“আমি শুভশ্রী-কোয়েল বা শ্রাবন্তী নই, যে নায়িকা বানাতে লোক বসে থাকবে!” “‘প্রজাপতি’ করার পর টেলিভিশন ছাড়তে বলেছিল…বাবা-মায়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে টেলিভিশনই আমার অগ্রাধিকার, আমি কোনদিনই ছাড়তে পারব না!”— অকপট শ্বেতা!

বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ শ্বেতা ভট্টাচার্য (Sweta Bhattacharya) দীর্ঘদিন ধরেই দর্শকের মন জয় করে আসছেন। অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠা আর চরিত্রে মিশে যাওয়ার দক্ষতার জোরে তিনি ছোটপর্দায় নিজের দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছেন। ‘জারোয়ার ঝুমকো’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘তুমি রবে নীরবে’— ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় বারবার প্রমাণ করেছে, অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কতটা পরিণত। বর্তমানে তিনি ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’ (Kon Gopone Mon Bheseche) ধারাবাহিকে শ্যামলী চরিত্রে অভিনয় করছেন, যা নিয়েও প্রশংসা পাচ্ছেন দর্শকের কাছ থেকে।

তবে শ্বেতার জীবনের শুরুটা কিন্তু অভিনয়ের মাধ্যমে হয়নি। খুব কম মানুষই জানেন, তাঁর প্রথম ভালোবাসা ছিল নাচ। ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ (Dance Bangla Dance) ছিল তাঁর প্রথম বড় মঞ্চ, যেখানে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পান তিনি। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন নৃত্যশিল্পী হওয়ার, অভিনয়ের জগৎ তখন ভাবনারও বাইরে ছিল। কিন্তু ভাগ্যে লেখা ছিল অভিনেত্রী হওয়া, প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন বড়পর্দায়। তবে পড়াশোনার চাপে সেটা নাকচ করেন। পরবর্তীতে ‘শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস’ এর ব্যানারে নির্মিত ধারাবাহিক দিয়েই অভিনয় জীবন শুরু।

ইতিমধ্যেই বড় পর্দায় দেবের বিপরীতে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি। যদিও অতীতে পার্শ্ব চরিত্রে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন, অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেন ধারাবাহিকেই আটকে আছেন তিনি? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন শ্বেতা। শ্বেতার কথায়, “প্রজাপতি ছবির জন্য অতনু রায় চৌধুরী যখন আমায় ফোন করলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে এটা সত্যিই হচ্ছে আমার সঙ্গে। আমি কোনদিনও কল্পনাও করতে পারিনি যে মিঠুন চক্রবর্তী এবং দেবের মতো অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করে একই স্ক্রীন শেয়ার করব।

তারপর যখন সামনে থেকে সবটা দেখলাম, বিশ্বাস হলো যে সত্যিই হচ্ছে। আমার কাছে এই ছবিটা একটা বিরাট বড় পাওনা ছিল। ছবিটা হয়ে যাওয়ার পর, আমায় অতনু দা বলেছিলেন যেন আমি সিরিয়াল করা বন্ধ করে দেই। আমাকে বলা হয়, একটু অপেক্ষা কর ভালো কিছু ছবির অফার আসবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল সংসারটা চালানোর জন্য, মা-বাবাকে ভালো রাখার জন্য আমি এই যে একটা ছবি করে অপেক্ষায় বসে থাকা যাবে না যে কবে আবার ভালো অফার পাবো। ছবিটা করলাম ভালো ফলাফল করল, তারপর?

সত্যি বলতে গেলে আমি শুভশ্রী গাঙ্গুলী নই, কোয়েল মল্লিক নই, বা শ্রাবন্তী চ্যাটার্জীও নই যে চাইলেই আমি কাজ পেয়ে যাব, অথবা আমাকে ছবির নায়িকা বানানোর জন্য প্রযোজকরা বসে আছে। এই কথা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই যে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমি নিজের জায়গা করতে পারিনি যেটা কিছুটা হলেও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে পেরেছি, এই ১৫ বছরের লিড রোল করে। এরপরেও ছবিতে ভালো চরিত্রের জন্য বসে থাকলে আমার হয়তো না হলেও আমার মা-বাবার কষ্ট হবে। ছোট থেকে আমার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন তারা।

আরও পড়ুনঃ ‘দেবদাস’-এর ছোট পারো’র চিরবিদায়, অমর চরিত্রের অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া!

এবার অন্তত তাদের কষ্ট দিতে চাই না। সেই জন্যেই টেলিভিশনকে আমি ছাড়তে পারবো না। আমায় পরিচিতি দিয়েছে, দু’বেলা অন্ন-সংস্থান দিয়েছে এই জায়গা।” সবশেষে শ্বেতা ভট্টাচার্যের কথায় স্পষ্ট, জনপ্রিয়তার ঝলকানি বা বড়পর্দার স্বপ্ন নয়, পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দই তাঁর কাছে আসল অগ্রাধিকার। শ্বেতা কাছে টেলিভিশন শুধু পেশা নয়, বরং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আর ভালোবাসার নিরাপদ আশ্রয়। তাই বড়পর্দার স্বপ্ন থাকলেও ছোটপর্দার মঞ্চই তাঁর কাছে সবচেয়ে আপন।