বছরের শেষদিকে এলেই বাংলা ছবির বক্স অফিস যেন আলাদা উত্তাপে পৌঁছে যায়। বড়দিন মানেই বড় ছবি, আর তার সঙ্গেই শুরু হয় কার ছবি কত আয় করল তা নিয়ে টানাপড়েন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ও দেব (Dev) অভিনীত ‘প্রজাপতি ২’-এর (Prajapati 2) মুক্তিকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা, পাল্টা দাবি আর অভিযোগ। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপস্থিতিতে অনেকটাই এগিয়ে ‘প্রজাপতি ২!’ শহর থেকে মফস্বল, একের পর এক শো হাউসফুল হচ্ছে, নতুন বছরের শুরুতেও ছবির আয় ভাল থাকবে বলেই আশা করছেন অনেকে।
এই আবহেই ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’র প্রযোজক রানা সরকারের মন্তব্য নতুন করে উত্তাপ বাড়িয়েছে। এই বিতর্কের মাঝেই দেব নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সম্প্রতি। ইম্পা বৈঠকে তাঁকে নিয়ে যে খবরের শিরোনাম হয়েছে, তা নিয়ে তিনি খুব একটা বিচলিত নন। দেবের কথায়, তাঁর কোনও বাড়তি দাবি নেই, না তিনি কারও ছবি সরিয়ে শো চাইছেন। তিনি শুধু চান তাঁর বানানো ছবি দর্শকের কাছে পৌঁছাক। মুক্তির আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘প্রজাপতি ২’ প্রথম দিন থেকেই ব্যবসা দেবে আর বাস্তবে সেটাই হচ্ছে।
সোমবার থেকে ছবির শো সংখ্যা বাড়ছে, এমনকি এসভিএফও সমাজ মাধ্যমে ধন্যবাদ জানিয়েছে। নিয়মিত ব্যবসা দেওয়া ছবি হলে শো বাড়ানো কি অন্যায়, এই প্রশ্নই তুলছেন দেব! বক্স অফিস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দেওয়ার অভিযোগের জবাবে দেব সরাসরি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। গত এক বছরে তিনি যে ছবিগুলিতে বিনিয়োগ করেছেন, তার হিসাবও নিজেই জানালেন। ‘খাদান’-এর বাজেট ছিল ৮ কোটি টাকা, ‘ধূমকেতু’ বানাতে লেগেছে ৬ কোটি, ‘রঘু ডাকাত’-এ খরচ ৮ কোটি এবং ‘প্রজাপতি ২’-এর বাজেট ৭ কোটি।
মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ২৯ কোটি টাকা! তার বিপরীতে ব্যবসার অঙ্কও উল্লেখ করেন তিনি। ‘খাদান’ করেছে ২৫ কোটি, ‘ধূমকেতু’ ২২ কোটি, ‘রঘু ডাকাত’ ১৩ কোটি। আর সম্প্রতি ‘প্রজাপতি ২’ ১০ কোটির বেশি আয় করবে বলেই তাঁর দাবি! সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা এসেছে দেবের ছবিগুলি থেকে, যেখানে লাভের অঙ্ক প্রায় ৩০ কোটি! এই তথ্য তিনি নিজে বানাননি বলেই জানালেন যে প্রযোজকরাই নাকি প্রকাশ্যে এই হিসাব দিয়েছেন! এত কিছুর পরেও কেন তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, সেটাই দেবের প্রশ্ন।
নিজের ২০ বছরের অভিনয়জীবন উপলক্ষে হওয়া অনুষ্ঠানে সাড়ে চার লক্ষ টাকা উঠেছিল, সেই অর্থও তিনি নিজের কাছে না রেখে টেকনিশিয়ানদের জন্য ফেডারেশনের হাতে তুলে দিয়েছেন। ছবির প্রচারের জন্য তিনি গ্রামে ঘুরেছেন, যাতে সেখানকার দর্শকরাও হলে এসে ছবি দেখেন। তাঁর যুক্তি, আগে যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরাই দেব থাকার কারণেই বেশি শো চেয়েছেন। আজ তিনি নিজের ছবির জন্য একই কথা বলছেন বলেই কি এত আপত্তি? রেটিং কারচুপি বা প্রযুক্তির সাহায্যে অন্যের ছবি নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়েও দেব মুখ খুলেছেন।
আরও পড়ুনঃ ‘আমি ক্ষুদিরাম চাকী, আমি ঝু’লি না, ঝো’লাই!’ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে অপমা’নজনক সংলাপে তোলপাড় টলিউড, মুক্তির আগেই বিতর্কে রাজ চক্রবর্তীর ‘হোক কলরব’
গত ২৬ ডিসেম্বর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর। দেবের দাবি, সৃজিত স্পষ্ট করেছেন যে ওই মন্তব্য দেবকে লক্ষ্য করে লেখা হয়নি এবং পরে সমাজ মাধ্যমে লিখেও দিয়েছেন যে দেব এই বিষয়ে যুক্ত নন। সেই স্ক্রিনশটও দেবের কাছে এসেছে। রানা সরকার ও শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। তাঁর একটাই আক্ষেপ, এত ছোট ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যখন ভবিষ্যতেও একসঙ্গেই কাজ করতে হবে!






