বিচারাধীন ঘটনা নিয়ে ছবি নির্মাণ কতটা নৈতিক? বাস্তব ও রূপোলি পর্দার মধ্যে সীমারেখা কোথায়? আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে সিনেমা নির্মাণের নৈতিকতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন!

কলকাতা শহরকে কাঁপিয়ে দেওয়া ‘আরজি কর-কাণ্ডের’ (RG Kar Tilottama case) স্মৃতি এখনও টাটকা। শহরের বুক কাঁপানো এই ঘটনায় বহু মানুষ এখনও বিচারের অপেক্ষায়। আদালত রায় ঘোষণা করলেও তাতে সন্তুষ্ট নন অনেকে। কিন্তু এই ঘটনার চূড়ান্ত বিচার হওয়ার আগেই নির্মিত হয়েছে একটি সিনেমা, যা ঘটনার পুনর্নির্মাণের দাবি করছে। মিলন ভৌমিক পরিচালিত আসন্ন ছবি ‘প্রশ্ন’ (Prasna) ঠিক কতটা বাস্তবের কাছে যাবে? এবং তার নৈতিক অবস্থানই বা কোথায় দাঁড়িয়ে?

এই প্রেক্ষাপটে পরিচালক মিলন ভৌমিক বাস্তব ঘটনার অনুপ্রেরণায় তৈরি করেছেন নতুন ছবি ‘প্রশ্ন’, যা মুক্তি পেতে চলেছে ২৫ এপ্রিল। ছবিতে নির্যাতিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার (Payel Sarkar) , সঙ্গে রয়েছেন রাজেশ শর্মা, খরাজ মুখোপাধ্যায়সহ একঝাঁক তারকা। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এমন চরিত্রে অভিনয় করা সহজ ছিল না। বাস্তবের নির্মম সত্যি এক শিল্পীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।তবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে হলেও এখানে কল্পনার সংযোজন হয়েছে, যা ছবির সৃজনশীল দিক।

Bengali actress Payel Sarkar

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন ওঠে—বিচারাধীন একটি ঘটনা নিয়ে ছবি নির্মাণ কতটা নৈতিক? বাস্তব ও রূপোলি পর্দার মধ্যে সীমারেখা কোথায়?পরিচালকের মতে, সমাজের অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের দায়িত্ব। তাই তিনি এই বিষয় বেছে নিয়েছেন। তবে ছবির নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বারবার বলেছেন, বাস্তব ঘটনার সঙ্গে এর সাদৃশ্য থাকলেও কোথাও শালীনতা লঙ্ঘন করা হয়নি, সরাসরি ধর্ষণ বা হত্যার দৃশ্য দেখানো হয়নি। সেন্সর বোর্ড থেকেও ইউ+এ১৬ শংসাপত্র মিলেছে।

আরও পড়ুনঃ অনির্বাণের কাছে শারীরিক নি’র্যা’তনের শিকার নীলু? রাইয়ের সামনে কঠিন পরীক্ষা! একদিকে বোন, অন্যদিকে স্বামী— কার পাশে দাঁড়াবে সে?

যা থেকে নিশ্চিত যে ছবিটি একটি প্রতীকী উপস্থাপনা মাত্র, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—যে ঘটনা এখনও আদালতে চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষায়, সেটি নিয়ে বানানো সিনেমা কি প্রভাবিত করবে ন্যায়বিচারের গতিপ্রকৃতি? অপরাধী বা ভুক্তভোগী—দুই পক্ষের প্রতিই কি এটি ন্যায়বিচার করছে?
একজন সাধারণ দর্শকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এটি কি সত্যিকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ, নাকি কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক কৌশল?

এই ধরনের ছবি সমাজকে সচেতন করতে পারে, কিন্তু যদি তা বিচারাধীন ঘটনাকে একপাক্ষিকভাবে উপস্থাপন করে, তবে তা শুধু জনমত গঠনে প্রভাব ফেলবে না, প্রকৃত বিচারের পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে আসতেই কিছু দর্শকরা মনে করছে এই ছবি রাজনৈতিক মতাদর্শকে আরও বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার ফলে বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ‘প্রশ্ন’ কি শুধুই একটি সিনেমা, নাকি এটি আরও গভীর কোনো বার্তা বহন করছে? সেই সিদ্ধান্ত দর্শকের উপরই রইল।