“খ্যাতি নয়, সফল চরিত্র নির্মাণেই আসল আনন্দ! অনেকেই খ্যাতির পেছনে ছুটছে, চরিত্রের সার্থকতা নিয়ে তারা সচেতন নয়।” “আমার পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয়ে যতটুকু জানি, সেটা ছাত্রাবস্থার মতোই সীমিত…এখনও ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রের মতো।”— নতুন প্রজন্ম নিয়ে অকপট চন্দন সেন!

বাংলা অভিনয় জগতের এক উজ্জ্বল নাম ‘চন্দন সেন’ (Chandan Sen)। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নাটক, সিনেমা এবং টেলিভিশনে একের পর এক শক্তিশালী চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন তিনি। রাজনীতি, ব্যক্তিগত সংগ্রাম, এমনকি ক্যা’ন্সারের মতো মা’রণ রো’গের সঙ্গে লড়াই করেও অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে রাখার জেদ তাঁর আলাদা পরিচয় তৈরি করেছে। শুধুই একজন দক্ষ শিল্পী নন, যেন জীবনযুদ্ধের প্রতীকও বটে। তাঁর অভিনয় দর্শকদের কাছে কেবল বিনোদন নয়, বরং শিল্পের গভীর এক অভিজ্ঞতা।

অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অঞ্জন দত্ত কিংবা প্রভাত রায়ের মতো বিভিন্ন ধারার পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিনয়ের বিস্তৃত ভুবনে কতটা দক্ষভাবে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিটি চরিত্রে নিজস্ব এক ধরনের প্রাণশক্তি যোগ করার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা করেছে সমসাময়িক অনেক অভিনেতার থেকে। নাট্যমঞ্চে তাঁর উপস্থিতি সব সময়ই বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করেছে দর্শকের কাছে। চরিত্রের আবেগ, যন্ত্রণা কিংবা জীবনবোধকে এমনভাবে মিশিয়ে দেন যে তা সরাসরি দর্শকের মনে গিয়ে পৌঁছয়।

এই দীর্ঘ যাত্রাপথে অভিনেতা সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে হতাশার কথাও প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, আজকের দিনে অনেক তরুণ অভিনেতাই খ্যাতি আর জনপ্রিয়তাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন, কিন্তু চরিত্রের সঠিক নির্মাণ ও অভিনয়ের মূলসত্তাকে উপলব্ধি করার অভিজ্ঞতা তাঁদের মধ্যে তেমনভাবে তৈরি হয়নি। তিনি মনে করেন, প্রকৃত শিল্পী সব ব্যর্থতাকে উপলব্ধি করেই উন্নতির রাস্তা খুঁজে নিতে পারে। তিনি বলেন, “আমি আমার পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয়ে ছাত্রাবস্থায় যতটুকু জানি ঠিক ততটাই জানি।

কিন্তু আমি অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ -এর মতো জানি না, সুতরাং উনি যখন অভিনেতা হিসেবে কোনও কথা বলবেন আমাকে ছাত্র হিসেবে হাঁটু গেড়েই সেটা শুনতে হবে। আমি মনে করি অভিনয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবে ক্লাস টুয়েলভ পাস করেছি। হয়তো সেই শিক্ষাটুকুর মধ্যে আমার কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে, কারণ একজন অভিনেতার সবকিছু পারফেক্ট হয় না কোনদিনও। অভিনেতা হতে গেলে তিনটে জিনিস প্রধান– শোনানোর ক্ষমতা, দেখানোর ক্ষমতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা।

এই তিনটে কখনওই একবিন্দুতে মেলে না, কিংবদন্তিদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম। যদি আমায় বলা হয় তাহলে বলবো, এত দিনের অভিনয় করেও হয়তো এক-দু’বার মেলাতে পেরেছি। নির্দেশক আমার কাছে কি চেয়েছিল আর আমি তাকে সেটা দিতে পেরেছি কিনা, সেই নিয়ে যদি আমার জ্ঞান না থাকে তাহলে আমি একজন প্রতারক ছাড়া আর কিছু নই।” তাঁর মতে, দক্ষ খেলোয়াড় যেমন জানে কোন জায়গায় ভুল হয়েছে, ঠিক তেমনি একজন সত্যিকারের অভিনেতাও নিজের সীমাবদ্ধতা চিনে নিতে সক্ষম।

আরও পড়ুনঃ মায়ের জেদে প্লুটোর জীবন শেষ, বিয়ে বাড়ির আনন্দ পরিণত হলো শোকে! বিয়ের আসরে অপেক্ষা করছে মৌ, অথচ প্রা’ণহীন প্লুটো পড়ে রইল ঘরে! প্লুটোর চিঠি হাতে ভেঙে পড়লেন বাবা! ‘চিরসখা’য় মিঠির জীবনে নতুন ঝড়!

চন্দন সেনের কথায়, “আজকালকার অভিনেতাদের কাছে খ্যাতিটাই বড়, সফল চরিত্র নির্মাণ করতে পেরে যে আনন্দটা পাওয়া যায়, আমি মনে করি না সেই সম্পর্কে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা আছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরা যায় মেসি একটা ফুটবল ম্যাচ খেলে গোল করতে পারল না, সে কিন্তু জানে তার ভুল কোথায় ছিল। তেমনি একজন দক্ষ অভিনেতা বা নিজেকে অভিনেতা বলে দাবি করলে সেও জানবে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে সে ব্যর্থ।” এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, তিনি অভিনয়কে কতটা গুরুত্ব দেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কী ধরনের মানসিকতা আশা করেন।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।