“যেদিন মুসলমান ছেলেটি গণপি’টুনিতে মা’রা গেল, সেই কাহিনীরই অংশ ছিল এই গান…আমরা এই গানটা সবার জন্য বানাইনি!” “এখন আমি গণশত্রু!” মুর্শিদাবাদ, আরজিকর কান্ডে কোথায় ছিল আপনার গান? অনির্বাণকে ধুয়ে দিল নেটপাড়া

সম্প্রতি বাঙালির চিরচেনা সাংস্কৃতিক পরিসরে ঝড় তুলেছে ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্য’ (Anirban Bhattacharya) এবং তাঁর ব্যান্ড ‘হুলিগানিজম’-এর (Hooliganism) একটি পলিটিকাল প্যারোডি (Political Parody)। এই গান ঘিরে তৈরি হয়েছে বেশ আলোড়ন। রাজনৈতিক ব্যঙ্গ এবং তীব্র সামাজিক মন্তব্যে ভরা এই গান একদিকে যেমন নির্দিষ্ট শ্রোতাকে ভাবিয়ে তুলেছে, তেমনই অন্যদিকে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে নানা মহলে। এই প্রেক্ষাপটে অনির্বাণ ভট্টাচার্য এদিন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিলেন। যেখানে তিনি তুলে ধরেন প্রতিক্রিয়া, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক প্রতিসরণগুলোর জটিল যোগসূত্র।

অনেকেই জানতে ইচ্ছে করছিল, এই বিতর্ক নিয়ে অনির্বাণ, দেবরাজ সহ ব্যান্ডের বাকিদের কি মতামত? এদিন অনির্বাণ বলেন, “ইনিশিয়ালি জিনিসটা যেটা হয়, সেটা হচ্ছে আমরা সেদিন মঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে যেটা করলাম। আর লাইভ পারফর্ম্যান্স জিনিসটার একটা আলাদা অ্যাড্রিনালিন থাকে তো, একটা মব তার একটা স্নায়ু কাজ করে। সেখান থেকে আলাদা করা ইন্ডিভিজুয়াল ইন্টালেক্টগুলো তখন আর বিচার্য থাকে না। তখন একটা ভিড়, ভিড়ের মতোই রিঅ্যাক্ট করে। তারপর যখন সেটা ডিজিটাল মাধ্যমে আসে, পারফর্ম্যান্স তো অনির্দেশ্য।

তখনই শুরু হল, এক ঘন্টা পরে শেষ হয়ে গেল। তারপর জিনিসটা ডক্যুমেন্টেড হয়। তারপর সেটা সমাজ মাধ্যমে স্থান পায়। বলা যেতে পারে যে মডার্ন হিউম্যান ল্যাবে আসে। যেখানে লোকে সেটাকে নিয়ে তাদের যা যা কার্যক্রম সেটা শুরু করে। প্রথমে যেটা হয় লোকজনে সেটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে থাকে। মজা করতে থাকে। আনন্দ করতে থাকে। খ্যা খ্যা করতে থাকে, হ্যা হ্যা করতে থাকে। তারপর আজকের রাজনৈতিক সমাজে বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের বিভিন্ন রাজনৈতিক দায়িত্ব আছে। যেমন আমি বলবো যে একটা গ্রুপ আছে।

তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শুরুতেই ওটাকে বুঝে নেওয়া যে কোথাও আমাদের ইকোসিস্টেমটাকে এটা ডিস্টার্ব করছে কি না সেটা একটু ভেবে নেওয়া। তারপর এমন দায়িত্ব আসে, যারা আদতেই এই ইকোসিস্টেমের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তারা সবই জানে। তাদেরও আবার বিভিন্ন গ্রুপ আছে। যার মধ্যে একটা হচ্ছে, যারা খুব খিস্তাখিস্তি করে। তারপরে একটা ক্রিমি লেয়ার আছে, যারা নানান রকম সাহিত্য থেকে এঙ্গেলসের কোট থেকে মার্কসের কোট থেকে, আধুনিক মনষ্কতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের ভিতর যা ঘটে যায় একটা পপ কালচারের থেকে।

