“আমরা শৈশবে কোনও পুরুষ দ্বারা নি’র্যাত’নের অভিজ্ঞতা ছিল না, আজ সমাজের মাথাদের মনই কলুষিত!” “উচ্চস্তরের মানুষরা কথার মূল্য দিতে জানে না, নিম্নস্তর এখনও জানে!” — বর্তমান সমাজের উচ্চস্তরে দুর্নী’তি ও স্বা’র্থপরতা নিয়ে তোপ দাগলেন অলকানন্দা রায়!

বাংলা অভিনয় জগতে এক দীর্ঘ পথচলার সাক্ষী অভিনেত্রী ‘অলকানন্দা রায়’ (Alokananda Roy)। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সর্বত্রই নিজের প্রতিভা ও অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে ছোটপর্দার দর্শক তাঁকে কখনও দিদিমা, কখনও ঠাকুমা, আবার কখনও পিসিমার চরিত্রে পেয়েছেন। শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজ ও সময়ের পরিবর্তিত ছবির প্রতিও তাঁর দৃষ্টি সবসময়ই ছিল সতর্ক ও গভীর। সম্প্রতি এক খোলামেলা আলোচনায় সেই অভিজ্ঞতা আর মতামতই তুলে ধরলেন তিনি।

অভিনেত্রীর স্মৃতিচারণে উঠে আসে তাঁর শৈশবের পরিবেশ। তিনি জানান, তাঁদের বাড়িতে কোনও দিনই মহিলা গৃহপরিচারিকা রাখা হতো না। বাবার স্পষ্ট অমত ছিল, পরিবারের ভেতরে বাইরের মহিলাদের অবাধ বিচরণ তিনি পছন্দ করতেন না। তাই তাঁদের ছোটবেলায় বাড়ির কাজ করতেন মূলত পুরুষ গৃহপরিচারকেরা। অলকানন্দা ও তাঁর দুই বোন একসঙ্গে বড় হলেও, সেই সময় তাঁদের জীবনে নির্যা’তন বা শো’ষণের অভিজ্ঞতা কখনও আসেনি। আজকের সময়ের সঙ্গে সেই দিনগুলোর তুলনা করতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তখনকার মানুষের মানসিকতা ছিল অনেকটা স্বচ্ছ ও সরল।

সমাজের পরিবর্তিত মানসিকতা নিয়ে তিনি গভীর হতাশার কথাও বলেন। তাঁর মতে, আজকাল মানুষের মনে নীতি-নৈতিকতা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষার মানসিকতা নেই বললেই চলে। তিনি খোলাখুলি স্বীকার করেন, দুর্নী’তি, প্রতারণা কিংবা ভ’ণ্ডামি আজকের সমাজকে গ্রাস করেছে। অথচ অতীতে মানুষ ছিল কথার প্রতি অনুগত, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ছিল এক বড় গুণ। সময় বদলেছে, আর সেই বদলের সঙ্গেই যেন হারিয়ে গেছে মানুষের স্বচ্ছ মানসিকতা। তবে সব কিছু যে নেতিবাচক তা নয়, ব্যতিক্রমের দিকও তিনি তুলে ধরেন।

অলকানন্দা জানান, তাঁর বাড়িতে কাজ করা এক গৃহকর্মী একবার মাসিক বেতন পাওয়ার পর নিজেই বাড়তি পাওয়া পাঁচশো টাকা ফেরত দিয়েছিল। এই ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। অভিনেত্রীর কথায়, ” হ্যাঁ, তবে ব্যতিক্রম কিন্তু আছে! আমার বাড়িতে যে মেয়েটি রান্না করে, মাস মাইনে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে সে আমায় পাঁচশো টাকার একটা নোট হাতে ধরিয়ে জানিয়েছিল, তাকে প্রাপ্য অনুযায়ী বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপর বলতেই পারি যে সমাজের মাথারা আজ বিকৃত হয়ে গেছে, কিন্তু নিম্ন স্তরের মানুষরা হয়নি।”

আরও পড়ুনঃ “বড় মন চাই না, খুব ছোট মানসিকতার বর চাই!” “অপরিষ্কার হলেও সমস্যা নেই, আমিও স্নান করি না!”— কেমন জীবনসঙ্গী চাই? প্রশ্ন করতেই অকপট উত্তর অভিনেত্রী অন্বেষা হাজরার

তাঁর বক্তব্য, সমাজের উচ্চস্তরে যেখানে দুর্নী’তি ও স্বা’র্থপরতা রাজত্ব করছে, সেখানে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষই অনেক সময় সত্য ও সততার পাঠ শেখায়। অভিনেত্রীর এই খোলামেলা মতামত নিঃসন্দেহে আজকের সমাজের জন্য এক বড় শিক্ষা। এটিই প্রমাণ যে, অভিনয়ের বাইরেও তিনি সমাজ পর্যবেক্ষক হিসেবে কতটা সংবেদনশীল। তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি শুধু শিল্পের নয়, জীবনের বাস্তব পাঠেও ভরপুর। আজকের দিনে যখন চারিদিকে অবিশ্বাস ও অন্যায়ের অভিযোগ বাড়ছে, তখন তাঁর বক্তব্য মনে করিয়ে দেয়— সততা এখনও বেঁচে আছে, হয়তো অন্য কোথাও, অন্য স্তরে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ভেতরে।