বাংলা সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘শ্রীকান্ত আচার্য’ (Srikanto Acharya)। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নিজের গানে মুগ্ধ করে রেখেছেন অসংখ্য শ্রোতাকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের গান— প্রতিটি ধারাতেই তাঁর অনন্য ছোঁয়া আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সম্প্রতি তিনি পা রেখেছেন নাটকের মঞ্চেও, যেটা নিঃসন্দেহে তাঁর শিল্পীসত্তার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গানের পাশাপাশি অভিনয়ের মঞ্চেও তাঁকে দেখে উৎসাহিত তাঁর ভক্তরা, কারণ তাঁর প্রতিটি উদ্যোগের মধ্যেই থাকে এক স্বচ্ছ সৃজনশীলতা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শ্রীকান্ত আচার্য জানিয়েছেন, সংগীত তাঁকে যেমন গড়ে তুলেছে, তেমনি সমাজের পরিবর্তনগুলিও তিনি নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করেন। বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের আচরণ তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। তাঁর মতে, আজকের বাবা-মায়েরা সন্তানদের প্রতি যত্নবান হলেও কোথাও যেন সংবেদনশীলতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের সময় সন্ধ্যা হলেই, মা বাবারা বা বাড়ির বড়রা আমাদের সব বাচ্চাদের নিয়ে গোল করে বসে আনন্দমঠ বা শরৎচন্দ্রের সাহিত্য, নানান রকম গল্প পড়ে শোনাতেন।
আমরা হয়তো কিছুই বুজতাম না, তাও শুনতাম মন দিয়ে। কে কি বুঝল, সেটা নিয়েও আলোচনা চলত।” অতীতের সেই সহজ অথচ শিক্ষণীয় পরিবেশ এখন আর দেখা যায় না বলে আক্ষেপ করেছেন শিল্পী। তাঁর মতে, প্রযুক্তির যুগে সহজ উপায়ে সন্তানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে অভিভাবকরা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এখনকার চিত্র একেবারেই অন্যরকম,”বাচ্চারা বিরক্ত করলেই মা-বাবারা হয়ে মোবাইল ধরিয়ে দেয়। এতে বাচ্চারা চুপ করে যায় ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের বিকাশ কি হয়?”
এই কথার মধ্যেই রয়েছে বর্তমান সমাজের এক তীব্র বাস্তবতা। শ্রীকান্ত মনে করেন, জ্ঞানের আসল বীজ বপন হয় সাহিত্য চর্চায়, আলোচনায় এবং একসঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে। তাঁর মতে, অভিভাবকদের উচিত সন্তানের সঙ্গে কথোপকথনকে গুরুত্ব দেওয়া, কারণ সেটাই ভবিষ্যতের চিন্তাশক্তি ও মানবিকতার ভিত গড়ে তোলে। শুধু পড়াশোনা নয়, সাহিত্য, সংগীত বা সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণ তৈরি করার জন্যও দরকার পরিবারের ভূমিকা।
আরও পড়ুনঃ “সবার মা-বাবা হওয়া উচিত নয়, যোগ্যতা লাগে!” “সন্তান মা-বাবার দায়িত্ব, শুধু শারীরিক মিলন হয়েছে বলেই জন্ম দিলে হয় না, দায়িত্ব নিতে হয়!”— নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে অকপট রিনি বিশ্বাস!
তাঁর এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে এক শিল্পীর গভীর সামাজিক বোধ। তিনি তাই শুধু সংগীতের মানুষ নন, সমাজের পরিবর্তন, মানবিকতার ক্ষয় আর সাংস্কৃতিক দূরত্ব নিয়েও ভাবেন। শ্রীকান্ত আচার্যের কণ্ঠ যেমন মুগ্ধ করে, তেমনি তাঁর ভাবনার গভীরতাও আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়– আজকের প্রজন্ম কি সত্যিই সেই উষ্ণ সম্পর্কের সমীকরণটা সময়টা হারিয়ে ফেলেছে? আজকের যুগে অভিভাবক হতে গেলে কি সংবেদনশীলতা আবশ্যক?