যেটা অপরাধ প্রবণতা জন্ম নেয়, সেগুলো নিয়ে কথা বলে। আর যে গ্রুপটা আছে, তারাও কোনও না কোনওভাবে ওই ইকোসিস্টেমের মধ্যে আছে। কেন্দ্রে তারা সেটাকে ভীষণ ভাবে চালায়। বাংলায় তারা বিরোধী দল বলে পরিচিত। তারা প্রচুর পাওয়ারের হ্যালোজেন জ্বালিয়ে খোঁজে যে, আমাদের যেটা অ্যাজেন্ডা সেটার কী আছে ওখানে। যেমন আমাদের গানে ‘সনাতন’ শব্দটা ওনারা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা আবার ফেসবুকে বেশি কিছু লিখতে যায় না, স্ট্রেট চলে যায় জেল, হাজত, কোর্ট। মানে, ‘পচিয়ে মারবো জেলে’, এই জায়গায় চলে যায়। গত কিছুদিন যাবত আমরা এই তিনটি রাজনৈতিক লেয়ারের মধ্যে দিয়েই গেছি।

কোনও সন্দেহ নেই যে সমাজ মাধ্যমে যেহেতু এটা বেশি হয়, সেই কারণে দ্বিতীয় রাজনৈতিক স্রোতটা অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। এখন জিনিসটার একটা অ্যাকাডেমিক বিশ্লেষণ চলছে। এই জিনিসটা কেন ফালতু বা বাজে আর আমি কেন গণশত্রু এবং অপরাধী শ্রেণীর মধ্যে পড়ি সেটা নিয়েও সামাজিক বিশ্লেষণ সোশাল সায়েন্সের জায়গা থেকে এখন এই স্টেজটা চলছে। মুল কথা, আমরা এই গানটা সবার জন্য বানাইনি। লাইক শুধু ছড়াটা শুনেই সমালোচনা করছে, পুরো গানটাও শোনেনি তারা। এই গান আজ থেকে ১০ বছর আগে, ১০১৫ সালে প্রথম ছোট্ট পরিসরে গেয়েছিলাম আমরা।

নাটকের অংশ হিসেবে ব্যবহার করি আমরা এটা। নাটকের গল্প অনুযায়ী, একটি মুসলমান ছেলে গণপিটুনিতে মারা যায়। তার দোষ ছিল একটি হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা। তারপর একটি ব্যান্ড এসে স্টেজে গান ধরে যে, ‘তুমি মস্তি করবে জানি, সারাদিন কত হয়রানি। কত ঘেমো চৌমাথা পেরিয়ে তোমায় বাঁচতে হবে। কিন্তু যে বাঁচলো না তার পানি, তার ফেলে যাওয়া জমিখানি, তার সবটুকু জুড়ে খ্যামটা তোমায় নাচতে হবে। সুতরাং মরুক মরুক মরুক, যত শুকনো পাতা ঝরুক, মরে যাক।’ এই চারটে লাইন পছন্দ হয়েছে দর্শকের, কিন্তু সেদিন আমরা অনুষ্ঠানে সাতটা গান গেয়েছি মোট। আমাদের কোনটা নিয়ে দর্শক সেলিব্রেট করবে না থুতু দেবেন, সেটা তাদের চয়েস। সমস্যাটা শুরু যে, বংশানুক্রমিকভাবে বাঙালিকে বোঝানো হয়েছে– কোনটা শিল্প আর কোনটা গান। এটাকে ‘পিঙ্ক ফ্যাসিজম’ বা গোলাপি ফ্যাসিবাদ বলে।”

আরও পড়ুনঃ কমলিনীর আলমারি থেকে উধাও লক্ষাধিক টাকা, গয়না বিক্রির টাকা দেখাতে অস্বীকার করে আরও ফেঁসে গেল বর্ষা! মিঠি- কুর্চির জেরায় বিপাকে বুবলাই, সত্যি ফাঁসের ভয়ে বর্ষা চুপ করিয়ে দিল স্বামীকে!

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।

You cannot copy content of this page