নিঃসন্দেহে জীবন যখন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করায়, তখনই বোঝা যায় কে কতটা মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। অভিনেত্রী ‘কন্যাকুমারী মুখার্জী’র (Kanyakumari Mukherjee) জীবন ঠিক এমন এক সময় পার করছে, যখন অভিনয়ের রঙিন পর্দা ছেড়ে বাস্তবের কঠিন রঙে রাঙা হচ্ছে তাঁর দিন-রাত। ‘মা’— যে শব্দটিতে লুকিয়ে থাকে আশ্রয়ের সমস্ত অর্থ, সেই মাকেই আজ তিনি দেখছেন বিছানায়, মৃত্যুর মুখোমুখি। ক্যা’ন্সারের মতো কঠিন রোগের সঙ্গে লড়ছেন মা, আর একমাত্র মেয়েটি হয়ে উঠেছেন তাঁর সৈনিক। ক্যামেরার ঝলকানির বাইরে, এই যুদ্ধে প্রতিদিন একা বুক চিতিয়ে দাঁড়াচ্ছেন অভিনেত্রী।
চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে এক আবেগঘন পোস্টে কন্যাকুমারী জানান, তাঁর মা দ্বিতীয় স্তরের ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত। যদিও চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন, নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা ও মানসিক শক্তি থাকলে এই যুদ্ধে জয় সম্ভব। তবে সেই লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় সহচর হয়ে উঠেছেন মেয়ে নিজেই। কারণ এ লড়াই কেবল ওষুধে জয় করা যায় না— লাগে সাহস, সহানুভূতি আর ভালোবাসা। যে মায়ের কোলে চেপে ছোটবেলা পেরিয়েছে, আজ তাঁর জন্যই কন্যাকুমারী শক্ত হয়ে উঠেছেন নিজের ভেতর থেকে।
তাঁর মুখে যতই হাসি থাকুক, ভেতরে যে প্রতিদিন ভাঙছেন একটু একটু করে, তা বোঝে কেবল তাঁর অন্তর। এদিন এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেন, এই কঠিন সময়ে তাঁর পাশে রয়েছে ছোট্ট মেয়ে ‘ভূমিসুতা’, যাকে তিনি বলেন ‘ভূমি’। কন্যাকুমারীর কথায়, “ভূমি আজ আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। মা যেমন একসময় আমায় আগলে রেখেছিলেন, এখন আমিও তেমন করেই মা আর মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শিখছি।” এই দুঃসময়ে মেয়ের নিঃশব্দ উপস্থিতিও যেন তাঁর কাছে এক মানসিক আশ্রয়।
অভিনয়ের জগৎ আপাতত থেমে গেলেও মাতৃত্ব আর কন্যাসন্তানকে আগলে রাখার মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন নতুন জীবনবোধ। এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল হঠাৎ করেই, যখন কন্যাকুমারীর মায়ের শরীর থেকে বের হয় প্রায় দু’কেজি ওজনের টিউমার। অপারেশনের আগেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কিন্তু কন্যাকুমারী তখনও ভাঙেননি। জানতেন, ভেঙে পড়লে চলবে না। এই লড়াই শুধুমাত্র একজন মায়ের জীবন বাঁচানোর নয়, বরং নিজের অস্তিত্বকে ধরে রাখারও। কন্যাকুমারীর কথায়, “আমি দেখেছি মা কীভাবে মানসিকভাবে শক্ত থেকে লড়ছেন।
আরও পড়ুনঃ সতীনের গল্পেই লেগে আছে লীনা গাঙ্গুলির মন! এক বাড়ি, দুই বউ, এক স্বামী— ‘চিরসখা’তে ঘুরে ফিরে সেই পুরনো ছকেই গল্প সাজালেন লেখিকা! ‘শ্রীময়ী’র সেই পুরনো কনসেপ্টেই বাজিমাত, নাকি পুরোপুরি ফেল?
তাঁর শরীর দুর্বল হলেও মন কখনও হার মানেনি। ওটাই আমাকে প্রতিদিন সাহস দেয়।” এই মুহূর্তে কন্যাকুমারীর জীবনে অভিনয়, কেরিয়ার বা জনপ্রিয়তা নয়, শুধুমাত্র মায়ের বেঁচে থাকা— এটাই একমাত্র লক্ষ্য। তিনি জানেন, এই পথ কঠিন। হয়তো দীর্ঘ। কিন্তু বিশ্বাস, ভরসা আর ভালোবাসা থাকলে মায়ের মুখে আবার হাসি ফিরবে। আর সেই দিনটির অপেক্ষাতেই নিঃশব্দে, নিঃশ্বাসে-নিঃশ্বাসে লড়ে চলেছেন কন্যাকুমারী। তাঁর এই যাত্রা শুধুই একজন অভিনেত্রীর নয়, একজন মেয়ে, একজন মায়ের এবং একজন যোদ্ধার নিঃশব্দ জীবনের গল্প।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।