“হীরক রাজার দেশে রানীর হুকুম আমি মানি না!” “আপনার মেয়ে হলে, তখনও মুখ বুজে থাকতেন! শিরদাঁড়া কোথায়?” পথে নেমে কসবাকাণ্ডে প্রশ্ন শ্রীলেখা মিত্রর!

আরজি কর কাণ্ডের (R. G. Kar Rape Case) এক বছর হওয়ার আগেই ফের শহর জুড়ে ছড়াল নারকীয় স্মৃতি। ফের একবার কলেজ চত্বরেই এক ছাত্রীর উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ। ঠিক যেমন এক বছর আগে চিকিৎসাকর্মীর হাল শহরবাসীকে নাড়া দিয়েছিল, এবারও তেমনই তীব্র প্রতিবাদের ঢেউ বইছে শহরের বুকে। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে ঘটে যাওয়া কাণ্ডে (Law College Gang Rape) মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র—এক প্রাক্তন তৃণমূল ছাত্রনেতা এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী। অভিযোগ, এক ছাত্রীর উপর সংগঠিত গণধর্ষণে তাঁর নামই সামনে এসেছে।

ঠিক সেই ঘটনার প্রতিবাদেই পথে নামলেন সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক সমাজ, এবং বিনোদন দুনিয়ার পরিচিত মুখেরা। রবিবার গড়িয়াহাট থেকে হাজরা পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল অভয়া মঞ্চের প্রতিবাদ মিছিল। শুরুটা শান্তিপূর্ণ হলেও, লেক মলের সামনে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে প্রতিবাদীরা। পুলিশের তরফে জানানো হয়, এই মিছিলে তাঁদের অনুমতি নেই, ফলে মিছিল আরও এগোতে দেওয়া হবে না। সেখানেই শুরু হয় চাপা উত্তেজনা। উপস্থিত চিকিৎসকরা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছতে পারেননি।

পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। মিছিলে এদিন উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, বাদশা মৈত্র, চন্দন সেন সহ বিনোদন দুনিয়ার বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ। শ্রীলেখা নিজে ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। পুলিশ ব্যারিকেড টপকে এগোনোর চেষ্টা করলে তাঁকে বারংবার নিরস্ত করেন পুলিশের একটি অংশ। তবু শ্রীলেখা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এই পুলিশি বাধা মানতে নারাজ। একসময় তাঁকে ব্যারিকেডে ওঠার চেষ্টাও করতে দেখা যায়। পুলিশের সঙ্গে তাঁর সরাসরি কথোপকথনও চলে।

শ্রীলেখা সাফ প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের আটকানো হচ্ছে কেন? আমরা তো বোমা নিয়ে বেরোইনি কাজ করছি না। আমাদের এত ভয় কেন?” তিনি আরও বলেন, “যদি আপনাদের বাড়ির মেয়ের সঙ্গে এমনটা ঘটত, তখন কি আপনারাও মুখ বুজে থাকতেন?” তাঁর গলায় ছিল ক্ষোভ, যন্ত্রণার পাশাপাশি গভীর উদ্বেগও। তিনি প্রশ্ন তোলেন পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতিত্ব নিয়েও। তিনি বলেন, “আমরা বিচার চাইছি বলে আমাদের প্রিজন ভ্যানে তোলা হবে, অথচ যারা ধর্ষক, খুনি, তাদের বাঁচানো হবে?”

আরও পড়ুনঃ ধর্মের কল বাতাসে নড়ে! চাঁদুর জারিজুড়ি শেষ, মুখার্জি বাড়িতে হাজির দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-মেয়ে! এবার, কি চাঁদুর সত্যিটা সকলের সামনে আনতে পারবে কমলিনী?

প্রতিবাদের ভাষায় শ্রীলেখার সংযোজন ছিল কসবার ধর্ষণকাণ্ডের পাশাপাশি কালীগঞ্জের ভোট-হিংসায় প্রাণ হারানো শিশুকন্যা তামান্নার প্রসঙ্গও। তিনি বারবার আঙুল তুলেছেন সমাজ ও প্রশাসনের নীরবতার দিকে। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তিনি বলেন, “শিরদাঁড়া কোথায়? চাকরির ভয়ে সবাই চুপ। আমরা কি শুধু দেখেই যাব?” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য—এই রাজ্যে এখন জরুরি অবস্থার চেহারা নিয়েছে সব কিছু। ন্যায়ের পক্ষে রাস্তায় নামলেই বাধা, প্রতিবাদ করলেই হুমকি। সেই বাধার মুখেই দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—”হীরক রাজার দেশে রানীর হুকুম আমি মানি না!”

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।