্যবস্থার প্রতিফলন। গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকরা প্রিয় খেলোয়াড়কে চোখে দেখবেন, এই ন্যূনতম প্রত্যাশাটুকুও পূরণ হয়নি! জায়ান্ট স্ক্রিনে ভরসা করে থাকা মানুষগুলো হতাশায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আর সেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মাঠজুড়ে। চেয়ার ভাঙা, বোতল ছোড়া, ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়া মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে পুলিশকেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে হয়!

এই ঘটনার পর শুধু সাধারণ মানুষই নয়, রাজ্যের সাংস্কৃতিক জগতের অনেক পরিচিত মুখও প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। টলিউডের একাধিক শিল্পী সমাজ মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অভিনেতা কৌশিক সেনের পুত্র ঋদ্ধি সেনের মন্তব্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। তিনি সরাসরি বলেছেন, এটা নিছক ব্যবস্থাপনার ভুল নয়, বরং লোভ আর ক্ষমতার দম্ভের স্পষ্ট উদাহরণ। তাঁর কথায় উঠে এসেছে, চাইলেই এই দিনটাকে মানুষের জীবনের এক সুন্দর স্মৃতি করে রাখা যেত কিন্তু তা করা হয়নি। কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় থাকা মানুষরা সাধারণ দর্শকের কথা ভাবতেই চাননি।

ঋদ্ধি সেনের বক্তব্যে আরও তীব্র হয়ে ওঠে যে প্রশ্নটা, কারা আসলে এই আয়োজনের কেন্দ্রে ছিলেন? তাঁর মতে, মাঠে ফুটবলের ঈশ্বরকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন মূলত ক্ষমতাবান মানুষজন আর তাঁদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠরা। আর যাঁরা রক্তজল করে উপার্জিত টাকায় টিকিট কিনেছিলেন, তাঁরা দেখেছেন ক্ষমতার প্রদর্শন, স্পনসরদের দাপট আর প্রচারের নেশায় ডুবে থাকা মিডিয়ার ভিড়। এই ছবি নতুন নয় বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন, দুর্গাপুজো হোক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলো হোক বা মেলা, বারবার নাকি কিছু হ্যাংলা মানুষদের জন্য একই গল্প ফিরে আসে!

আরও পড়ুনঃ ‘কম্পাস চরিত্রটা ওর জন্যই মনে থাকবে…এমন টমবয় চরিত্র খুব কম দেখা যায়, চরিত্রটা এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছে যে চোখ ফেরানো যায় না!’ সাজগোজ নয়, অভিনয়েই বাজিমাত পর্ণার! নতুন অভিনেত্রীদের ভিড়েও আলাদা স্টার জলসার ‘কম্পাস’! অভিনেত্রীর প্রশংসায় ভাসছে নেটপাড়া!

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা তিনি করেছেন, শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাওয়াটা কার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন? মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনা আন্তর্জাতিক মহলে মুখরক্ষা করতে পারে, কিন্তু দেশের বা রাজ্যের মানুষের মনে জমে থাকা ক্ষোভ কি তাতে মিটবে? মেসির কাছে দুঃখপ্রকাশ যতটা জরুরি, তার চেয়েও বেশি জরুরি সেই হাজার হাজার দর্শকের কাছে জবাবদিহি, যাঁরা অপমানিত বোধ করেছেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কীভাবে আটকানো হবে, সেটা না দেখলে আবারও বিশৃঙ্খলার কালিমা লাগবে বাংলার গায়ে।