টলিউডের ঝলমলে দুনিয়ার আড়ালে যে একটা তীব্র অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতা লুকিয়ে আছে, তা হয়তো দর্শকের চোখে পড়ে না। পর্দায় যাঁদের আমরা প্রতিদিন দেখি, তাঁদের জীবনের বাস্তব চিত্রটা অনেক আলাদা। সম্প্রতি অভিনেতা সত্যম মজুমদারের (Satyam Majumder) ঘটনা সেই আড়ালটা খুলে দিয়েছে কিছুটা। দীর্ঘদিন অভিনয় জগতে নিজের জায়গা তৈরি করেও তিনি কাজের অভাবে সমাজ মাধ্যমে প্রকাশ্যে হাত পেতেছিলেন। তাঁর ভাষায়, অভিনয়ই তাঁর একমাত্র পরিচয়, আর সেই জায়গাটাই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল।
সত্যমের সেই পোস্টের পর কিছুটা বদল এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, অনেকদিন পর অবশেষে নতুন কাজের খবর পেয়েছেন— একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং একটি ছবির জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এতদিন পর নিজের প্রিয় কাজের সুযোগ পাওয়াটা তাঁর কাছে নতুন আশার আলো। কিন্তু সেই সঙ্গেই তিনি আবারও মুখ খুলেছেন ইন্ডাস্ট্রির অব্যবস্থাপনা নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, এই পেশায় চরিত্রাভিনেতারা সবসময়ই প্রান্তিক অবস্থানে থাকেন। না পাওয়া পারিশ্রমিক, না থাকা স্থায়িত্ব আর অল্প পরিসরে কাজের সুযোগ—সব মিলিয়ে তাঁদের জীবন অনিশ্চয়তায় ভরা।
অভিনেত্রী তুলিকা বসুর ঘটনাও এই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। খবর অনুযায়ী, শুধুমাত্র থিয়েটার করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তাঁকে চলতি ধারাবাহিক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই, যার মধ্যে ছিলেন সত্যম নিজেও। তাঁর মতে, অভিজ্ঞ অভিনেতাদের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়ে এখন অনেক প্রযোজনা কম বয়সী শিল্পীদের বেছে নিচ্ছে— কারণ তাঁদের পারিশ্রমিক কম। এতে করে প্রবীণ শিল্পীরা কাজ হারাচ্ছেন, অথচ তাঁদের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অমূল্য। তুলিকা বসুর মতো শিল্পীরা যে আক্ষেপ করে বলেন, “এখন আর মায়ের চরিত্রেও ডাক আসে না”,
সেটার পেছনে রয়েছে সেই নির্মম বাস্তবতাই। ইন্ডাস্ট্রির এই অদ্ভুত রাজনীতি আর অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন আরও অনেকে। একসময় ছোট পর্দা ছিল বহু প্রতিভাবান শিল্পীর আশ্রয়স্থল, কিন্তু এখন সেটাই অনিশ্চিত। ধারাবাহিকে নির্দিষ্ট মালিকানা বা পেনশনের সুবিধা নেই, ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই চরম আর্থিক সংকটে পড়ছেন। করোনার সময় থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাঁরা ছোট পর্দায় এসেছিলেন, তাঁরাই এখন কম পারিশ্রমিকে বেশি কাজ পেয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ ঘুরতে গিয়ে ভয়াবহ দু’র্যো’গের মুখে অভিনেত্রী রুকমা রায়! বেড়াতে গিয়ে বড় বিপ’দের মুখে অভিনেত্রী!
অথচ যাঁরা বছরের পর বছর এই মাধ্যমকে টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ আজ প্রশ্নের মুখে। এই পরিস্থিতিতে সত্যম মজুমদারের আবেদন খুবই স্পষ্ট—সরকার এবং প্রযোজনা সংস্থাগুলোর উচিত এই পেশায় ন্যায্য সম্মান ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। বিনোদন জগত শুধু আলো, ক্যামেরা আর গ্ল্যামার নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবিকা ও স্বপ্ন। তাই প্রতিটি শিল্পীর প্রতি ন্যায্য আচরণটাই এখন সবচেয়ে জরুরি। টলিউডের এই বাস্তব চিত্র আমাদের যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে মুখগুলো আমরা পর্দায় দেখি, তাঁদের হাসির পেছনে প্রায়ই লুকিয়ে থাকে এক গভীর সংগ্রামের গল্প।






