সন্তানের মৃ’ত্যুতেও শুটিং করেন বিশ্বনাথ! পেশার দায়ে থেমে থাকেনি শোক! জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়েও পেশাদার থাকেন অভিনেতা! জানেন কী ঘটে অভিনেতার সঙ্গে?

বাংলা বিনোদন জগতের এক চেনা মুখ, যাঁর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দর্শকদের মুহূর্তে মন ভালো করে দেয়—তিনি ‘বিশ্বনাথ বসু’ (Biswanath Basu)। যিনি পর্দায় হাস্যরসের জাদু ছড়ালেও, ব্যক্তিগত জীবনে বয়ে বেড়াচ্ছেন এক গভীর যন্ত্রণা। এক অভিশপ্ত অধ্যায়, যেটা হয়তো অনেকেই জানতেন না—প্রথম সন্তানের আকস্মিক মৃ’ত্যু! সেই ক্ষতের যন্ত্রণা তিনি এতদিন নিঃশব্দে বয়ে এনেছেন, কারও সঙ্গে ভাগও করেননি।

১৯৯০-এর দশকে থিয়েটারের মঞ্চ থেকে যে ছেলেটি অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার কাছে ক্যামেরার লাইটস-অ্যাকশন একদিকে, আর সংসারের কঠিন বাস্তবতা অন্যদিকে। অভিনয়ে কেরিয়ার গড়ার লড়াইয়ের পাশাপাশি জীবনের প্রতিটা বাঁকে ছিল দায়িত্বের চাপে মাথা নত করা। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে তাঁর জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময় এসেছিল ২০০৯ সালে, যখন তিনি মালয়েশিয়ায় এক টানা শুটিংয়ে ব্যস্ত।

পেশার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে করতে হঠাৎ ফোনে পেলেন মর্মান্তিক খবর, গর্ভেই অকালে চলে গেছে তাঁর প্রথম সন্তান! তখন দেশে স্ত্রীর খারাপ অবস্থা, আর বিদেশে ক্যামেরার সামনে দায়িত্ব পালন— দুটোর মাঝে দাঁড়িয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ। মন চাইছিল সব ফেলে দেশে ফিরে আসতে, কিন্তু ভিসা, প্রোডাকশন, ফ্লাইট—সব কিছু আটকে রাখছিল তাঁকে। চেয়েও ফিরে আসতে পারেন নি, একপ্রকার নিরুপায় হয়ে।

শেষ পর্যন্ত শুটিং চালিয়ে যাওয়াই ছিল একমাত্র উপায়। একের পর এক দৃশ্যে নিজের চরিত্রে ডুবে থেকেও, প্রতিটা শটের পর চোখের জল লুকিয়ে পড়ে থাকতেন অন্ধকার কোণে। শুটিং সেটে তখন পাশে ছিলেন অভিনেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত, যিনি নিঃশব্দে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। অন্যান্য কলাকুশলীরাও বুঝেছিলেন পরিস্থিতির গভীরতা। কিন্তু সেই সময়ের অসহায়তা, দুঃখ আর অপরাধবোধ আজও তাড়া করে ফেরে তাঁকে।

আরও পড়ুনঃ অবশেষে মোহনার মুখোশ খুলতে চলেছে! মোহনার কারসাজি সবার সামনে আনবে শুভ-আদৃত! মোহনার নোংরা খেলা কী শেষ হবে ?

স্ত্রীর বুকভাঙা কান্না ফিরেই সামলেছিলেন, কিন্তু বাবা হয়ে সন্তানের মুখ না দেখতে পাওয়ার যন্ত্রণা কোনও শব্দে প্রকাশযোগ্য নয়। আজ যখন বিশ্বনাথ পর্দায় মানুষকে হাসান, তখন হয়তো দর্শক টেরই পান না– এই মুখটার আড়ালে এক অপূর্ণ পিতৃত্বের চাপা কান্না আছে। জীবনের সেই এক অধ্যায় তাঁকে শিখিয়েছে, যে কীভাবে একসঙ্গে বয়ে বেড়াতে হয় দায়িত্ব আর শোক। আর তাতেই বিশ্বনাথ শুধু একজন দক্ষ অভিনেতা নন, হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয় মানুষ।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।