বহু সিনেমায় বিনা পরিশ্রমিকে কাজ করেছেন, কিন্তু পাননি নিজের যথাযোগ্য মর্যাদা! তাই মৃ’তদেহ স্টুডিওতে নিয়ে যেতে বারণ করেছিলেন

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যাঁরা নিজেদের অমর স্থান তৈরি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন অনুপ কুমার (Anup Kumar)। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে রাখার মতো চরিত্র উপহার দিয়ে গেছেন তিনি। দক্ষ অভিনয়, চিরসবুজ চার্ম, আর সহজ-সরল কিন্তু গভীর চরিত্রায়ণের জন্য আজও অনুপ কুমার বাঙালির মনে আলাদা জায়গা ধরে রেখেছেন।

১৯৩০ সালের ১৭ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা অনুপ কুমার (আসল নাম শশী গোস্বামী) ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি গভীর টান অনুভব করতেন। ১৯৫৩ সালে ‘ফটিকচাঁদ’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। তবে তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা চরিত্র আসে সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবি ‘অপরাজিত’-এ। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।

অনুপ কুমারের অভিনয়ের বৈচিত্র্য তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। কখনও হাস্যরসাত্মক চরিত্র, কখনও নাটকীয় আবেগপূর্ণ অভিনয়—সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন পারদর্শী। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘গল্প হলেও সত্যি’—প্রত্যেকটি ছবিতে তাঁর চরিত্র আজও দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে। অনুপ কুমার শুধু একজন অভিনেতা নন, একজন মহান ব্যক্তিত্বও ছিলেন। টলিউডে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা অতুলনীয়। বাংলা সিনেমাকে তিনি যেমন বিশ্ব দরবারে নতুন ভাবে পরিচিত করেছিলেন, তেমনি নবীন অভিনেতাদের জন্য হয়ে উঠেছিলেন অনুপ্রেরণা।

সম্প্রতি একটি ইউটিউব চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন অনুপ কুমারের বোন অসীমা সিনহা ও ভাই অরবিন্দ দাস। মেজো দাদা হিসেবে তিনি কেমন জানতে চাওয়া হলে তাঁর বোন অসীমা সিনহা জানান শক্ত হাতে তাঁদের মানুষ করেছেন অনুপ কুমার। এমনকি বহু ছবিতে অভিনয় করে তিনি টাকা পাননি এবং চানওনি। অসীমা সিনহা বলেন “মৃনাল সেন মৃনাল সেন হতেন না যদি অনুপ কুমার না থাকত”। অনুপ কুমারের জীবন ছিল বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল। তবে এত সুন্দর একজন অভিনেতা হওয়ার পরেও যে প্রাপ্য সম্মান তার পাওয়ার কথা ছিল সেটা তিনি পাননি, তাই মনে ক্ষেদও ছিল অনেক। আর সেই কারণেই তার মৃত্যুর পর যেন তাঁর দেহ স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া না হয় সে কথাও তিনি বলে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ মেয়েই নিতকনে! তার হাত ধরেই সমস্ত কষ্ট পেরিয়ে নতুন জীবন মল্লিকা! বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে কেন কাঁদলেন অভিনেত্রী?

১৯৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর তাঁর প্রয়াণ হলেও, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে অনুপ কুমারের অবদান আজও অম্লান। তাঁর অভিনীত প্রতিটি ছবি আজও বাংলার সংস্কৃতির অমূল্য ধন। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এক অনুপ্রেরণা এবং চিরকালীন কিংবদন্তি। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অনুপ কুমার এক চিরস্মরণীয় নাম। তাঁর অভিনীত চরিত্র এবং সরল জীবনধারা আগামী দিনেও তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী করে রাখবে।