টিভির পর্দায় নিয়মিত মুখ, কিন্তু জানেন কি কোন নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েই অভিনয়জগতে এলেন অবন্তি দত্ত?

নিয়মিত টিভির পর্দায় যাঁরা চোখ রাখেন, ‘আলোছায়া’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ কিংবা ‘লালকুঠি’—এই সব ধারাবাহিকের এক চেনা মুখ অবন্তি দত্ত। সংলাপ বলার ভঙ্গিমা হোক বা আবেগ প্রকাশ, তার অভিনয় যেন আটপৌরে জীবনের প্রতিচ্ছবি। তবে এই পরিচিত মুখটির পথচলা শুরু হয়েছিল একেবারেই অন্যভাবে—মঞ্চ থেকে। গান, অভিনয় আর কবিতার গলিপথ ধরে ছুটে চলা অবন্তির জীবনের প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে নাটকীয় মোড়, যা তাঁর শিল্পীসত্তাকে করেছে পরিণত ও সংবেদনশীল।

ছোট থেকেই গানের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগ। তাঁর মা জয়ন্তী দত্ত ছিলেন নিজে একজন ভালো গায়িকা। বাবা-মা দুজনেই যুক্ত ছিলেন ‘গণনাট্য সংঘ’-এর সঙ্গে। সেই সূত্রেই অবন্তির গান শেখা আর নাটকের জগতে প্রবেশ। কখনও বাবা-মায়ের সঙ্গে নাটকে গান, কখনও পথনাটকে অভিনয়—সেখান থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। ১৯৮৯ সালে নাট্যব্যক্তিত্ব সাফদার হাসমির নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যখন দেশজুড়ে মিছিল, আন্দোলন—তখন অবন্তি দত্তও পথে নেমেছিলেন গান আর নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে। শিল্পের শক্তিকে হাতিয়ার করেই গড়ে উঠেছিল তাঁর সামাজিক চেতনা।

অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন অবন্তি। পরপর তিনবার চেষ্টা করার পর অবশেষে ব্যাংকের চাকরি পান তিনি। প্রায় ছয় বছর কাজও করেছেন। এই সময়েই বহুরূপী নাট্যদলে যোগ দেন। সেখানেই নাট্যব্যক্তিত্ব কুমার রায়, তারাপদ মুখার্জী, দেবেশ রায়চৌধুরীর সংস্পর্শে আসেন। এই সময়টাই ছিল তাঁর প্রকৃত নাট্যশিক্ষার সূচনা। প্রতিটি চরিত্রে অভিনয়ের রসদ খুঁজে পেতে শুরু করেন তখন থেকেই।

থিয়েটারে কাজ করতে করতেই রবিওঝার প্রোডাকশনের ‘মোহনা’ ধারাবাহিকে প্রথমবার ছোট পর্দায় অভিনয় করেন অবন্তি। তারপর থেকে টেলিভিশনের সঙ্গে এক অটুট বন্ধন গড়ে ওঠে। ‘তিতলি’, ‘রাধা’, ‘রাগে অনুরাগে’, ‘চির সখা’, ‘কাজল নদীর জলে’ সহ একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে। অভিনয়ের পাশাপাশি কবিতা পাঠেও সমান দক্ষ তিনি। তাঁর কবিতা পাঠের ভিডিও এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ওঠে।

২০০০ সালের ৭ আগস্ট মিউজিক কম্পোজার ময়ূখ ময়নাকের সঙ্গে বিয়ে হয় অবন্তির। ২০০২ সালে জন্ম হয় তাঁদের ছেলে আজান মহালানবিশের। ছেলেকে বড় করতে গিয়ে অভিনয়ে কিছুটা বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। তবে আজান বড় হতেই আবার নিজের পরিচিত কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন অবন্তি। বর্তমানে তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন আর আজান পড়াশোনা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে আজান যেমন ভালো গান করে, তেমনই গিটার বাজাতেও পারদর্শী।

আরও পড়ুনঃ সুকান্ত-সায়কের ‘বড়লোকিয়া গেম শো’-তে ফিরল ‘রোজগেরে গিন্নি’র আবেগ! হুবহু ‘রোজগেরে গিন্নি’র মতোই শেষ রাউন্ড! জিনিস অদল-বদলের খেলায়, পুরনো দিনের নস্টালজিয়ায় ভাসছে নেটিজেনরা!

বর্তমানে অবন্তি দত্ত অভিনয়ের পাশাপাশি কবিতা পাঠ ও গান নিয়েই সময় কাটান। থিয়েটার থেকে খানিকটা সরে এলেও ধারাবাহিকে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি। একদিকে শিল্পচর্চা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবন—সবটা সামলে চলা এই অভিনেত্রী প্রমাণ করেছেন, শিল্পীসত্তা শুধু মঞ্চ বা ক্যামেরায় আটকে থাকে না, তা জীবনের প্রতিটি পরতকেই ছুঁয়ে যায়।

You cannot copy content of this page