আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রযুক্তির উন্নতি যেমন চমকে দেওয়ার মতো, তেমনই তা তৈরি করছে এক গভীর উদ্বেগের জায়গাও। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে কারও কণ্ঠস্বর থেকে মুখ, শরীর বা এমনকি আচরণও অবলীলায় নকল করা সম্ভব। সেই ক্ষমতাকে ভালো কাজে না লাগিয়ে, অনেকেই ব্যবহার করছেন অন্যের পরিচয়, সম্মান বা পরিচিতি নিয়ে ছেলেখেলা করার জন্য। সম্প্রতি কিংবদন্তি গায়িকা ‘আশা ভোঁসলে’ও (Asha Bhosle) এই ধরণের কাজের শিকার হয়েছেন!
ঠিক কী হয়েছে তাঁর সঙ্গে? সম্প্রতি, তাঁর কণ্ঠস্বর এবং ছবি বিনা অনুমতিতে এআইয়ের সাহায্যে তৈরি করে বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ঘটনা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং একটি বড় সামাজিক সংকেতও বটে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর কণ্ঠস্বর বিকৃত করে তা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী বা বিনোদনমূলক প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু মার্কিন এআই প্ল্যাটফর্ম ও ই-কমার্স সাইটের বিরুদ্ধে। শুধু কণ্ঠ নয়, তাঁর নামও ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
এই ধরনের ব্যবহার শুধুই অশা’লীন নয়, তা আইনের চোখেও অপরাধ। এই প্রেক্ষিতে বম্বে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন তিনি, এবং আদালত তাঁর সুরক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু নির্দেশও জারি করেছে ইতিমধ্যেই। উল্লেখ্য, এই ঘটনা নিছক একজন শিল্পীর সমস্যা নয়। এর আগে অরিজিৎ সিংয়ের ক্ষেত্রেও একই রকম অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে তাঁর গায়কী আর কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে গান তৈরি করা হয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে শুধু শিল্পীর সম্মান লঙ্ঘিত হয় না, সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
কোনটা আসল আর কোনটা কৃত্রিম, তা বোঝা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে একজন শিল্পীর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার শ্রোতাও। এখানে প্রশ্ন শুধু আইনগত নয়, নৈতিকতাও জড়িয়ে আছে। কারও স্বতন্ত্রতা, স্বত্ব, বা পরিচয়কে প্রযুক্তির নামে হরণ করা কখনওই ন্যায্য হতে পারে না। এআই যতই উন্নত হোক, সেটাকে ব্যবহারের দায়িত্ব কিন্তু মানুষের। সেই ব্যবহারে যদি সততা না থাকে, তাহলে প্রযুক্তি হয়ে ওঠে অপরাধের হাতিয়ার।
আরও পড়ুনঃ “সিঁদুর আমার কাছে সম্মানের, বাঙালি মেয়েদের অনন্য করে তোলে!”— অতীতের হিন্দুধর্ম নিয়ে বিতর্ক ভুলে, বাঙালিয়ানার মুখ সাজলেন সায়নী ঘোষ!” “শিবকে ক’ন্ডোম পরিয়ে, নেত্রী এবার সিঁদুরের মাহাত্ম্য বোঝাচ্ছেন!”— ক’টাক্ষবিদ্ধ অভিনেত্রী!
আশা ভোঁসলে আর অরিজিৎ সিংয়ের মতো পরিচিত মুখেরা এই বিষয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করায় বিষয়টা আলোচনায় এসেছে, কিন্তু কত অজানা মানুষ প্রতিদিন এর শিকার হচ্ছেন, তার হিসেবই বা কে রাখছে? অনেকেই দাবি করছেন– এই মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে একটা স্পষ্ট নিয়ম-কানুন, আইনি কাঠামো প্রয়োজন। শিল্পীদের বা সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, মুখাবয়ব, বা নাম কোনওভাবেই যেন অন্য কেউ নিজের মতো ব্যবহার করতে না পারে। আশা ভোঁসলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।