অভিনয় জগতে তাঁর ৩৭ বছরের দীর্ঘ পথচলা, ছোটপর্দা থেকে থিয়েটার, এমনকি বড়পর্দায়ও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন অভিনেত্রী ‘ঋতা দত্ত চক্রবর্তী’ (Rita Dutta Chakraborty)। কখনও তিনি আদর্শ মা, কখনও কুটিল শাশুড়ি, আবার কখনও সহানুভূতিশীল জায়ের চরিত্রে তিনি বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছেন বারবার। তাঁর অভিনয়ের পরিধি শুধু টেলিভিশনেই সীমাবদ্ধ নয়, নাট্যজগতে তাঁর অবদান বহুদিনের। জন্ম থেকে অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা বরাবরই প্রবল!
আর সেই ভালোবাসার টানেই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে কলকাতায় আসা। প্রসঙ্গত, টেলিভিশনের পর্দায় ‘কুসুম দোলা’, ‘মা’, ‘অন্দরমহল’, ‘গাছ কৌটা’, ‘দেশের মাটি’, ‘ধুলোকণা’—এমন বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করেছেন ঋতা। ‘কার কাছে কই মনের কথা’ ধারাবাহিকে শিমুলের শাশুড়ি ‘মধুবালা’র চরিত্রে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকের মননে আছে। শক্তিশালী সংলাপ এবং গভীর অভিব্যক্তির মাধ্যমে তিনি পর্দার প্রতিটি দৃশ্যে আলাদা ছাপ রেখে যান।
সর্বশেষ ‘পুবের ময়না’ ধারাবাহিকে ঋতার অভিনয় যথারীতি প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শক মহলে। উল্লেখ্য, টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে পথচলা শুরু বেশ কম বয়সে, তবে এই পথটা একেবারেই সহজ ছিল না। যৌথ আর বিশেষ করে বনেদি পরিবারে মেয়েরা থিয়েটার করবে, অভিনয়ে লাইনে নামবে! —এমনটা ভাবাই তখনকার দিনে স্বাভাবিক ছিল। সম্প্রতি এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে ঋতা জানান, অভিনয় করার জন্য একবার বাবার মার খেতেও হয়েছিল তাঁকে। সেই স্মৃতি আজও তাঁর মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে।
তিনি বলেন, বাড়িতে অনেক সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে বড় হয়েছেন তিনি। বাড়ির সর্বোচ্চ অভিভাবক ছিলেন অভিনেত্রীর বাবা। সব বাচ্চাদের তিনি একভাবেই শাসন করতেন। সন্ধ্যে হলেই খেলাধুলা ছেড়ে বাচ্চাদের হ্যারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতে হতো। একদিন এমনই সন্ধ্যেবেলায় পড়াশোনার সময় হঠাৎ ঋতার বাবা এসে আঙুলে সজোরে আঘাত করেন হাতে থাকা টর্চ দিয়ে! বাবার মুখের উপর সেদিন কথা বলতে পারিনি অভিনেত্রী। কারণটাও জানা হয়নি, বাবাই শেষে কাঁপা কন্ঠে কটাক্ষ করেছিলেন!
তিনি বলেছিলেন— “সন্মান বিসর্জন দিয়ে রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করা হচ্ছে!” ছোটবেলায় বাবার সেই আচরণের কারণ বুঝতে না পারলেও পরে বুঝেছিলেন। তিনি মঞ্চে অভিনয় করছেন জেনেই বাবা রেগে গিয়েছিলেন— সমাজের চোখে সেটাই ছিল তখন বড় অপরাধ। তবে সেই সামাজিক চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করেই অভিনেত্রী নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হিসেবে। অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও সমান মনোযোগ দিয়েছেন তিনি। সংস্কৃতে এম.এ পাশ করে, বি.এড ডিগ্রিও অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুনঃ মধুমিতা-রণিতা এবার একসঙ্গে ছোট পর্দায়! স্টার জলসায় ফিরছে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প! লীনা গাঙ্গুলির নতুন প্রজেক্টে থাকছেন টেলিপাড়ার দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী! নতুন ধারাবাহিক ঘিরে চর্চা তুঙ্গে, নায়ক কে হচ্ছেন?
শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী, এবং প্রতিভাবান এই অভিনেত্রী কখনও পড়াশোনার খাতিরে অভিনয়কে বা অভিনয়ের খাতিরে পড়াশোনাকে অবহেলা করেননি। এই দৃষ্টান্ত আজকের প্রজন্মের অনেককেই অনুপ্রাণিত করতে পারে। অভিনয় শুধু তাঁর পেশা নয়, এটি তাঁর প্রাণ, তাঁর অস্তিত্ব। আর সেই ভালোবাসা আর সংগ্রামের ফসলই আজকের ঋতা দত্ত চক্রবর্তী, যিনি নিজের লড়াই দিয়ে প্রমাণ করেছেন—স্বপ্ন যদি প্রবল হয়, তবে কোনও সামাজিক বিধিনিষেধ বা পারিবারিক বাধাও তাকে থামাতে পারে না।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।






“তোর বু’কগুলো আমায় খুলে দে না, লাগিয়ে নিই!”— মীরের অপমানজনক মন্তব্যে সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্বরলিপি চট্টোপাধ্যায়! নিজের আত্মসম্মান রক্ষায় মুখ খুললেও জুটেছিল বিদ্রুপ! এতদিন বাদে সবটা খোলসা করলেন তিনি!